1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ওড়িশায় তিন ট্রেনের ধাক্কা, মৃত ২৮০

৩ জুন ২০২৩

ওড়িশায় শুক্রবার সন্ধ্যার ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২৮০ হয়েছে৷ বালেশ্বরের কাছে দুইটি ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে এই দুর্ঘটনা ঘটে।

https://p.dw.com/p/4S9Fs
তিন ট্রেনের ভয়ংকর দুর্ঘটনা ওড়িশায়।
তিন ট্রেনের ভয়ংকর দুর্ঘটনা ওড়িশায়। ছবি: Satyajit Shaw/DW

বালেশ্বর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে বাহানাগা বাজার স্টেশনে। এই স্টেশনের কাছে শুক্রবার সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ দুর্ঘটনাটি ঘটে। লাইনচ্যুত হয়ে যায় পশ্চিমবঙ্গের শালিমার থেকে চেন্নাই সেন্ট্রালগামী করমণ্ডল এক্সপ্রেস ও হাওড়াগামী সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস৷ 

ট্রেন দুইটি দ্রুতগতিতে একে অন্যের উল্টো দিকে যাচ্ছিল৷ কয়েক মিনিটের ব্যবধানে ট্রেন দুইটি লাইনচ্যুত হয় এবং একটির সঙ্গে অপরটির পাশাপাশি সংঘর্ষ হয়৷ একটি ট্রেনের কামরা ও ইঞ্জিন ছিটকে পড়ে পাশের লাইনে থাকা পণ্যবাহী ট্রেনের উপর৷ তিনটি ট্রেন একইসঙ্গে দুর্ঘটনায় পড়ার এমন নজির বিরল৷

কী কারণে দুর্ঘটনা?

দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখছে ভারতের রেল কর্তৃপক্ষ৷ প্রাথমিক রিপোর্টে বলা হয়েছে, সুপারফাস্ট লাইনচ্যুত হয় সন্ধ্যা সাতটা বাজার পাঁচ মিনিট আগে৷ তার কিছুক্ষণ পরে লাইনচ্যুত হয়েছে করমণ্ডল৷ এক্ষেত্রে সুপারফাস্টের কামরা লাইনচ্যুত হয়ে করমণ্ডলের লাইনে এসে পড়ায় সংঘর্ষ হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ আবার লাইনে ত্রুটি থাকায় করমণ্ডল লাইনচ্যুত হতে পারে৷

শুরুতে ধারণা করা হয়েছিল, দুইটি ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়েছে৷ রেলের প্রতিনিধিরা ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেন, একটি ট্রেনের উপর অন্যটির ইঞ্জিন উঠে গিয়েছে৷ এতে বোঝা যায়, মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়নি। লাইনচ্যুত হয়ে পাশাপাশি ট্র্যাকে থাকা ট্রেনে ধাক্কা লেগেছে৷ 

'বিপুল রেল পরিকাঠামো সুরক্ষিত রাখার পরিকল্পনা নেই কেন্দ্রের'

 

মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে

শনিবার সকালের বেসরকারি হিসাবে ২৮০ জনের মৃত্যু হয়েছে৷ মৃতের সংখ্যা আরো বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে৷ কেননা আহতের ৬৫০-এর বেশি।

মৃতের সংখ্যায় ওড়িশার দুর্ঘটনা জ্ঞানেশ্বরীকে ছাড়িয়ে গেছে৷ গাইশালকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে। ১৯৯০ সালে উত্তর দিনাজপুরের গাইশালে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ২৮৫ জনের৷ ২০১০ সালে ঝাড়গ্রামের কাছে জ্ঞানেশ্বরী একপ্রেসে মাওবাদী নাশকতায় ১৪৮ জন মারা যান৷

এদিকে উদ্ধারকাজে এনডিআরএফ-এর সঙ্গে ওড়িশা সরকারের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী, রেল পুলিশ, দমকল যোগ দিয়েছে৷ আছে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের বড় দল৷ ঘটনার পর থেকেই উদ্ধারে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারাও৷

প্রশাসনিক তৎপরতা

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দুর্ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন।  প্রধানমন্ত্রী মোদী কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে সঙ্গে নিয়ে বালেশ্বর যাচ্ছেন৷  মমতাও বালেশ্বর যাচ্ছেন৷ ট্রেনের উৎস ও গন্তব্য পশ্চিমবঙ্গ হওয়ায় এই রাজ্যের বহু যাত্রী ছিলেন৷ অনেক পরিবার তাদের প্রিয়জনের খোঁজ পাচ্ছেন না৷ 

রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব দুর্ঘটনাস্থলে যান৷  উচ্চপর্যায়ের তদন্তের কথা বলেছেন তিনি৷ মৃতদের পরিবারপিছু ১০ লাখ টাকা দেয়ার ঘোষণা করেছেন রেলমন্ত্রী। গুরুতর আহতদের দুই লাখ, কম আহতদের ৫০ হাজার টাকা করে দেয়া হবে৷ 

এবাবেই লাইন থেকে ছিটকে পড়েছে কামরাগুলি।
এভাবেই লাইন থেকে ছিটকে পড়েছে কামরাগুলি। ছবি: Satyajit Shaw/DW

প্রশ্নে যাত্রী সুরক্ষা

প্রতিটি দুর্ঘটনার মতো এক্ষেত্রেও রেলযাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে৷ এর আগে রেলমন্ত্রী বৈষ্ণব ট্রেনে 'কবচ' সুরক্ষার কথা বলেছিলেন৷ এই প্রযুক্তিতে দুইটি ট্রেনে মুখোমুখি সংঘর্ষ এড়ানো সম্ভব বলে দাবি করেন তিনি৷ প্রশ্ন উঠেছে, করমণ্ডল বা সুপারফাস্ট এক্সপ্রেসে কি এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়নি?

পরিবহণ বিশেষজ্ঞ, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পার্থপ্রতিম বিশ্বাস ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমাদের বিপুল রেল পরিকাঠামো সুরক্ষিত রাখার পরিকল্পনা নেই কেন্দ্রের৷ পরিকল্পনা ছিটেফোঁটা থাকলেও তার জন্য অর্থ বরাদ্দ করা হয় না। শুধু ট্রেনের সংখ্যা বাড়ে, রেলপথ বাড়ে, কিন্তু সুরক্ষার বন্দোবস্ত সেই তিমিরেই থেকে যায়৷’’

রেল মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটি এর আগে বারবার করে সিগনালিং ব্যবস্থা আধুলিক করার সুপারিশ করেছে৷ পুরনো রেললাইন বদল করার কথা বলেছে৷ বিশেষজ্ঞরা বারবার বলেছেন, বুলেট ট্রেন আনার থেকে বর্তমান লাইন, সিগন্য়ালিং ও সুরক্ষা ব্যবস্তা অত্যাধুনিক করার দিকে নজর দেয়া দরকার৷ তাহলে রেলসুরক্ষা নিশ্চিত হবে, ট্রেনের গতি অনেকটাই বাড়বে। এই রেল দুর্ঘটনা দেখিয়ে দিচ্ছে, রেলযাত্রাকে সুরক্ষিত করতে এখনো অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে৷

ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি পায়েল সামন্ত৷
পায়েল সামন্ত ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি৷