1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
দুর্নীতিবাংলাদেশ

‘একজন অপরাধ করেছে, আমিও করবো- এভাবে জাস্টিফাই করা ঠিক নয়'

৫ এপ্রিল ২০২৪

দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করবেন যারা, তারাও দুর্নীতিতে জড়ালে দুর্নীতিমুক্ত সমাজের স্বপ্ন বাস্তবায়ন কঠিন হয়ে পড়ে৷ সাক্ষাৎকারে সে কথাই যেন বললেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান৷

https://p.dw.com/p/4eTYZ
বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন
মামলার প্রয়োজনে সরকারি কর্মর্তাদের আটক করতে হলে সিভিল সার্ভিস অ্যাক্ট সংশোধন করে সরকারের পূর্বানুমতির বিধান করা হয়েছেছবি: bdnews24.com

ডয়চে ভেলে: উচ্চ পদ সেটা রাজনৈতি হোক আর প্রশাসনিক-এই উচ্চপদের সঙ্গে দুর্নীতির সম্পর্ক কতটুকু?

ড. ইফতেখারুজ্জামান: উচ্চপদ হোক আর নিম্নপদ হোক, সরকারের যে কোনো পদেই ভালো কাজের সুযোগ আছে। আবার দুর্নীতি করারও সুযোগ আছে। তারা যদি ক্ষমতা পান, সেটা ব্যবহার করে দুর্নীতি করে নিজের সম্পদ বাড়াতে পারেন। এটা সব ধরনের পদেই হয়। একদম নিম্নস্তরে সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে ঘুস লেনদেন থেকে বিভিন্ন ধরনের দুর্নীতি হয়ে থাকে। সর্বোচ্চ পদ থেকে সর্বনিম্ন পদ পর্যন্ত দুর্নীতির বিস্তার হয়েছে। এটা কম-বেশি হতে পারে।

উচ্চপদের দুর্নীতি  কি নিম্নপদেও সঞ্চারিত হয়?

উচ্চপদে যারা দুর্নীতি করেন, তাদের দুর্নীতির তথ্য প্রকাশ হওয়ার পরেও যখন ব্যবস্থা নেয়া হয় না, দৃষ্টান্তুমূলক শাস্তি হয় না তখন নিম্নপদে যারা আছেন, তারা মনে করেন এটাই বাস্তবতা, এটাই স্বাভাবিক। কাজেই আমি কেন বাদ যাবো? তবে একজন অপরাধ করেছে তাই বলে আমিও অপরাধ করবো- এভাবে জাস্টিফাই করা ঠিক না। তবে দুর্নীতির বিকাশে এটার একটা প্রভাব থাকতেই পারে। পচন যেভাবে মাথা থেকে হয় সেইভাবে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করতে হলে উপর থেকেই শুরু করতে হয়। সেটা করলে কার্যকর হয়। তা না হলে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে আসে না।

কেউ যখন ক্ষমতায় থাকেন, তার দুর্নীতির খবর প্রকাশ হয় না, দুর্নীতির মামলা হয় না, ক্ষমতা ছাড়ার পর হয়। এর কারণ কী? এই সময়ে সাবেক আইজিপি বেনজীর সাহেবের উদাহরণ তো দিতেই পারি...

এটা হতে পারে যাদের প্রকাশ করার দায়িত্ব তাদের দক্ষতা, সক্ষমতার ঘাটতি। যেমন আপনি গণমাধ্যমকে ইঙ্গিত করছেন। এটা হতে পারে তখন তাদের কাছে তথ্য ছিল না, সুযোগ ছিল না। যারা তার (বেনজীর) দুর্নীতির বিষয়ে তথ্য প্রকাশ করেছেন, পরে হলেও, এটা তাদের ব্যর্থতা নয়। কিন্তু যখনই প্রকাশ হোক, তার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ, দুর্র্নীতি দমন কমিশন, অন্যান্য দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা, পুলিশ, যারা আগে দায়িত্ব পালন করতে পারেনি, তারা এখন যদি যথাযথ দায়িত্ব ও ভুমিকা পালন করে, তাহলেও কিন্তু ইতিবাচক ফল পাওয়া যাবে।  তাহলে এটা নিশ্চিত হবে যে, আমি যদি দুর্নীতি করি, ক্ষমতায় থাকাকালে বা ক্ষমতার বাইরে গেলে, যখনই হোক আমাকে আইনের মুখোমুখি হতে হবে। কিন্তু এই বিষয়টিই তো এখনো আমরা নিশ্চিত করতে পারিনি।  কারণ, এখানে আইনের প্রয়োগ এখন ব্যক্তির ওপর নির্ভর করে। ব্যক্তি কে, তার অবস্থান কী, পরিচয় কী, তিনি কতটা  রাজনৈকিভাবে বা প্রশাসনিকভাবে ক্ষমতাবান- তার ওপর। যেটুকু হয় সেটা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হলে বা ক্ষমতা থাকার পরও কর্তৃপক্ষের বিরাগভাজন হলে। আর যেটা হয়- আমরা দেখেছি যারা ক্ষমতার সঙ্গে থাকেন, তার কিছু প্রকাশ হলে তদন্তের নামে, জিজ্ঞাসাবাদের নামে ধামাচাপা দেয়া হয়। কয়েক বছর আগে  কয়েকজন জনপ্রতিনিধিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকেছিল দুদক। তারপর আর কিছু হয় নাই। সংসদ থেকেও বলা হয়েছিল কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আসলে কিছু হয় নাই।

এখানে দুদকের আইগত কোনো বাধা আছে, নাকি রাজনৈতিক বা অন্য কোনো কারণ আছে?

