কত বছরে টিকা দিতে পারবে বাংলাদেশ?
৭ জুন ২০২১সংসদে বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী দেশের ৮০ ভাগ মানুষকে টিকা দেয়ার কথার পাশাপাশি একটি রোডম্যাপও ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেছেন, প্রতি মাসে ২৫ লাখ মানুষকে টিকা দেয়া হবে। সর্বশেষ আদমশুমারি অনুযায়ী বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৫ কোটি ২৫ লাখ। তবে বাস্তবে এই জনসংখ্যা ১৭ কোটির বেশি হবে। সেই হিসাব ধরলে ১৭ কোটি জনসংখ্যা ৮০ ভাগ হলো ১৩ কোটি ৬০ লাখ। এখন এই এই জনগোষ্ঠীর ২৫ লাখকে যদি প্রতিমাসে টিকা দেয়া হয় তাহলে সবাইকে টিকা দিতে সাড়ে চার বছরেরও বেশি সময় লাগবে। আর এরমধ্যে যদি শিশুদের টিকা এসে যায় তাহলে শতভাগ নাগরিককেই টিকা দিতে হবে।
বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে টিকা দেয়া শুরু হয় ৭ ফেব্রুয়ারি। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে তিন কোটি ডোজ অক্সফোর্ডের টিকা পাওয়ার চুক্তিতে এটা করা হয়েছিল। কিন্তু এই টিকা দেয়া এখন বন্ধ আছে। তারা চুক্তি অনুযায়ী টিকা দেয়নি। তার দুই দফায় ৭০ লাখ ডোজ দেয়ার পর বন্ধ করে দেয়। আরো দেবে এমন কোনো নিশ্চয়তা এখনো পওয়া যায়নি। তবে এর বাইরে বাংলাদেশ ওই সময়ে উপহার হিসেবে ২০ লাখ, পরে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের সময় উপহার হিসেবে আরো ১২ লাখ ডোজ টিকা পায়। আর ভারতের সেনাপ্রধান দেন এক লাখ ডোজ।
সম্প্রতি চীনের কাছ থেকে উপহার পাওয়া গেছে সিনোভ্যাকের পাঁচ লাখ ডোজ। কোভ্যাক্স দিয়েছে এক লাখ ৬২০ ডোজ ফাইজরের টিকা। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ টিকা পেয়েছে এক কোটি ৫৪ লাখ ৬২০ ডোজ। দেশের ৮০ ভাগ মানুষকে টিকা দিতে হলে লাগবে ২৭ কোটি ২০ লাখ ডোজ।
সরকার চীন থেকে তিন কোটি টিকা আনছে। আরো ছয় লাখ উপহার হিসেবে পাওয়া যাবে। যদিও দাম প্রকাশ করায় তা নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। রাশিয়া থেকে এক কোটি ডোজ আনার চুক্তি হচ্ছে। আর যুক্তরাষ্ট্র থেকেও আনা হবে বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জনিয়েছেন। কোভ্যাক্স থেকে কম দামে তিন কোটি ডোজ টিকা পাওয়ার কথা আছে। সংসদে অবশ্য প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, স্থানীয়ভাবে টিকা উৎপাদন করা হবে। কিন্তু এখানকার গ্লোব বায়োটেক তাদের বঙ্গভ্যাক্সের হিউম্যান ট্রায়লের অনুমতি পায়নি এখনো। চীনের সঙ্গে যৌথ উৎপাদনের কথাও বলছে সরকার।
বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত অক্সফোর্ডের প্রথম ডোজের টিকা পেয়েছেন ৫৮ লাখ ২০ হাজার ১৫ জন। আর দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন ৪২ লাখ ১৬ হাজার ৯৯৬ জন। সব মিলিয়ে দেয়া হয়েছে এক কোটি ৩৬ হাজার ৭১১ ডোজ। অক্সফোর্ডের টিকা পাওয়া গেছে এক কোটি তিন লাখ ডোজ। এখন অক্সফোর্ডের টিকা হাতে আছে দুই লাখ ৬৩ হাজার ১৮৯ ডোজ। কিন্তু বাস্তবে আরো কম। কারণ কিছু টিকা নষ্ট হয়েছে।
চীনা টিকার ট্রায়াল শুরু হয়েছে। এ পর্যন্ত দুই হাজার ১৬২ জনকে দেয়া হয়েছে। আর স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন ১৩ জুনের পর ফাইজারের টিকা দেয়া শুরু হবে।
জনস্বাস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেনিন চৌধুরী মনে করেন,"এখন প্রতিমাসে এক কোটি লোককে টিকা দেয়া প্রয়োজন। কারণ টিকার কার্যকারিতা এক বছর। সেটা হলে এক বছরে সবাইকে টিকা দেয়া যাবে। কিন্তু ২৫ লাখ মানুষকে প্রতিমাসে টিকা দেয়া হলে অনন্তকাল ধরে দিতে হবে। কারণ এরইমধ্যে আবার পুরনোদের টিকা দিতে হবে।”
তিনি বলেন," যতই কথা হোক টিকা গণটিকা দেয়া কিন্তু থেমে গেছে। যে টিকা পাওয়ার কথা বলা হচ্ছে তা কবে আসবে তাও এখনো নিশ্চিত নয়। আসলে না কথায় সময় যাচ্ছে। টিকা আসছে না। কিন্তু এখনই গণটিকা শুরু করে এক বছরের মধ্যে শেষ করা দরকার।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন," এখন ভ্যাকসিন কূটনীতি আরো জোরদার করতে হবে। আমরা শুরুতে একটি দেশের সাথে চুক্তি করে এই কূটনীতিতে পিছিয়ে পড়েছি। আমাদের অদক্ষতাও প্রকাশ পেয়েছে। কিন্তু এখানে পড়ে থাকলে চলবে না। এক সময় টিকা অনেক পওয়া যাবে। এটা নিয়ে বাণিজ্যও হবে। কিন্তু আমাদের প্রয়োজন দ্রুত টিকা পাওয়া। বছরের পর বছর টিকা দিলে তো চলবে না।'' তার মতে এখন বাইরের দেশ থেকে টিকা আনার পাশাপাশি যৌথ উৎপাদন এবং দেশীয় প্রতিষ্ঠানের উৎপাদনে জোর দেয়া প্রয়োজন। অনেক দেশই যৌথ উৎপাদন শুরু করেছে।
এদিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সোমবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, চীনের উপহারের আরো ছয় লাখ টিকা ১৩ জুনে আসতে পারে। ফাইজারের টিকার ব্যবহারের উপাদান ডাইলুয়েন্ট সোমবার রাতের মধ্যে আসবে। চীনা ও ফাইজারের টিকা কার্যক্রম একসঙ্গে চলবে।
তিনি জানন, চীনের সাথে দেড় কোটি টিকার চুক্তি হয়েছে। আরো দেড় কোটি টিকার চুক্তি হচ্ছে।