এক নজরে নির্বাচন
১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৩প্রতিদ্বন্দ্বীর পক্ষে নির্বাচনি লড়াইটি সহজ কাজ নয়৷ আসলে তিনিই হলেন সঠিক সময়ে সঠিক মানুষ৷ অর্থনীতিতে বিশেষজ্ঞ স্টাইনব্রুক জার্মানির কোষাগারের অবস্থাটা ভালোভাবে জানেন৷ গত সরকারের আমলে আঙ্গেলা ম্যার্কেলের বৃহৎ কোয়ালিশনে অর্থমন্ত্রী ছিলেন তিনি৷ এবার তিনি নিজের বসকেই পরাজিত করতে চান৷ তাঁর তেজোদীপ্ত কণ্ঠেও শোনা যায় সেকথা: ‘‘আমি সারা জার্মানির চ্যান্সেলর হতে চাই৷''
তবে এই ‘ডুয়েল'-টি অসম বলেই মনে হচ্ছে সবার কাছে৷ জরিপে দেখা গেছে, চ্যান্সেলর ম্যার্কেল সব দিক দিয়েই এগিয়ে আছেন স্টাইনব্রুকের চেয়ে৷
সব দিক দিয়েই এগিয়ে আছেন ম্যার্কেল
এর অনেকগুলি কারণ রয়েছে৷ ম্যার্কেল এখন তাঁর ক্ষমতার শিখরে৷ নিজের দলও এখন তাঁর হাতের মুঠোয়৷ ইউরো সংকট ও ঋণ সমস্যা ‘ম্যানেজ' করছেন তিনি দৃঢ়তার সাথে৷ প্রভাবিত করছেন ব্রাসেলস-এর রাজনীতিকে৷ এ কারণে অধিকাংশ জার্মানই সম্মানের চোখে দেখে তাঁকে৷ বিরোধী এসপিডি এক্ষেত্রে তেমন সমালোচনা করতে পারছে না৷ এই প্রসঙ্গে কমিউনিকেশন বিজ্ঞানী ক্রিশ্টোফ মোস বলেন, ‘‘এসপিডি বলে সব কিছুই খারাপ চলছে৷ কিন্তু জার্মানরা তো এখন বেশ সন্তুষ্ট৷''
ভোটাররা শুধু সমালোচনা শুনতে চায় না৷ তারা জানতে চায় স্টাইনব্রুক জয়ী হলে ম্যার্কেলের চেয়ে কী ভালো করবেন৷
বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সংকট সত্ত্বেও জার্মানি যে আজ শক্ত অবস্থানে থাকতে পারছে, তার ভিত রচনা হয়েছে কিন্তু এসপিডি-র শাসনামলেই৷ চ্যান্সেলর গেয়ারহার্ড শ্র্যোডারের সংস্কার প্রকল্প ‘অ্যাজেন্ডা ২০১০' সেসময় জনপ্রিয় না হলেও আজ তার ইতিবাচক ফল ভোগ করছে জার্মানরা৷ শ্রমিক বান্ধব পার্টি সামাজিক গণতন্ত্রী দলের সরকারের পক্ষে এই অপ্রিয় পদক্ষেপ নেওয়া সহজ ছিল না৷ জনকল্যাণমূলক অনেক কিছুই কাটছাঁট করা হয়েছে ‘অ্যাজেন্ডা ২০১০'-এ৷ সামাজিক নিরাপত্তা খাতের ফি বৃদ্ধি করা হয়েছে, বেকারভাতা কমানো হয়েছে, পেনশনের বয়সসীমা বাড়ানো হয়েছে৷ এসব পদক্ষেপের মাধ্যমে রাষ্ট্রের ওপর আর্থিক চাপ কমানো হয়েছে৷ অন্যদিকে এই চাপটা জনগণের ঘাড়ে এসে পড়েছে৷ বিশেষ করে এসপিডির অনুসারীরা বিরাগভাজন হয়ে ওঠেন এই কারণে এবং অনেকেই দল ত্যাগ করেন৷
এসপিডি নিজেই দূরে সরে এসেছে
এই প্রসঙ্গে হাইডেলব্যার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসবিদ এডগার্ড ভলফ্রুম বলেন, ‘‘সমস্যাটা হলো এসপিডি নিজেই তার আগের সরকারের আমলের এই সংস্কার প্রকল্পের ধ্যানধারণা থেকে দূরে সরে এসেছে৷''
