ঐকমত্যে পৌঁছালেন ইইউ নেতারা
২৪ এপ্রিল ২০২০ইটালি ও স্পেনের মতো করোনা সংকটে বিপর্যস্ত দেশের জন্য আর্থিক সহায়তা নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে তেমন মতপার্থক্য নেই৷ প্রায় সব দেশেই লকডাউন বা কড়াকড়ির ফলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড থমকে গেছে বলে সরকারি সহায়তা নিয়েও আপত্তি নেই৷ ইইউ নেতাদের মধ্যে প্রবল মতপার্থক্যের মূল কারণ পুরানো এক ক্ষত৷ এক দেশের ঋণের বোঝা বাকি সব দেশ মিলে ভাগ করে নেবে কিনা, সেই প্রশ্নে ইউরোপের উত্তর ও দক্ষিণের দেশগুলির মধ্যে অনেক কাল ধরে বিভাজন রয়েছে৷ জার্মানি, অস্ট্রিয়া ও নেদারল্যান্ডসের মতো দেশ নাগরিকদের করের অর্থ দিয়ে অন্য দেশের ঋণের ভাগীদার হবার প্রবল বিরোধী৷ করোনা সংকটের মাঝেও সেই মৌলিক অবস্থানে কোনো পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না৷ ফলে বাজারে ‘করোনা বন্ড' ছাড়ার প্রস্তাবের বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে না৷
বৃহস্পতিবার ইইউ শীর্ষ সম্মেলনে বিষয়টিকে ধামাচাপা দিয়ে শুধু কিছু নীতিগত সিদ্ধান্ত নিলেন সদস্য দেশের নেতারা৷ সেই সব সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে বিস্তারিত কর্মসূচি স্থির করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ইউরোপীয় কমিশনকে৷ প্রবল অর্থনৈতিক মন্দার মোকাবিলা করতে একাধিক পদক্ষেপের প্রস্তাব রাখা হয়েছে৷ অর্থনৈতিক প্রণোদনা হিসেবে কমপক্ষে এক লাখ কোটি ইউরো ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছে৷ ইইউ-র দীর্ঘমেয়াদী বাজেটের মধ্যেই সেই তহবিল ‘নোঙর' করা থাকবে৷ তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কোনো সিদ্ধান্ত না নেওয়ার ফলে কমিশনকে পদে পদে সদস্য দেশগুলির সম্মতি নিতে হবে৷
এমন কঠিন দায়িত্বের সামনে নতি স্বীকার করতে প্রস্তুত নন ইইউ কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন৷ পুনরুদ্ধার কর্মসূচির জন্য তিনি সদস্য দেশগুলির গ্যারান্টির ভিত্তিতে বাজার থেকে প্রয়োজনীয় মূলধন সংগ্রহ করতে চান৷ সেই অর্থ দিয়েই সদস্য দেশগুলির অর্থনীতি চাঙ্গা করা হবে৷
একটি ক্ষেত্রে ইইউ নেতারা অবশ্য স্পষ্ট সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷ কর্মহীন কর্মী, বিপর্যস্ত কোম্পানি ও ভারাক্রান্ত রাষ্ট্রগুলির সহায়তা করতে ৫৪,০০০ কোটি ইউরোর সহায়তা প্যাকেজ অনুমোদন করেছে৷ আগামী জুন মাসের মধ্যেই সেই সহায়তা ক্ষতিগ্রস্তদের হাতে পৌঁছে দেবার অঙ্গীকার করা হয়েছে৷ জার্মান চ্যান্সেলরআঙ্গেলা ম্যার্কেল এই কর্মসূচির রূপরেখা তুলে ধরেন৷
বৃহস্পতিবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ইইউ শীর্ষ সম্মেলনের আগে ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান ক্রিস্টিন লাগার্দ ইইউ নেতাদের সাবধান করে দিয়েছেন৷ তাঁর মতে, ইউরো এলাকার অর্থনীতি ১৫ শতাংশ পর্যন্ত সঙ্কুচিত হতে পারে৷ ইসিবি সব মিলিয়ে তিন রকম সম্ভাব্য পরিস্থিতি তুলে ধরেছে৷ ইইউ নেতারা ঠিক সময়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নিলে মারাত্মক পরিণাম সম্পর্কে সতর্ক করে দেন লাগার্দ৷
এমন প্রেক্ষাপটে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ ইউরোপের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে গভীর দুশ্চিন্তা প্রকাশ করেছেন৷ তাঁর মতে, ইউরোপের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলগুলির সহায়তা করতে ‘বাজেটারি ট্রান্সফার'-এর বিষয়ে ঐকমত্য অর্জন করতে না পারলে ইউরোপের ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে যাবে৷ মাক্রোঁ বলেন, ইউরোপের কোনো অংশের পতন মেনে নিলে গোটা ইউরোপের পতন ঘটবে৷
এসবি/এসিবি (ডিপিএ, রয়টার্স)