আইনগত বাধা কিছু দিন আগেও ছিল না। এটা মূলত সদিচ্ছার ঘাটতি, সৎ সাহসের ঘাটতি। তাদের এক ধরনের ফেলো ফিলিং আছে। দুদকের কমিশনার থেকে শুরু করে আরো উপরে যারা আছেন, তারা কিন্তু রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ পান। ফলে তাদের রাজনৈতিক দলের প্রতি দায় থাকে। বিশেষ করে যারা উচ্চ পদে আছেন, তারা সরকারের উচ্চ পদে ছিলেন। ফলে তারা সরকারের পক্ষের লোক। আর সাম্প্রতিককালে দেখেছি মামলার প্রয়োজনে সরকারি কর্মর্তাদের আটক করতে হলে সিভিল সার্ভিস অ্যাক্ট সংশোধন করে সরকারের পূর্বানুমতির বিধান করা হয়েছে। পূর্বানুমতি নিয়ে গ্রেপ্তার কোনো দিনই সম্ভব নয়। এটা যারা করেছেন, তারা জেনেশুনেই করেছেন। এবং দুদকের ক্ষমতা খর্ব করা হয়েছে। আর ২০২৩-এর অ্যাক্টের আগে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ অন্যান্য সংস্থাগুলো দুদকের তদন্তে অসামাঞ্জস্যপূর্ণ আয়ের তথ্য দিতে বাধ্য ছিল। এখন আদালতের আদেশ হলেই তারা দিতে বাধ্য। এটাও আসলে একটা অসম্ভব ব্যাপার। এর সঙ্গে অদক্ষতাও থাকতে পারে।

দুর্নীতির অর্থ তো পাচার হয়। সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন ক্যানাডার বেগম পাড়ায় যাদের বাড়ি আছে, তাদের অধিকাংশই সরকারি কর্মকর্তা। সরকারি হোক আর বেরসারি- এই পাচারের তথ্য ধরেও তো দুর্নীতির তদন্ত সম্ভব। সেটা এখানে দেখছেন?

এটা ধরে তো অবশ্যই তদন্ত সম্ভব। সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিসের ভিত্তিতে সরকারি কর্মকর্তাদের কথা বলেছেন আমি জানি না। তবে বাংলাদেশে প্রভাবশালীরাই অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত। যেসব দেশ থেকে উচ্চ হারে অর্থ পাচার হয়, বাংলাদেশ তার মধ্যে অন্যতম। এখান থেকে বছরে ১২ বিলিয়ন ডলার অর্থ পাচার হয়। যেটা আইএমএফ থেকে আমরা যে লোন নিয়েছি, তার প্রায় তিনগুণ। বেশি অর্থ পাচার হয় আমদানি রপ্তানির নামে। আর হুন্ডির মাধ্যমেও পাচার হয়। এই টাকা দেশে থাকলে অনেক অর্থনৈতিক উন্নয়ন হতো।

অর্থ পাচারের  সঙ্গে দুর্নীতির কোনো সম্পর্ক আছে?

অবশ্যই আছে। এর সূত্রটিই তো দুর্নীতি। যারা পাচার করেন, তাদের সঙ্গেঅনেক সরকারি কর্মকর্তা জড়িত। আবার  ব্যাংক থেকে ঋণের নামে টাকা নিয়ে তা পাচার করা হয়। অবৈধ আয়, ঘুস, দুর্নীতির টাকা পাচার হয়। সরকার আন্তরিক হলে, এনবিআর আন্তরিক হলে এই পাচার ঠেকানো যায়।  সদিচ্ছা থাকলে পাচার হওয়া অর্থ ফেরতও আনা যায়। যে প্রক্রিয়ায় একজন সাবেক রাষ্ট্রপতির ছেলের টাকা সিঙ্গাপুর থেকে ফেরত আনা হয়েছে, সেই প্রক্রিয়া এখনো বহাল আছে। সেইভাবে বিশ্বের অন্যদেশ মালয়েশিয়া, ক্যানাডা, অষ্ট্রেলিয়া যুক্তরাজ্য বা অন্য দেশ থেকে পাচারের অর্থ ফেরত আনা সম্ভব। আমরা জাতিসংঘের দুর্নীতি বিরোধী সনদে স্বাক্ষরকারী। ওইসব দেশও স্বাক্ষরকারী। অর্থ পাচার বিরোধী আন্তর্জাতি আইন আছে। সদিচ্ছার অভাবে, রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে এখন আমরা পাচারের অর্থ ফেরত আনতে পারছি না।