1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

চ্যালেঞ্জ অর্থনীতির ভিত মজবুত করা

১৭ মার্চ ২০১৮

স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে ওঠার যোগ্যতা অর্জনের স্বীকৃতিপত্র পেয়েছে বাংলাদেশ৷ অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাংলাদেশের সামনে এখনও বহুমুখী চ্যালেঞ্জ৷ এই মুহূর্তে আমাদের প্রধান কাজ অর্থনীতির ভিতকে শক্তিশালী করা৷

https://p.dw.com/p/2uWIp
ছবি: DW/Nurunnahar Sattar

এই স্বীকৃতিপত্র পাওয়ার মাধ্যমে জাতিসংঘের বিবেচনায় উন্নয়নশীল দেশের পথে বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হলো৷ জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের (ইকোসক) উন্নয়ন নীতিবিষয়ক কমিটি (সিডিপি) শুক্রবার বাংলাদেশের এ যোগ্যতা নিশ্চিত করেছে৷ 

জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণ বিষয়ে এক ঘোষণায় বাংলাদেশের এ যোগ্যতা অর্জনের তথ্য দেয়া হয়েছে৷ সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৪ সালে উন্নয়নশীল দেশ হবে বাংলাদেশ৷ 

তবে নতুন এই অর্জন বাংলাদেশের জন্য অনেক চ্যালেঞ্জ বয়ে আনবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা৷ কেননা স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাণিজ্য ও বৈদেশিক ঋণে যেসব বাড়তি সুযোগ রয়েছে, সেগুলোর সবকিছু থাকবে না৷ অর্থনীতিবিদরা বলছেন, যথাযথ পরিকল্পনা প্রণয়ন ও তার বাস্তবায়ন হলে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে মানুষের জীবনমানের ক্রমাগত উন্নতি করা সম্ভব৷ 

বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন জানান, ২০২১ সালে দ্বিতীয় পর্যালোচনা করবে সিডিপি৷ ২০২৪ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ এ উত্তরণকে অনুমোদন দেবে৷ বাংলাদেশের অগ্রগতি এখন যেভাবে আছে, তার কোনো বড় ধরনের ব্যত্যয় না ঘটলে ২০২৪ সালে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে পৌঁছাবে৷ 

‘তিনটি সূচকেই যোগ্যতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ, যা এর আগে অন্য কোনো দেশের ক্ষেত্রে ঘটেনি’

উন্নয়নশীল দেশ হলে বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ কি হবে, জানতে চাইলে জাহিদ হোসেন বলেন, ‘‘উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি একটা মর্যাদার বিষয়৷ বাংলাদেশকে সবাই তখন আলাদাভাবে বিচার করবে৷ এর আগে বহু দেশ স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশের যোগ্য বলে স্বীকৃতি পেয়েছে৷ কিন্তু মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ ও অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা- এ তিনটি সূচকেই যোগ্যতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ, যা এর আগে অন্য কোনো দেশের ক্ষেত্রে ঘটেনি৷ তবে উন্নয়নশীল দেশ হলে বাংলাদেশ এলডিসি হিসেবে বাণিজ্যে যে অগ্রাধিকার পায় তার সবটুকু পাবে না৷ আবার বৈদেশিক অনুদান, কম সুদের ঋণও কমে আসবে৷’’

তিনি বলেন, ‘‘এলডিসি হিসেবে বাংলাদেশ আঞ্চলিক বা দ্বিপাকি চুক্তির অধীনে বিভিন্ন দেশে জিএসপি বা শুল্কমুক্ত পণ্য রপ্তানি সুবিধা পায়৷ এর সঙ্গে বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার (ডাব্লিউটিও) আওতায় নেওয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে অনেক দেশ আমাদের শুল্কমুক্ত সুবিধা দিয়েছে৷ আবার এলডিসি হিসেবে ওষুধ রফতানির ক্ষেত্রে মেধাস্বত্ব সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক বিধিবিধান থেকে আমাদের অব্যাহতি রয়েছে৷ উন্নয়ন সহযোগীরা বাংলাদেশকে কম সুদে ও সহজ শর্তে ঋণ দিয়ে থাকে৷ এলডিসি না থাকলে তখন সুবিধাগুলো পাওয়া যাবে কি সেটা একটা প্রশ্ন৷ যেমন- ইউরোপীয় ইউনিয়ন এখন যে জিএসপি দেয়, তা ২০২৭ সাল পর্যন্ত থাকবে৷ এরপর জিএসপি প্লাস পাওয়ার কথা রয়েছে৷’’ 

