ঈদের রাজনীতি
৬ অক্টোবর ২০১৪
সোমবার গণভবনে সর্বসাধারণের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ শুভেচ্ছা বিনিময়ের পর সেখানে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘বিএনপি নেত্রীর মানসিক অবস্থা ঠিক নেই, তাঁকে আগে মন ঠিক করতে হবে৷ যখন সংলাপের জন্য ডেকেছি, তখন আসেননি৷ এখন সংলাপের কথা বলছেন৷ আগে মন ঠিক করুন, তারপর বলুন কী করতে চান৷''
আন্দোলনের জন্য বিএনপির হুমকির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘সরকার যে কোনো ‘চ্যালেঞ্জ' নিতে জানে৷ আন্দোলনের নামে সহিংসতা সরকার কঠোর হাতেই দমন করবে৷''
তিনি বলেন, ‘‘দেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখন অনেক ভালো৷ দেশবাসী ভালোভাবে ঈদ উদযাপন করছে৷ যাঁরা বাড়িতে যেতে চেয়েছেন, তাঁরা নির্বিঘ্নে বাড়ি পৌঁছেছেন৷ সব জায়গায় সবাই নিরাপদে ঈদ আনন্দ উপভোগ করছে৷''
এদিকে বিএনপির চেয়ারপর্সন বেগম খালেদা জিয়া সর্বসাধারণের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে৷ সেখানে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘দেশকে এবং নিজেকে বাঁচাতে হবে৷ এই অত্যাচারীদের থেকে দেশকে বাঁচানোই এখন কর্তব্য৷ সবাই ঐক্যবদ্ধ হলে আমরা বিজয়ী হব৷ দেশের মানুষের বিজয় হবে৷ দেশে সুদিন আসবে৷''
খালেদা বলেন, ‘‘গুম-খুন থেকে মানুষ বাঁচতে চায়৷ ব়্যাব-পুলিশের অত্যাচার এখনো বন্ধ হয়নি৷ ব়্যাব-পুলিশ যদি টাকার বিনিময়ে খুন করে, আসামি ছেড়ে দেয় তাহলে দেশের কী হবে? মানুষ কোথায় যাবে?''
আওয়ামী লীগের প্রতি ইঙ্গিত করে বিএনপির চেয়ারপার্সন বলেন, ‘‘দেশকে ধ্বংস করার জন্য কি এরা বসেছে? এদের হাতে তো দেশ নিরাপদ নয়৷''
সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে খালেদা বলেন, ‘‘সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশেবাসীকে বাঁচাই৷ আমরা ঐক্যবদ্ধ হই৷ এদের দিয়ে দেশ চলতে পারে না৷ চলবে না৷ এরা লুটেরা, খুনি, অত্যাচারী৷ এদের থেকে ভালো কিছু আশা করা যায় না৷''
আন্দোলন প্রসঙ্গে বিএনপি চেয়ারপার্সন বলেন, ‘‘দিন, ক্ষণ দিয়ে আন্দোলন হয় না৷ আমরা আন্দোলেনের মধ্য আছি৷ সময়মতো ডাক দেবো৷''
অন্যদিকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত এইচ এম এরশাদ রংপুরে ঈদের নামাজ আদায়ের পর বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘‘তারা আন্দোলনের হুমকি দিয়ে ফায়দা লুটতে পারবে না৷ মানুষ জানে তারা কোনো ইস্যুতেই আন্দোলন করতে পারেনি৷ শক্তি না থাকলে কি আন্দোলন করা যায়? বিএনপির সেই শক্তি আজ নেই৷ তাই তারা শুধু মানুষকে ভয়-ভীতি দেখানো জন্য আন্দোলনের হুমকি দেয়৷''
এরশাদ বলেন, ‘‘বিএনপি এখন আর বৃহত্ দল নয়৷ তাই সরকারের সঙ্গে সংলাপ না হলে বিএনপি কিছুই করতে পারবে না৷''
এর প্রতিক্রিয়ায় সুশাসনের জন্য নাগরিক বা সুজন-এর সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা এক দুর্ভাগা জাতি, তাই ঈদ, মানে খুশির দিনেও কোনো খুশির খবর পাই না৷ যাঁরা দেশ চালান, নেতৃত্ব দেন, তাঁরা দেশের মানুষকে একটি দিনের জন্যও রাজনৈতিক বৈরিতার বাইরে রাখতে পারেন না৷''
তিনি বলেন, ‘‘শেখ হাসিনা আর খালেদা জিয়া এখন আর রাজনৈতিক প্রকিপক্ষ নন, তাঁরা ব্যক্তিগত শত্রুতে পরিণত হয়েছেন৷ ফলে তাঁরা উত্সব আনন্দেও কাউকে ঘায়েল করতে ছাড়েন না৷''
ড. মজুমদারের মতে, ‘‘এটা জাতির জন্য এক চরম হতাশা এবং বেদনার দিক৷ জাতি এই বৈরী রাজনীতির শিকার হয়ে দিন দিন আরো খারাপের দিকে যাচ্ছে৷''
তিনি বলেন, ‘‘সুশাসনের অভাব, গণতন্ত্রহীনতা এবং ন্যায়বিচারের অনুপস্থিতির কারণেই রাজনৈতিক বৈরীতা এবং সংঘাত বাড়ছে৷ এ থেকে জাতি কবে মুক্তি পাবে কেউ জানে না৷ তবে যেদিন মুক্তি পাবে সেদিনই আসবে প্রকৃত ঈদ৷''
ওদিকে এরশাদের বক্তব্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘রাজনীতি যখন থাকে না তখন অপরাজনীতি, অরাজনীতি মাথাচাড়া দেয়৷ এরশাদের আস্ফালন তারই প্রমাণ৷''