এথেন্সের সামরিক জান্তা এবং ডয়চে ভেলের গ্রিক প্রোগ্রাম
গ্রিসে সামরিক একনায়কতন্ত্রের সময় ডয়চে ভেলে সাংবাদিকতায় ইতিহাস সৃষ্টি করে৷
১৯৬৭ সালে সেনা অভ্যুত্থান
ষড়যন্ত্রকারীদের একটি ছোট দল নিয়ে গ্রিসের তিন সেনা কর্মকর্তা ১৯৬৭ সালের ২১ এপ্রিল অভ্যুত্থান ঘটায়৷ সেই রাতে গণহারে গ্রেপ্তার শুরু হয়৷ আট হাজারের মতো মানুষ গ্রেপ্তার হন, যাদের মধ্যে ক্ষমতাসীন মন্ত্রী, অসংখ্য সাংবাদিক, আইনজীবী, লেখক এবং শিল্পীও ছিলেন৷
সামরিক জান্তার সাত বছর
সংসদের ক্ষমতা খর্ব করা হয়, রামপন্থী রাজনীতির কয়েক হাজার সমর্থককে বিভিন্ন দ্বীপের কারাগারে বন্দি রাখা হয়৷ সামরিক জান্তার সাত বছরের সময়কালে স্বৈরতন্ত্র, মাত্রাতিরিক্ত সেন্সরশিপ, নির্যাতন এবং হত্যার ঘটনা ঘটেছি৷ কয়েক হাজার মানুষকে সেই সময় হত্যা করা হয়৷
কোলন থেকে গ্রিসে সংবাদ প্রচার
১৯৬৪ সালে কোলনে অবস্থিত ডয়চে ভেলের তৎকালীন প্রধান কার্যালয় থেকে গ্রিক ভাষায় রেডিও অনুষ্ঠান সম্প্রচার শুরু হয়৷ সেনাবাহিনী ক্ষমতা নেয়ার পর তাদের সমালোচকদের কথা বলার একটা ক্ষেত্র তৈরি করে দেয় ডয়চে ভেলে৷ সেসময় ডয়চে ভেলে ছিল গুটিকয়েক সংবাদমাধ্যমের একটি যেটি কোনো রকম রাখঢাক ছাড়া সংবাদ প্রচার করে, যা সামরিক জান্তার কাছে ছিল অস্বস্তিকর৷
ভিন্নমতাবলম্বীদের সংবাদ এবং ‘নিষিদ্ধ’ সঙ্গীত
প্রতিদিন রাত ৯:৪০ থেকে ১০:৪০ পর্যন্ত ডয়চে ভেলে গ্রিসের পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ, মতামত, সংবাদ পর্যালোচনা এবং ফিচার প্রকাশ করত৷ গ্রিসের শাসকগোষ্ঠীর বিরোধীদের সাক্ষাৎকার প্রচার তখন ছিল নিয়মিত ব্যাপার৷ অনুষ্ঠানের একাংশে গ্রিক সঙ্গীত প্রচার করা হতো, বিশেষ করে যেগুলো জান্তা সরকার নিষিদ্ধ করেছিল৷
জান্তার বিরুদ্ধে ঐক্য
ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের এবং সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ ছিল ডয়চে ভেলের গ্রিক বিভাগের অংশ৷ তারা সবাই একটি বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছিলেন: তা হচ্ছে সামরিক স্বৈরতন্ত্র গ্রহণযোগ্য নয়৷
শাসকগোষ্ঠীর পাল্টা আক্রমণ
গ্রিসের শাসকগোষ্ঠী সুকৌশলে ডয়চে ভেলে রেডিও’র শর্টওয়েভ সিগন্যালে বাধা দেয়ার চেষ্টা করতো৷ সে দেশের তৎকালীন জান্তাপন্থী পত্রিকা ‘নিয়া পলিটিক্যা’ ডয়চে ভেলের এডিটরিয়াল টিমের সুখ্যাতি নস্যাৎ করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়৷ তখন ত্রিশ লাখের মতো গ্রিক প্রতি রাতে ডয়চে ভেলের অনুষ্ঠান শুনতো৷
এথেন্স পলিটেকনিকে বিক্ষোভ, জান্তার অবসান
১৯৭৩ সালের ১৪ নভেম্বর এথেন্সের পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীরা সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু করে৷ তারা তাদের ক্যাম্পাসে বেরিকেড দেয় এবং একটি রেডিও স্টেশন চালু করে৷ সে সময় তাদের বক্তব্য গোটা গ্রিসে ছড়িয়ে দেয় ডয়চে ভেলে৷ শিক্ষার্থীদের সেই আন্দোলন কার্যত গ্রিসে জান্তা শাসকগোষ্ঠীর পতনের সূচনা করেছিল, যা ১৯৭৪ সালের মাঝামাঝি সময় চূড়ান্ত রূপ নেয়৷ তখন থেকেই ডয়চে ভেলে ‘স্বাধীনতার কণ্ঠ’ হিসেবে গ্রিসে পরিচিত৷