1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

উচ্ছ্বল শহরে নিরুত্তাপ এক নির্বাচন

আসমা মিতা
২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭

২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৭৷ উচ্ছ্বল এক শহরে নিরুত্তাপ নির্বাচন দেখার অভিজ্ঞতা হলো৷ বলছি ইউরোপের কেন্দ্র জার্মানি ও তার রাজধানী বার্লিনের কথা৷ জার্মানি আর বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি যে দুই মেরুর স্বচক্ষে দেখে তার প্রমাণ মিললো৷

https://p.dw.com/p/2kdhe
Interview Bundestagswahl 2017
ছবি: DW/A. Islam

সে কারণেই জার্মানির জাতীয় নির্বাচন নয়, বরঞ্চ ভোটের দিনের পরিবেশ নিয়ে দু'কথা লেখার লোভ সামলাতে পারলাম না৷

বাংলাদেশের মূল ধারার গণমাধ্যমে নির্বাচন কমিশন বিটে কাজ করার সুবাদে গত প্রায় দশ বছর ধরে দেশের জাতীয়, স্থানীয়, অর্থাৎ সিটি কর্পোরেশন, উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদসহ সব ধরনের নির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহ, সরাসরি সম্প্রচার, সংবাদ পরিবেশনাসহ সব ধরনের অভিজ্ঞতাই হয়েছে৷ কিন্তু দশ বছর পর দেখা মিললো ব্যতিক্রমী এক নির্বাচন দেখার৷ সুযোগ হলো ডয়চে ভেলের কল্যাণে৷

শুরুতেই বাংলাদেশের নির্বাচনের কথা বলছিলাম, কারণ তাহলে জার্মানি কোন কোন জায়গায় তাদের চেয়ে আলাদা সেটা পরিষ্কার হবে৷ নির্বাচনের আগে, অর্থাৎ তফসিল ঘোষণার আগে থেকেই বাংলাদেশে ব্যানার, পোস্টারে আভাস পাওয়া যায় যে সেই এলাকায় এবার ভোটের প্রার্থীহচ্ছেন কে৷ এর মাধ্যমেই ভোটারদের জানান দেয়া হয় যে তিনি আসছেন মাঠে৷ দলীয় নির্বাচন হলে অনেকক্ষেত্রে আবার এ সব প্রচারের মাধ্যমে প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারে দলের কাছেও নিজের আগ্রহ তুলে ধরা যায়৷ এ সব প্রচারে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যদিও লেখা হয় ‘প্রচারে এলাকাবাসী'৷ যাই হোক জার্মানির মিউনিখ শহরে যেয়ে ভোটের মাত্র এক সপ্তাহ আগেও প্রার্থীদের পোস্টার খুঁজতে রীতিমতো হন্যে হয়ে ঘুরতে হয়েছে আমাকে৷ তফসিল ঘোষণা তো বহু আগের কথা৷

কীভাবে সংসদে পৌঁছায় একটি দল?

এরপর প্রচার শুরু হলো তো বাংলাদেশে সেই নির্বাচনি এলাকায় উৎসব শুরু হলো৷ প্রচারের কৌশলে ইদানীং আবার নানা ভিন্নতাও দেখা যাচ্ছে৷ সব শেষ ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে তো প্রার্থীর পক্ষে তারকাদেরও মাঠে নামতে দেখা গেছে৷ জার্মানির বড় শহরগুলোতে মিটিং বা শোভা হলেও অলিতে গলিতে ভোটের কোনো চিত্র চোখে পড়েনি৷ বড় জোর একটা পোস্টার৷ তবে একদিন নজরে পড়েছিল এক প্রার্থীর কর্মীরা ট্রাম স্টপে লিফলেট বিলি করছিলেন আর সাথে সবার হাতে একটি করে আপেল দিয়ে দিচ্ছিলেন৷ ভোটারদের সেই প্রার্থীকে ভোট দিতে আহ্বান নয় বরং বলছিলেন, ‘২৪ তারিখে ভোট কেন্দ্রে আসবেন৷'

