এশিয়াতে ছড়িয়ে পড়ছে সোয়াইন ফ্লু
২ মে ২০০৯মেক্সিকোতে যারা সোয়াইন ফ্লুতে আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের আত্মীয় স্বজনের মধ্যে খুব কম জনই সংক্রমিত হয়েছেন৷ অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সেন্টারের কর্মকর্তা ন্যান্সি কক্স জানান, যে নির্দিষ্ট কয়েকটি স্কুলের বাইরে এই রোগ এখনও ছড়িয়ে পড়তে পারেনি৷ তাঁর কথায়, এই নতুন এইচ১এন১ ভাইরাসটি পরীক্ষা করে দেখা গেছে, যে এর মধ্যে ১৯১৮ সালে আক্রান্ত ভাইরাসটির ক্ষতিকর উপাদান নেই৷
কিন্তু, তারপরও বিশেষজ্ঞরা যে কোন পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকার কথা বলেছেন৷ তাঁদের কথায়, সংক্রমণের সংখ্যা কমে গেলেও তা আবার মহামারী আকার নিতে পারে৷ যদিও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা ডাব্লুএইচও-র কর্মকর্তা ক্রিস্টিয়ান লিন্ডমায়ার জানান : সংক্রমণ ৬ মাত্রায় পৌঁছনোর অর্থ এটা নয়, যে আমরা একটা মস্ত বড় বিপদের সম্মুখীন৷ যতোক্ষণ পর্যন্ত এই রোগ আগে-ভাগে শনাক্ত করা যাচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত সোয়াইন ফ্লু কোন হুমকির কারণ নয়৷
এদিকে, মেক্সিকোর স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যে দেশটিতে সোয়াইন ফ্লুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা যা ধারণা করা হয়েছিল তার চেয়ে কম৷ জানা গেছে এর আগে এই নতুন ধরনের এইচ১এন১ ফ্লুতে ১৭৬ জনের মৃত্যুর কথা জানানো হলেও, প্রকৃতপক্ষে এই সংক্রমণে মৃত্যুর সংখ্যা ১০১ জনের বেশি নয়৷ কারণ, সম্প্রতি একটি গবেষণায় দেখা যায়, যে ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতদের বেশ কয়েকজনের মধ্যে এই ফ্লুর সংক্রমণ হয়নি৷ জানিয়েছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রী হোসে অ্যানজেল কর্দোভা৷
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার টিকা গবেষণার পরিচালক ড. মেরী পলকিনি বলেন : সোয়াইন ফ্লু ভাইরাস প্রতিরোধে একটি সফল টিকা আবিস্কার করা যে সম্ভব - তাতে কোন সন্দেহ নেই৷ কিন্তু, তার জন্যে সময় প্রয়োজন৷ কারণ, একটি টিকার প্রথম ডোজ কারখানা থেকে বের হয়ে আসতে সময় লাগে ৪ থেকে ৬ মাস৷ আর তারপরই সেই প্রতিষেধক দেওয়া হয় মানুষজনকে৷
অন্যদিকে, হংকং-এর একটি হোটেলে একজন অতিথি অসুস্থ হয়ে পড়লে, তার রক্তে সোয়াইন ফ্লু-র ভাইরাস ধরা পড়ে৷ ২৫ বছর বয়সী ঐ ব্যক্তি মেক্সিকো থেকে সাংহাই হয়ে হংকং-এ আসেন৷ এই ঘটনার পরপরই হোটেলটি বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং হোটেলের ৩০০ অতিথি ও স্টাফকে সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হয়৷ ওদিকে, হংকং-এর পর শনিবার সকালে দক্ষিণ কোরিয়াও সংক্রমণের কথা নিশ্চিত করাতে এশিয়ায় এই ভাইরাস সংক্রমণের আশংকা ক্রমশই বাড়ছে৷ কোরিয়াতে ৫১ বছর বয়সী এক নারী এই ফ্লুতে আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানিয়েছে ইয়নহ্যাপ সংবাদ সংস্থা৷ এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে তিনি মেক্সিকো থেকে দক্ষিণ কোরিয়া এসেছিলেন৷ শুধু তাই নয়, শনিবার ভারতেও দুই ব্যক্তির রক্তে এই ভাইরাস আছে সন্দেহে তাদের রাজধানী নতুন দিল্লির রাম মনোহর লোহিয়া হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে খবর৷
এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ব্রিটেন, সুইজারল্যান্ড, স্পেন, অস্ট্রিয়া, ইসরায়েল, নিউজিল্যান্ড, ডেনমার্ক, ফ্রান্স ও জার্মানির পর এবার ইটালিতেও সোয়াইন ফ্লুর সংক্রমণ দেখা দিয়েছে৷ অর্থাৎ, এই নিয়ে মোট ১৬-টি দেশ সোয়াইন ফ্লুতে আক্রান্ত হলো৷ প্রসঙ্গত, জার্মানিতে শুক্রবার এই প্রথম মানুষ থেকে অন্য মানুষের শরীরে সোয়াইন ফ্লু সংক্রমণের ঘটনা ধরা পড়ে৷ বাভেরিয়া রাজ্যের এক নার্সের শরীরে ঐ রোগ ধরা পড়াতে, জার্মানিতে মোট ৫ জনের শরীরে সোয়াইন ফ্লু ধরা পড়ল৷ এ বিষয়ে বাভেরিয়া রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী মার্কুস স্যোডার জানান : আমরা বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে পর্যবেক্ষণ করছি৷ তাই এখনই আতঙ্কের কোন কারণ নেই৷
উল্লেখ্য, মেক্সিকোতে ১-লা মে থেকে ৫-ই মে পর্যন্ত খুব জরুরী নয় এ রকম সমস্ত কোম্পানি বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷ এর আগে, যুক্তরাষ্ট্র, চীন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন দেশ তাদের দেশের মানুষদের জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মেক্সিকো ভ্রমণ না করার আহ্বান জানায়৷
প্রতিবেদক: দেবারতি গুহ, সম্পাদনা: রিয়াজুল ইসলাম