করোনা মোকাবিলায় জার্মানিতে এমার্জেন্সি ব্রেক
১৩ এপ্রিল ২০২১দেশজুড়ে মারাত্মক সংকটের মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে জার্মান চ্যান্সেলারের ক্ষমতা যে কতটা সীমিত, গত প্রায় এক বছর ধরে তা স্পষ্ট হয়ে গেছে৷ ১৬টি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে ঐকমত্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত করোনা ভাইরাসের প্রকোপ থামাতে পারেনি৷ একাধিক মুখ্যমন্ত্রী বার বার সম্মিলিত সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে নিজস্ব ‘সমাধানসূত্র' বেছে নিয়েছেন৷ ফলে দেশজুড়ে বিভ্রান্তি ও ক্ষোভ বেড়ে চলেছে৷ সংকট মোকাবিলার ক্ষেত্রে রাজনীতির উপর আস্থাও কমে যাচ্ছে৷ তাই ‘তৃতীয় ঢেউ' সত্ত্বেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আঙ্গেলা ম্যার্কেল নিজের হুমকি অনুযায়ী ফেডারেল সরকারের ক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিচ্ছেন৷ সংক্রমণ প্রতিরোধ সংক্রান্ত আইন সংশোধন করে কিছু ক্ষেত্রে দেশজুড়ে একই বাধ্যতামূলক বিধিনিয়ম চালু করার পথে এগোচ্ছেন তিনি৷ দেশজুড়ে এমন স্পষ্ট ‘এমারজেন্সি ব্রেক' জনসাধারণের কাছেও অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য হবে বলে সরকার আশা করছে৷
আইনি সংশোধনের খসড়া চূড়ান্ত করে মন্ত্রিসভা, সংসদের উভয় কক্ষ ও প্রেসিডেন্টের দ্রুত অনুমোদনের পথে এগোচ্ছে ম্যার্কেলের সরকার৷ মঙ্গলবারই মন্ত্রিসভা খসড়া অনুমোদন করছে৷ নতুন এক অনুচ্ছেদ যোগ করে ফেডারেল সরকারের হাতে বিশেষ ক্ষমতা আনা হচ্ছে৷ এর আওতায় মহামারির সময় প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে সাপ্তাহিক গড় সংক্রমণের হার ১০০ পেরিয়ে গেলেই স্থানীয়, আঞ্চলিক ও রাজ্য স্তরের প্রশাসনকে ফেডারেল নিয়ম মানতে হবে৷ অর্থাৎ ‘একলা চলো রে' নীতি গ্রহণের ক্ষমতা আর থাকবে না৷
এমন পরিবর্তনের ক্ষেত্রেও রাজ্য সরকারগুলির মতামতকে গুরুত্ব দিতে হচ্ছে৷ কারণ সংসদের উচ্চ কক্ষে আইনি সংশোধনী অনুমোদন করাতে হলে তাদের সমর্থনের প্রয়োজন৷ অতএব যতটা সম্ভব ঐকমত্যের ভিত্তিতে নতুন নিয়মের খসড়া স্থির করা হচ্ছে৷ বিশেষ করে রাতে কারফিউ জারি করার প্রশ্নে মতপার্থক্য দেখা যাচ্ছে৷ এ ছাড়া মানুষের মধ্যে যোগাযোগ যতটা সম্ভব কমানোর নানা উপায় নিয়ে তর্কবিতর্ক চলছে৷ তবে মুখ্যমন্ত্রীরাও বর্তমান কাঠামোর দুর্বলতা স্বীকার করে জাতীয় স্তরে স্পষ্ট ও বাধ্যতামূলক বিধিনিয়মের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে মনে করছেন৷
জার্মানিতে করোনা সংকট শুরু হবার পর থেকে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক স্তরে যোগাযোগের উপর একাধিক নিষেধাজ্ঞা চাপানো হলেও কর্মক্ষেত্রে তেমন কড়াকড়ি চালু করা হয় নি বলে বিভিন্ন মহলে অভিযোগ উঠছে৷ প্রতিষ্ঠানগুলির উদ্দেশ্যে কর্মীদের জন্য যতটা সম্ভব ‘হোম অফিস' বা বাসায় কাজের সুযোগ করে দেবার আবেদন জানানো হলেও কোনো বাধ্যতামূলক নিয়ম চালু হয় নি৷ করোনা পরীক্ষার প্রশ্নেও এতকাল আবেদন-নিবেদনের আশ্রয় নেওয়া হয়েছে৷ এবার আইন সংশোধনের সময় কর্মদাতাদের জন্যও বেশ কিছু বাধ্যতামূলক নিয়ম চালু করা হবে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে৷ তবে অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, এমন কেন্দ্রীভূত ক্ষমতা প্রয়োগ করতে জার্মানি বেশ দেরি করে ফেলেছে৷ ফলে করোনা পরিস্থিতির আরও অবনতি রোখা এখনই সম্ভব হবে না৷
এসবি/কেএম (ডিপিএ, রয়টার্স)