1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

করোনায় নির্বাচনে অসুবিধা নেই ইসির!

২৫ জানুয়ারি ২০২২

দেশে করোনা বিশেষ করে নতুন ধরন ওমিক্রন সংক্রমণের জ্যামিতিক ঊর্ধ্বগতির মধ্যেই ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে অনঢ় নির্বাচন কমিশন৷ তারা বলছে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে করোনা সংক্রমণ তেমন নেই৷ তাই নির্বাচনে অসুবিধা নেই৷

https://p.dw.com/p/463dC
১৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনের একটি চিত্রছবি: bdnews24.com

আগামী ৩১ জানুয়ারি ষষ্ঠ ধাপে দেশের ২১৯টি ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচনে ভোট নেয়া হবে৷ শেষ সময়ে এখন ওইসব এলাকায় প্রচার প্রচারণা তুঙ্গে৷ নির্বাচন কমিশন স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব কিছু করার নির্দেশ দেয়ার কথা বললেও বাস্তবে স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো বালাই নেই বলে স্থানীয় পর্যায় থেকে জানা গেছে৷ আর নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনেও তা দেখা গেছে৷ করোনার বিধিনিষেধের মধ্যেই নির্বাচন হলেও বাস্তবে কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না৷ সামাজিক দূরত্ব, মাস্ক এসব ছিলো বিরল৷

সরকার যে ১১ দফা বিধিনিষেধ দিয়েছে তাকে প্রকাশ্যে কোনো সভা সমাবেশ নিষিদ্ধ৷ ঘরোয়া অনুষ্ঠানেও সর্বোচ্চ ১০০ জনের বেশি উপস্থিতি না করা হয়েছে৷ কিন্তু ইউপি নির্বাচনে শত শত কর্মী সমর্থক নিয়ে প্রার্থীরা প্রচার চালাচ্ছেন৷ সভা-সমাবেশ করছেন৷ স্থানীয় প্রশাসনও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেনা৷

নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম দাবি করেন, ‘‘গন্ডগ্রামে নির্বাচন হচ্ছে৷ আমার জানামতে সেসব এলাকায় করোনার কোনো হটস্পট নাই৷ ঢাকা শহরে একজন দাঁড়ালে সেখানে শত লোক ভিড় করে৷ গ্রামে সেরকম না৷ আমরা সরকারের যে নির্দেশনা আছে সেটা মেনে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করেই নির্বাচনের আয়োজন করছি৷’’

স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে কিনা তা মনিটরিং করা নির্বাচন কশিমনের পক্ষে সম্ভব নয়: রফিকুল ইসলাম

তার মতে, এই নির্বাচন কশিনের মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে৷ এখন যদি নির্বাচন বন্ধ করা হয় তাহলে জট তৈরি হবে৷ নতুন কমিশন আসার পর নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে সময় লাগবে৷

তার কথা, ‘‘ওইসব এলাকায় স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে কী না তা মনিটরিং করা নির্বাচন কশিমনের পক্ষে সম্ভব নয়৷ আমরা মানতে বলেছি৷ দেখার দায়িত্বে প্রশাসন আছে তারা দেখবে৷’’

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশের বাস্তবতার সাথে জার্মানি বা ইউরোপের বাস্তবতা মিলালে চলবে না৷ এই করোনার মধ্যেও ভারতে পৌরসভা নির্বাচন হয়েছে৷ প্রাদেশিক নির্বাচনের তফসিল দেয়া হয়েছে৷’’

ভোট দিতে গেলে ভোটারদের করোনার টিকার সার্টিফিকেট লাগবে কি না প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশের সব মানুষকে তো করোনার টিকা দেয়া যায়নি এখনো৷ আর ভোট তো সাংবিধানিক অধিকার৷ ফলে ভোট দিতে করেনার টিকা দেয়ার সার্টিফিকেট বাধ্যতামূলক করা হলে সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘন হবে৷’’

