1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কমলা হ্যারিস কি মোদীকে টক্কর দেবেন?

স্যমন্তক ঘোষ নতুন দিল্লি
১৯ আগস্ট ২০২০

কমলা হ্যারিস মোদীপন্থী ভারতীয়-মার্কিনদের চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছেন।

https://p.dw.com/p/3hB5Y
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Cahn

লড়াই ট্রাম্প বনাম বাইডেনের। কিন্তু মার্কিন নির্বাচনে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী কমলা হ্যারিস ভারতীয় মার্কিনিদের সামনে নরেন্দ্র মোদীকে একজন অন্যতম প্লেয়ার বানিয়ে দিলেন।

মার্কিন নির্বাচনে এশিয়ার ভোট যে গুরুত্বপূর্ণ তা ট্রাম্প, বাইডেন দু'জনেই জানেন। যে কারণে করোনা-কালের ঠিক আগে শেষ বিদেশ সফরে ভারতে এসেছিলেন ডনাল্ড ট্রাম্প। গুজরাতে নমস্তে ট্রাম্প অনুষ্ঠানে ভারতীয় মার্কিনিদের কাছে কার্যত ট্রাম্পের হয়ে ভোট ভিক্ষা করেছিলেন নরেন্দ্র মোদী। প্রকাশ্যেই। কিন্তু তার পরে বেশ কিছু মাস কেটে গিয়েছে। করোনা সংকটে ঝপঝপ করে কমেছে ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা। বাইডেনের সম্ভাবনা বেড়েছে। এই পর্যন্ত সব ঠিকই ছিল। কিন্তু জো বাইডেন ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে কমলা দেবী হ্যারিসকে সামনে নিয়ে আসায় অ্যাফ্রো-অ্যামেরিকান এবং ভারতীয় অ্যামেরিকানদের মধ্যে রীতিমতো ালোড়ন শুরু হয়ে গিয়েছে। ভোটের স্থিতিশীল অঙ্ক নয়ছয় হতে শুরু করেছে বলেই মনে করছেন কোনও কোনও বিশেষজ্ঞ।

Joe Biden und Kamala Harris USA Wahlen 2020
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Kaster

কমলা হ্যারিসের বাবা আফ্রিকান, মা ভারতীয়। চেন্নাইয়ের বিজ্ঞানী মার্কিন মুলুকে গিয়েছিলেন গবেষণার কাজে। তারপর সেখানেই থেকে যান, বিয়ে করেন এক আফ্রিকান মার্কিনিকে। কমলা তাঁদেরই সন্তান। তবে সাত বছর বয়সে বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ হয়ে যাওয়ার পরে দীর্ঘ সময় মায়ের কাছেই বড় হয়েছেন কমলা। একই সঙ্গে দেখেছেন, এশিয়ান এবং আফ্রিকানদের সঙ্গে শ্বেতাঙ্গ মার্কিনিদের একাংশের দুর্ব্যবহার। কমলা নিজেই বলেছেন, কোনো কোনো এলাকায় সকলের সঙ্গে খেলার সুযোগ পেতেন না তিনি আর তাঁর বোন। কারণ তাঁদের গায়ের রং আলাদা।

রাষ্ট্রবিজ্ঞান আর অর্থনীতিতে স্নাতক কমলা পরবর্তী কালে আইন নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। শুধু পড়েননি, আইনকে ব্যবহার করেছেন আন্দোলনের হাতিয়ার হিসেবে। বর্ণবাদের বিরুদ্ধে লড়াই তাঁর সেই কলেজ জীবন থেকেই। কলেজ রাজনীতিতে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হয়ে উঠেছিলেন তিনি। পরবর্তীকালে নানা আইনি লড়াই, নানা উত্থানপতনের মধ্য দিয়ে তিনি সেনেটর নির্বাচিত হন। বস্তুত, ডেমোক্র্যাট দলে জো বাইডেনের সঙ্গে তিনিও প্রেসিডেন্ট পদের জন্য লড়াই করেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দল বাইডেনকেই প্রেসিডেন্ট পদের জন্য নির্বাচন করে। তাঁকে ভাইস প্রেসিডেন্টের পদপ্রার্থী করা হয়।

USA Kamala Harris 1982
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Kamala Harris Campaign