পেয়ার স্টাইনব্রুক এই সংস্কার প্রকল্পের একজন সমর্থক ছিলেন৷ বিস্ময়কর হলো, আজ এসপিডি-র চেয়ে সিডিইউ, সিএসইউ এবং এফডিপি-তে অ্যাজেন্ডা ২০১০-এর সমর্থক বেশি পাওয়া যায়৷ আঙ্গেলা ম্যার্কেলও এই সংস্কার থেকে লাভবান হচ্ছেন৷
এছাড়া নির্বাচনি কর্মসূচিতে দুই বড় দলের মধ্যে খুব কমই পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়৷ এর ফলে স্টাইনব্রুকের চ্যালেঞ্জটা আকর্ষণীয় হয়ে উঠতে পারছে না৷ এসপিডি চায় শ্রমের নূনতম মজুরি ৮.৫০ ইউরো ধার্য করতে৷ খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রী ও খ্রিষ্টীয় সামাজিক ইউনিয়ন এর বিরুদ্ধে৷ তাদের মতে, আইনগত বিধিবিধানে আবদ্ধ না রেখে মালিক ও শ্রমিক পক্ষের হাতেই পারিশ্রমিকের ব্যাপারটা ছেড়ে দেওয়া উচিত৷ সামাজিক গণতন্ত্রীরা চায় বিত্তশালীদের করের পরিমাণ বাড়াতে৷ ইউনিয়নের পরিকল্পনা রাষ্ট্রের ঋণ কমানো৷ কর না বাড়ানো৷ এই অল্প কিছু পার্থক্য ছাড়া জার্মানির রাজনৈতিক অঙ্গন এখন মধ্যপন্থাতেই আবর্তিত হচ্ছে৷ চ্যান্সেলর ম্যার্কেলের কণ্ঠেও এই রকম সুর শোনা যায়৷ ‘‘কর্মসূচিটা হলো পরিমিতি ও মধ্যস্থান৷ নাগরিক ও অর্থনীতির ওপর অতিরিক্ত কোনো চাপ দেওয়া হবে না৷''
নির্বাচনের মাঠ গরম হচ্ছে না
নির্বাচনের মাঠকে গরম রাখার মতো তেমন কোনো বিষয়ই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না এবার৷ ফুকুশিমা বিপর্যয়ের পর আণবিক শক্তি কেন্দ্রগুলি ধীরে ধীরে বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সিডিইউ-সিএসইউ এবং এফডিপি৷ তাই এক্ষেত্রেও বিতর্ক নেই৷
আঙ্গেলা ম্যার্কেল কথা বলেন কম৷ বিস্ময়কর তেমন কিছু বলেন না৷ আবেগের প্রকাশ সীমিত৷ সংযত ও মার্জিত৷ এসব কারণেও ভোটারদের কাছে পয়েন্ট অর্জন করতে পারছেন তিনি৷ ইতিহাসবিদ ভলফ্রুম বলেন, ‘‘তিনি একেবারে স্বাভাবিক৷ নিজেকে জাহির করার চেষ্টা করেন না৷ আবার ছোটও করেন না৷ সব দিক দিয়ে মাঝামাঝি৷ যে কেউ মিল খুঁজে পাবে তাঁর সাথে৷ আর এটাই ম্যার্কেলের সাফল্যের চাবিকাঠি৷''
নির্বাচনি আবহাওয়া দেখে মনে হয়, শুধু কোয়ালিশন সহযোগী এফডিপি-র কারণে আঙ্গেলা ম্যার্কেল হয়ত হোঁচট খেতে পারেন৷ এফডিপি পাঁচ শতাংশের বাধা পার হতে না পারলে এবং লাল-সবুজের জোট সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে বৃহৎ কোয়ালিশন গঠন করা ছাড়া উপায় থাকবে না৷ ২০০৫ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত আঙ্গেলা ম্যার্কেল চ্যান্সেলর ও স্টাইনব্রুক অর্থমন্ত্রী হয়ে সাফল্যের সাথেই সরকার পরিচালনা করেছিলেন৷