<iframe src="https://www.facebook.com/plugins/video.php?href=https%3A%2F%2Fwww.facebook.com%2Fdwbengali%2Fvideos%2F10154866468380978%2F&show_text=0&width=560" width="560" height="315" style="border:none;overflow:hidden" scrolling="no" frameborder="0" allowTransparency="true" allowFullScreen="true"></iframe>

এই আহ্বানে সাড়া দেয়া অবশ্য সব ভোটারের পক্ষে সম্ভব হয় না এখানে৷ রবিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন হলেও যাঁদের সেদিন ছুটি থাকে না, তাঁদের বেশিরভাগই আগেই পোস্টাল ব্যালটে ভোট দিয়ে ফেলেন৷ এমনকি ভোটের দিনও অনেকে ভোটকেন্দ্রে না যেয়ে একইভাবে ভোট দিয়ে ফেলেন৷

ভোটের দিনের সকালেই খাই প্রথম ধাক্কা৷ এইদিন বার্লিন শহরে ছিল ম্যারাথন প্রতিযোগিতা৷ এই উপলক্ষ্যে প্রায় ৪৫ হাজার মানুষ এসেছে এই শহরে৷ হোটেল থেকে নীচে নামতেই দেখি বিশাল আয়োজন চারপাশে৷ বেশিরভাগ রাস্তাই ফিতা দিয়ে আটকে রাখা৷ উৎসাহ আর উদ্দীপনার সাথে দর্শক ভিড় করেছে সড়কের পাশে৷ বিশাল সাউন্ড সিস্টেমে গানও বাজছে৷ ভাবলাম, বেশ৷ ভোট কেন্দ্রেও তাহলে বেশ সাজগোজ থাকবে নিশ্চয়৷

আমার আশায় গুঁড়ে বালি৷ ভোট কেন্দ্রের সামনে যেয়ে ১০ থেকে ১৫ মিনিট লাগল আমার এটা বুঝতে যে এটি আসলে ভোটকেন্দ্র৷ কেন্দ্রের বাইরে টেবিল, চেয়ার পেতে প্রার্থীর পক্ষে কেউ ভোটারদের কাছে যাচ্ছেন না৷ ভোট কক্ষের নম্বর বলে দেবার ছলে বলছেন না, ‘ভাই অমুককে ভোটটা দিয়েন'৷ একজন দু'জন করে ভোটাররা এখানে নিজেদের মতো আসছেন৷ সব মিলিয়ে মাত্র দু'মিনিটের খরচায় ভোট দিয়ে চলে যাচ্ছেন৷ ফলে কেন্দ্রের বাইরে দীর্ঘ লাইনের কোনো সুযোগই তৈরি হয় না এখানে৷ বলে রাখা ভালো, এত কম সময় হলেও ভোট কিন্তু ব্যালটেই হয় এখানে৷

সকাল সকাল মনে হচ্ছিল ভোটার বোধহয় একেবারেই আসবেন না৷ কিন্তু না, ভোটার একজন দু'জন করে ঠিকই আসছিলেন৷ সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত টেম্পলহফের একটি কেন্দ্রে দেখলাম অন্তত ৫০ জন ভোটার ভোট দিলেন৷ ভেতরে তিনটি বুথে ভোট নেয়া হচ্ছিল৷ অর্থাৎ প্রতি বুথে ঘণ্টায় ১৬ জনের বেশি ভোটার ভোট দিয়েছেন৷

এই ভোটারদের মধ্যে ইয়েলিজ নামের ২১ বছরের এক তরুণীর সাথে কথা হলো৷ মেকআপের স্পেশাল ইফেক্ট নিয়ে পড়াশুনা করছেন তিনি৷ বললেন, ডানপন্থিদের কোনোভাবেই শক্তিশালী দেখতে চান না তিনি৷ এমনকি সংসদের সংখ্যা বাড়া ঠেকাতেই ভোট দিলেন তিনি৷

লিওনার্দো ও জুলিয়া নামের এক দম্পতি জানালেন যে, জার্মানির উজ্জ্বল ভবিষ্যত দেখতে চান তাঁরা৷ তাই ভোট দেয়াকে দায়িত্ব মনে করেন৷