কমলা-বাইডেন জুটি নির্বাচনে জিতলে অ্যামেরিকার ইতিহাসে নতুন অধ্যায় শুরু হবে। এই প্রথম কোনও এশীয় অ্যামেরিকান ভাইস প্রেসিডেন্ট হবেন। আর ঠিক সে জায়গাতেই ভারতীয়-মার্কিন ভোট ব্যাঙ্কে মোদী ফ্যাক্টর গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। অ্যামেরিকার ভোট রাজনীতি নিয়ে যথেষ্ট পড়াশোনা করেন আয়মান মুখোপাধ্যায় হাউসহ্যাম। এক সময় বারাক ওবামার নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিয়েছিলেন আয়মান। ডয়চে ভেলেকে তিনি জানিয়েছেন, ''মূলত দুই ধরনের ভারতীয়-মার্কিন বসবাস করেন অ্যামেরিকায়। একদল প্রগতিশীল, বামমনস্ক, লিবারাল। এই অংশের মানুষ মূলত ডেমোক্র্যাটপন্থী। ভারতে অবিজেপি শক্তির পক্ষে এঁরা কথা বলেন। অন্য দলটি হলো রক্ষণশীল গোষ্ঠী। ব্যবসায়ী শ্রেণির এই অংশটি রিপাবলিকানপন্থী। তাঁদের অধিকাংশ মানুষই ডনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থক। নরেন্দ্র মোদীর আবেদনে এই অংশটি সাড়া দিয়েছিল। বস্তুত, অ্যামেরিকায় মোদীর সভার আয়োজনও করেছিল এই অংশের মানুষ। মোদীর বিপুল জনপ্রিয়তা তাঁদের মধ্যে। তাঁরা মনে করেন, ট্রাম্প এবং মোদী বন্ধু। এবং এই বন্ধুত্বের জোরে ট্রাম্প ভারতে উন্নয়নমূলক কাজে সাহায্য করবেন।''

গুজরাতে ট্রাম্পের অনুষ্ঠানে মোদী যে ভোটভিক্ষা করেছিলেন, তাতে সাড়া দিয়েছিল এই অংশটি। কিন্তু কমলা হ্যারিস সামনে চলে আসায় ট্রাম্পের সেই ভোট ভাগ হয়ে যেতে পারে বলে মনে করছেন আয়মন। কারণ, ভারতীয় বংশোদ্ভূত কমলাকে নিয়ে ভারতীয়-মার্কিনদের মধ্যে উচ্ছাস তৈরি হয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, কমলা ক্ষমতায় এলে ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটবে। সকলেই তার সাক্ষী থাকতে চাইছেন।

Kamala Harris Familie Leben USA
ছবি: picture-alliance/dpa/Kamala Harris Campaign

পেশায় সাংবাদিক আরেক ভারতীয়-মার্কিন শুভঙ্কর মুখোপাধ্যায় আয়মনের সঙ্গে সম্পূর্ণ এক মত নন। তাঁর বক্তব্য, ভারতীয়-মার্কিন মধ্যে বিভাজন খুব পরিষ্কার। ভারতীয় ভোটদাতাদের মতো তাঁরা ভারতীয়-মার্কিনরাও দলকে ভোট দেন, প্রার্থীকে নয়। কমলা হ্যারিস এতদিন ভারতীয়-মার্কিনদের জন্য বিশেষ কিছু করেননি। কিন্তু অধিকাংশ ভারতীয় মার্কিনদের কাছে বর্ণবাদ খুব বড় বিষয়। ট্রাম্পের কারণে যা রীতিমতো বড় সমস্যায় পরিণত হয়েছে। সে জন্য ভারতীয়-মার্কিনরা ডেমোক্র্যাটদের দিকে ঝুঁকবেন।  সেই সুবিধাটা পাবেন কমলা। আর গুজরাটিরা মূলত ব্যবসায়ী। তাঁরা যে দিকে হাওয়া সেদিকেই ভোট দেন।

কুণাল চক্রবর্তী প্রায় তিন দশক অ্যামেরিকায় থাকেন। তাঁর মতে, কমলা আসলে এ বারের ভোটে গেম চেঞ্জারের ভূমিকা পালন করবেন। ট্রাম্প জামানায় গোটা অ্যামেরিকা জুড়েই বর্ণবাদ খুব বেড়ে গিয়েছে। প্রকারন্তরে ট্রাম্পের নীতি বর্ণবাদকে পুষ্টি জুগিয়েছে বলে তিনি মনে করেন। ডেমোক্র্যাটরা বর্ণবাদের বিরুদ্ধে কথা বললেও সেই জোর পাওয়া যাচ্ছিল না। কমলা হ্যারিস অ্যাফ্রো-অ্যামেরিকান এবং এশীয়-অ্যামেরিকানদের মধ্যে সেই ভরসাটি ফিরিয়ে আনতে পেরেছেন। ফলে তাঁকে নিয়ে কেবল ভারতীয়-অ্যামেরিকান নয়, বহু গোষ্ঠীই খুব উৎফুল্ল।

বস্তুত ভারতেও কমলাকে নিয়ে উচ্ছাস যথেষ্ট। চেন্নাইয়ে রাস্তায় রাস্তায় কমলার ছবি দেওয়া হোর্ডিং লেগেছে। দক্ষিণ ভারতে রীতিমতো আলোচনা হচ্ছে তাঁকে নিয়ে। এর প্রভাবও ভারতীয়-মার্কিনদের মানসিকতায় প্রভাব ফেলবে বলে অনেকে মনে করছেন।

ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি স্যমন্তক ঘোষ৷
স্যমন্তক ঘোষ ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি৷