হতাশ করছে জলবায়ু সম্মেলন
১৯ নভেম্বর ২০১৩সম্মেলনস্থলের বাইরে বিক্ষোভকারীদের হাতে প্ল্যাকার্ডগুলি চোখে পড়ার মতো৷ ইংরাজিতে বিকল্প পরিকল্পনাকে ‘প্ল্যান বি' বলা হয়৷ শব্দটিকে একটু ঘুরিয়ে লেখা হয়েছে, ‘আমাদের কোনো প্ল্যানেট বি নেই'৷ অর্থাৎ পৃথিবী একটাই, সকলকে এখানেই থাকতে হবে৷ নানা বুলি আউড়িয়ে প্রতিবাদ দেখাচ্ছে নানা দেশের মানুষ৷ জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সামাজিক নিরাপত্তার প্রশ্নটিকেও যুক্ত করছে অনেকে৷ পুলিশ অবশ্য কড়া হাতে নিরাপত্তা বজায় রাখার চেষ্টা করছে৷
সম্মেলনের প্রথম পর্যায়ে বিশেষজ্ঞ, বিজ্ঞানী, আমলারা নানা খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে আলোচনা চালিয়েছেন, দরকষাকষি করেছেন৷ মঙ্গলবার থেকে মন্ত্রীরা এসে পৌঁছাচ্ছেন৷ বিশেষ করে রাজনৈতিক প্রশ্নে তাঁদেরই অবস্থান নিতে হবে৷ ফলে এখনো কোনো স্পষ্ট ফলাফলের আভাস পাওয়া যাচ্ছে না৷ একদল বলছে, যথেষ্ট আশার আলো দেখা যাচ্ছে৷ অন্যরা এতটা আশাবাদী নয়৷ যেমনটা চলে আসছে, তেমনটা আর চলতে পারে না – এমন কথা শোনা গেলেও প্রতিবারের মতো এবারও পরিস্থিতিদের জন্য অন্যদের দায়ী করে নিজে হাত-পা দুটিয়ে থাকার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে৷
ওয়ারশ-র জলবায়ু সম্মেলনের সাফল্যের উপর নির্ভর করছে, দুই বছর পর প্যারিসে মূল জলবায়ু সম্মেলনে কী রফা হয়৷ তখন শিল্পোন্নত দেশগুলির পাশাপাশি এই প্রথম অন্যান্য দেশগুলিকেও কার্বন নির্গমন কমানোর লক্ষ্যমাত্রা স্থির করতে হবে৷ ঠিক কত পরিমাণ কার্বন নির্গমন কমানো হবে এবং কোন বছরটিকে তুলনার ভিত্তি হিসেবে স্থির করা হবে, ওয়ারশ-তে তা নিয়ে আলোচনা করার কথা রয়েছে৷ তবে এই মৌলিক বিষয় নিয়েও মতপার্থক্য কাটেনি৷ যেমন ব্রাজিল শিল্পোন্নত দেশগুলির ঐতিহাসিক দায়িত্বের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে চায়, যেহেতু এই সব দেশ সেই অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষভাগ থেকেই কার্বন নির্গমন শুরু করেছে৷
ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধির মতে, এমন ঐতিহাসিক দায়িত্বের স্বীকৃতি নীতিগতভাবে কোনো সমস্যা নয়৷ তবে এটাই একমাত্র মানদণ্ড করা হলে, গোটা হিসাবটাই বদলে যাবে৷ এই মানদণ্ড অনুযায়ী নতুন করে হিসাব করতে হবে৷ ফলে পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১৫ সালের মধ্যে নতুন চুক্তি স্বাক্ষর করা সম্ভব হবে না৷ এমনকি পরিবশেবাদী সংগঠন গ্রিনপিস-ও এই বিপদের আশঙ্কা করছে৷ ব্রাজিলে আগামী বছর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আলোকে এমন কড়া মনোভাব নিয়ে সে দেশের বিরুদ্ধে সমালোচনার সুর শোনা যাচ্ছে৷
একদিকে যেমন নতুন লক্ষ্যমাত্রা স্থির করার উদ্যোগ চলছে, অন্যদিকে অতীতের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা নিয়ে নতুন সমস্যা দেখা যাচ্ছে৷ জাপান জানিয়েছে, সে দেশের নির্গমনের মাত্রা কমার বদলে আরও বেড়ে যাবে৷ ফুকুশিমা পরমাণু কেন্দ্রে দুর্ঘটনার পর দেশের সব পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ রাখা হয়েছে৷ ফলে শুধু জীবাশ্ম-ভিত্তিক জ্বালানির উপর জাপানকে নির্ভর করতে হচ্ছে৷ যার অর্থ আরও কার্বন নির্গমন৷ ভবিষ্যতে পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদন শুরু হলে অবশ্য পরিস্তিতির উন্নতি ঘটতে পারে৷ জাপানের এমন সিদ্ধান্তের ফলে চীন ও ভারতের মতো দেশও নিজেদের লক্ষ্যমাত্রা আরও শিথিল করতে পারে বলে আশঙ্কা করছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন৷