তবে ‘জার্মানিতে পরিবর্তন আসবে' এই আশাতে ভোট দেয়ার কথা জানান এক ভোটার৷ বলে রাখা দরকার, এবারের নির্বাচনে ডানপন্থি একটি দলের নির্বাচনি স্লোগানই ছিল, ‘জার্মানির পরিবর্তন'৷

৯১ বছর বয়সি এফার সাথে কথা হলো৷ কথায় কথায় তিনি বললেন, ‘‘দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ দেখেছি৷ কাজেই যুদ্ধ যে কতটা ভয়াবহ হতে পারে৷ আমি তা জানি৷ আর চাই না৷ কট্টর ডানপন্থিরা সেদিকে এগোতে পারে৷ তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে৷ সেকারণেই ভোট দিতে এলাম৷''

আসমা মিতা
ডয়চে ভেলের হয়ে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত জার্মান ভোটারদের প্রশ্ন করছেন আসমা মিতাছবি: DW/A. Islam

যাই হোক, এখানে ভোট কেন্দ্রের বাইরে চৌহদ্দি তো দূরের কথা কোনো সীমানাতেই একজন পুলিশেরও দেখা মিললো না৷ ‘সেনাবাহিনী চাওয়ার দাবি নিয়ে রাজনীতি' তো বহু দূরের কথা৷ শহরের ভেতরে ভোটকে ঘিরে কোনো সাজ সাজ রব নেই৷ বরং ম্যারাথনের জন্য মূল সব সড়কের দু'পাশ ব্যারিকেড দিয়ে দর্শকদের জন্য আলাদা করা হয়৷ তবে হ্যাঁ, গণমাধ্যমের প্রস্তুতির কোনো ঘাটতি দেখা যায়নি৷ ভোটের আগের দিনই দেখেছি ম্যার্কেলের দলসিডিইউ-এর পার্টি অফিসের সামনে সরাসরি সম্প্রচারের জন্য অন্তত ২৫টি ওবি ভ্যান রাখা৷ ব্রান্ডেনবুর্গ তোরণ, সংসদ ভবনসহ শহরের গুরুত্বপূর্ণ সব খানেই টেলিভিশন ক্যামেরা আর সংবাদকর্মীদের আনাগোনা৷

তবে সন্ধ্যা ৬টায় ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার দুই মিনিটের মধ্যেই ‘এক্সিট পুল' বা জরিপ সংস্থাগুলো ভোটের প্রাথমিক ফলাফল জানিয়ে দেয়, যা পরে নির্বাচন কমিশনের আনুষ্ঠানিক ফলাফলের সাথে খুব একটা হেরফের হয় না৷ তাই এই ঘোষণাতেই সবাই বুঝে যায় কী ঘটেছে৷ সেই ফলাফল দেখার এক ঘণ্টার মধ্যেই দেখলাম, খোলা আকাশের নীচ থেকে প্রায় সব গণমাধ্যম তাঁবু গুটিয়ে নিচ্ছে৷ সবাই তখন বসে যান স্টুডিওতে কোয়ালিশন নিয়ে আলাপচারিতায়৷ অন্যদিকে, শহর তৈরি হতে থাকে পরের দিনের কর্মযঞ্জের জন্য প্রস্তুত হতে৷ কোথাও কোনো শোরগোল নেই, আনন্দ মিছিল নেই, এমনকি ক্ষোভও প্রকাশ করছে না কেউ ‘কেন কম ভোট পেলেন' এই ভেবে৷ ভোটে কারচুপির অভিযোগের তো প্রশ্নেই আসে না৷ সবার অপেক্ষা তখন কাদের নিয়ে ম্যার্কেল কোয়ালিশন করেন, সেটা দেখার৷

ভোটের দিনের এমনই এক ভিন্ন অভিজ্ঞতা নিয়ে রাতে আমি ফিরলাম হোটেলে৷

 

লেখাটি কেমন লাগলো? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য