1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কর না কালো টাকা, দুর্গাপুজো নিয়ে তরজা

১৮ আগস্ট ২০১৯

দুর্গাপুজো কমিটিগুলিকে আয়কর বিভাগের নোটিস পাঠানোকে কেন্দ্র করে পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক তরজা তুঙ্গে৷ তৃণমূলের অভিযোগ, বিজেপি পূজা বন্ধ করে দিতে চায়৷ বিজেপির বক্তব্য, দুর্নীতির টাকা পূজায় খরচ হয় বলে হিসেব চেয়েছে আয়কর বিভাগ৷

https://p.dw.com/p/3O5A5
Indien Kolkatta Protest gegen Steuern
ছবি: DW/Payel Samanta

দুর্গাপুজো কমিটিগুলিকে আয়কর বিভাগের নোটিস পাঠানোকে কেন্দ্র করে পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক তরজা তুঙ্গে৷ তৃণমূলের অভিযোগ, বিজেপি পূজা বন্ধ করে দিতে চায়৷ বিজেপির বক্তব্য, দুর্নীতির টাকা পূজায় খরচ হয় বলে হিসেব চেয়েছে আয়কর বিভাগ৷

পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপুজোর কাউন্টডাউন শুরু হয়ে গিয়েছে৷ প্রতিমা ও মণ্ডপ নির্মাণের কাজ চলছে৷ সেই উৎসবে রাজনীতির আঁচ লেগেছিল আগেও৷ ফের পূজা ঘিরে রাজনৈতিক টানাপোড়েন রাজ্যে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস ও কেন্দ্রের শাসক বিজেপির মধ্যে৷ গত লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে এই বিরোধের ভূমিকা করে গিয়েছিলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী৷ দুজনই অভিযোগ তুলেছিলেন, পশ্চিমবঙ্গে দুর্গাপূজা করতে দিচ্ছে না তৃণমূল৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পাল্টা প্রশ্ন তুলেছিলেন, এই বাংলায় যে ৩০ হাজার দুর্গাপূজা হয়, সেটা কি বিজেপি করে?

এই বিরোধ নয়া মাত্রা নিয়েছে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের অধীন আয়কর বিভাগের নির্দেশে৷ তারা কলকাতার বড় বড় পূজা কমিটিকে নোটিস পাঠিয়ে তাদের খরচের হিসেব দিতে বলেছে৷ মুখ্যমন্ত্রী এ বিষয়ে ট্যুইট করে বলেন, ‘আয়কর বিভাগ অনেক পূজা কমিটিকে কর দেওয়ার জন্য নোটিস পাঠিয়েছে৷ আমরা আমাদের জাতীয় উৎসব  নিয়ে গর্ব করি৷ কোনো পূজাতে ট্যাক্স বসানো হোক আমি চাই না৷ এটা সংগঠকদের উপর বাড়তি বোঝা হবে৷ তাই দুর্গাপূজা কমিটির উপর কোনো ট্যাক্স বসানো চলবে না৷’’

পশ্চিমবঙ্গে দুর্গাপূজা নিছক আর উৎসবে সীমাবদ্ধ নেই৷ একে ঘিরে কলকাতা-সহ জেলার বিভিন্ন শহরে বিপুল আয়োজন হয়৷ লেনদেন হয় কোটি কোটি টাকার৷ প্রতিমা, মণ্ডপ, আলোকশিল্পী থেকে শুরু করে সাধারণ ব্যবসায়ীরাও পূজার মরশুমের দিকে তাকিয়ে থাকেন৷ কেন্দ্রের আয়কর বিভাগ সরাসরি পূজার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তি যেমন প্রতিমা শিল্পী, মণ্ডপ নির্মাতা, আলোর ব্যবস্থাপক, পুরোহিত, ঢাকীদের কাছ থেকে টিডিএস (ট্যাক্স ডিডাকটেড অ্যাট সোর্স) আদায় করতে বলেছে৷ অর্থাৎ, এঁদের যখন প্রাপ্য টাকা দেওয়া হবে, তখন পূজা কমিটিকেই টিডিএস কেটে নিতে হবে৷ সেই হিসেব দেওয়ার দায় বর্তাবে কমিটির উপর৷ আয়কর বিভাগের এই নোটিসের মধ্যে অন্যায় কিছু দেখছেন না বিজেপি নেতারা৷ রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘তৃণমূল বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থার মাধ্যমে যে বিপুল টাকা আত্মসাৎ করেছে, সেই টাকায় অনেক পূজা কমিটি ফুলেফেঁপে উঠেছে, উৎসবের চাকচিক্য অনেক বেড়ে গিয়েছে৷ কালো টাকাকে সাদা করার চেষ্টা হচ্ছে পুজোর মাধ্যমে৷ যদি আইনি পথে সব খরচ হয়, তাহলে হিসেব দিতে আপত্তি কিসের?'' মুখ্যমন্ত্রীর পূজা বন্ধের চক্রান্তের অভিযোগে তিনি বলেন, ‘‘দুর্গাপূজার বিসর্জনের জন্য অনুমতি আদায় করতে হাইকোর্টে মামলা করতে হয়েছিল ওঁর আমলে৷ পূজা উনি সুষ্ঠু ভাবে হতে দিলে কি তা করতে হত?''

পুজো বন্ধের চক্রান্ত করছে: কাকলি ঘোষদস্তিদার

আয়কর নোটিসের বিরুদ্ধে তৃণমূলের শাখা সংগঠন বঙ্গজননী ব্রিগেড আন্দোলনে নেমেছে৷ তারা এ সপ্তাহে কলকাতার রাস্তায় ধরনায় বসেছিল৷ সেখান থেকে বিজেপিকে আক্রমণ করেন তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীরা৷ তৃণমূল সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদার বলেন, ‘‘কমিটি পূজার আয়োজন করবে না ট্যাক্স দেবে৷ বিজেপিই বলেছিল, আমরা নাকি পূজা করতে দিই না৷ এখন কারা পুজো বন্ধের চক্রান্ত করছে৷ এটা বাঙালি সংস্কৃতির উপর আঘাত, ধর্মের উপর আঘাত৷ কোনো কমিটি ট্যাক্স দেবে না৷''

এই বিতর্কের পরিপ্রেক্ষিতে আয়কর বিভাগ একটি প্রেস বিবৃতি জারি করে জানিয়েছে, কর দেওয়ার জন্য কমিটিগুলিকে কোনো নোটিস পাঠানো হয়নি৷ এ সম্পর্কে অসত্য প্রচার করা হচ্ছে৷ যে সব ঠিকাদার সংস্থা পূজা থেকে আয় করে তারা কর ফাঁকি দিচ্ছে৷ সে কারণে তাদের দেওয়া টাকা থেকে আগাম কর আদায়ের কথা বলা হয়েছে৷ এই ব্যাখ্যায় তরজা অবশ্য থামছে না৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রের সিদ্ধান্তকে ‘পূজা জিজিয়া কর' বলে তকমা দিয়েছেন৷ বিজেপি নেতারা পাল্টা বলছেন, লোকসভা ভোটে ধাক্কা খেয়ে অতীতে বিসর্জন স্থগিত করে দেওয়া তৃণমূল এখন পূজার পক্ষে সওয়াল করার সুযোগ খুঁজছে৷

 

ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি পায়েল সামন্ত৷
পায়েল সামন্ত ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি৷