ড. জাহিদ হোসেন জানান, বাংলাদেশ ২০১৫ সালের জুলাই মাসে নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়৷ মাথাপিছু আয়ের বিবেচনায় এ শ্রেণিকরণ করে বিশ্বব্যাংক৷ জাতিসংঘ তার সদস্য দেশগুলোকে স্বল্পোন্নত (এলডিসি), উন্নয়নশীল এবং উন্নত- এ তিন শ্রেণিতে বিভক্ত করে৷ বাংলাদেশ ১৯৭৫ সাল থেকে এলডিসি পর্যায়ে রয়েছে৷ 

‘যেসব ইনস্টিটিউশন এখনো দুর্বল, সেগুলোকে আরো উন্নত করতে হবে’

জাতিসংঘের উন্নয়ন নীতি কমিটি (সিডিপি) গত ১২ থেকে ১৬ মার্চ এলডিসি দেশগুলোর ওপর ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনা বৈঠকে বসে৷ মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ এবং অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা- এ তিনটি সূচকের দু’টিতে উত্তীর্ণ হলে কোনো দেশ এলডিসি থেকে উত্তরণের যোগ্য বলে বিবেচিত হয়৷ তবে শুধু মাথাপিছু আয়ের ভিত্তিতেও কোনো দেশ যোগ্য হতে পারে৷ সে ক্ষেত্রে মাথাপিছু আয়ের যে মানদণ্ড রয়েছে ওই দেশের মাথাপিছু আয় তার দ্বিগুণ হতে হবে৷

২০১৮ সালের পর্যালোচনায় এলডিসি থেকে উত্তরণের যোগ্যতা হিসেবে মাথাপিছু আয়ের মানদণ্ড হতে হয় ১২৩০ মার্কিন ডলার৷ বিশ্বব্যাংক প্রণীত অ্যাটলাস পদ্ধতির হিসাবে গত তিন বছরের গড় মাথাপিছু আয় ওই পরিমাণ হতে হবে৷ ওই পদ্ধতিতে গত তিন বছরে বাংলাদেশের গড় মাথাপিছু আয় দাঁড়িয়েছে ১২৭৪ মার্কিন ডলার৷ বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে মাথাপিছু আয় আরও বেশি, তাদের হিসাবে গত অর্থবছরে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ১৬০৫ ডলার৷

পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘‘উত্তরণের সব পর্যায়েই কিছু চ্যালেঞ্জ থাকে৷ এগুলো মোকাবেলার প্রস্তুতি নিতে হবে৷ এলডিসি থেকে উত্তরণ ঘটার তিন বছর পর থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নে বর্তমান জিএসপি সুবিধা থাকবে না৷ উন্নয়নশীল দেশগুলো ইইউতে জিএসপি প্লাস সুবিধা পায়৷ বাংলাদেশকে তার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে৷ এলডিসি না থাকলে বাংলাদেশ অন্যান্য দেশেও অনেক ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে না৷ এজন্য বিমসটেক, বিবিআইএনের মতো আঞ্চলিক উদ্যোগের সুবিধা কীভাবে কার্যকরভাবে নেওয়া যায় তার প্রস্তুতি থাকতে হবে৷ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, প্রতিযোগিতা সমতা আরও বাড়াতে হবে৷ কেননা শুল্কমুক্ত সুবিধা না থাকলে প্রতিযোগিতা বেড়ে যাবে৷ পাশাপাশি আমাদের যেসব ইনস্টিটিউশন এখনো দুর্বল, সেগুলোকে আরো উন্নত করতে হবে৷ সেটা অর্থনৈতিক ইনস্টিটিউশনই হোক আর রাজনৈতিক ইনস্টিটিউশনই হোক৷’’

বাংলাদেশ ২০২৪ সালে এলডিসি থেকে বেরিয়ে গেলে ২০২৭ সাল পর্যন্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের ‘এভরিথিং বাট আর্মস’ উদ্যোগের আওতায় পণ্য রফতানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে৷ বাংলাদেশ মানবাধিকার ও শ্রম অধিকার, পরিবেশ ও সুশাসন বিষয়ে ইইউর নিয়ম-কানুনের শর্ত পূরণ করলে জিএসপি প্লাস নামে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য সুবিধা পাবে বলে জানান ড. আহসান এইচ মনসুর৷

আপনার মতামত লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে৷ 

ডয়চে ভেলের ঢাকা প্রতিনিধি সমীর কুমার দে৷
সমীর কুমার দে ডয়চে ভেলের ঢাকা প্রতিনিধি৷