নির্বাচন কমিশনের যুগ্ম সচিব এস এম আসাদুজ্জামান জানান, ‘‘আমরা একটা গাইডলাইন তৈরি করেছি৷ সেই গাইডলাইন অনুযায়ী মাস্ক পরে ভোট কেন্দ্রে আসতে হবে৷ সামাজিক দূরত্ব মানতে হবে৷ ভোট কেন্দ্রের বাইরে ও ভেতরে হ্যান্ড স্যানিটাইজার থাকবে৷ কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাই এগুলো দেখবেন৷ আলাদা কোনো টিম থাকবে না৷ কোনো মেডিকেল টিমও থাকবে না৷’’

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে দাবি করেন, ‘‘আমাদের সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত যোগাযোগ আছে৷ যেসব এলাকায় নির্বাচন হচ্ছে তার কোনো জায়গায় যদি করোনার হটস্পট হয় তাহলে তারা আমাদের জানাবে৷ তখন আমরা ব্যবস্থা নেব৷ প্রথম ধাপের নির্বাচনের সময় আমরা কিছু এলকায় নির্বাচন বন্ধ করেছিলাম৷’’

আমরা বলেছিলাম নির্বাচনটা স্থগিত করা হোক: অধ্যাপক ডা. মোহম্মদ শহীদুল্লাহ

এ নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কোনো বক্তব্য মঙ্গলবার জানা যায়নি৷ তবে করোনা সংক্রান্ত জাতীয় পরামর্শক কমিটির প্রধান অধ্যাপক ডা. মোহম্মদ শহীদুল্লাহ জানান, ‘‘আমরা বলেছিলাম নির্বাচনটা স্থগিত করা হোক৷ সেটাই সবচেয়ে ভালো হোত৷ যেহতু বন্ধ করা হয়নি এখন যদি স্বাস্থ্যবিধিও না মানা হয় তাহলে ওইসব এলাকার পরিস্থিতি খুবই খারাপ হবে৷’’

সরকারের ১১ দফা নির্দেশনা নিয়ে তিনি বলেন, ‘‘নির্দেশনা তো ঠিকই আছে৷ কিন্তু কার্যকর হচ্ছে না৷ একটা কাজ ভালো কাজ হয়েছে সরকারি অফিসে অর্ধেক জনবল অফিসে এবং অর্ধেক হোম অফিস কার্যকর হয়েছে৷ আর কোথাও তেমন দেখছি না৷’’

তার মতে, গণপরিবহণ, হোটেল রেস্তোরাঁ, শপিং মল, সভা-সমাবেশ এসব জায়গায় স্বাস্থ্যবিধি কার্যকর করতে হবে৷ সরকারের ম্যাকনিজম আছে তার বাইরেও কমিউনিটিকে সম্পৃক্ত করে স্বাস্থ্যবিধি কার্যকর করতে হবে৷ মাস্ক পরাতে হবে৷ টিকা দ্রুত দিতে হবে৷

বাংলাদেশে করোনার সংক্রমণ এখন জ্যামিতিক হারে বাড়ছে৷ ২৪ ঘণ্টায় সংক্রমণের হার ৩২.৪ ভাগে দাঁড়িয়েছে৷ এপর্যন্ত গড় সংক্রমণ হার ১৪.০৫ ভাগ৷ ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন ১৬ হাজার ৩৩ জন৷ মারা গেছেন ১৮ জন৷

দেশে ইউনিয়ন পরিষদের সংখ্যা চার হাজার ৫৭৪টি৷ সব মিলিয়ে আট ধাপে চার হাজার ১৩৮টি ইউনিয়নে ভোটের ব্যবস্থা করেছে ইসি৷ এরইমধ্যে তিন হাজার ৭৭৩টি ইউনিয়নে ভোট শেষ হয়েছে৷ ষষ্ঠ ধাপে ৩১ জানুয়ারি ২১৯ ইউপিতে, সপ্তম ধাপে ৭ ফেব্রুয়ারি ১৩৮ ইউপিতে এবং অষ্টম ধাপে ১০ ফেব্রুয়ারি আট ইউপিতে ভোট হবে৷