1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

করোনায় সিদ্ধান্ত নেন আমলারা

১২ জুন ২০২০

করোনা প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশে চিকিৎসকদের গুরুত্ব নেই৷ গুরুত্বপূর্ণ হলেন আমলারা৷

https://p.dw.com/p/3dfXN
করোনা প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশে চিকিৎসকদের গুরুত্ব নেই
পরীক্ষার জন্য ঢাকার একটি টেস্টিং সেন্টারের সামনে মানুষের অপেক্ষা৷ ছবি: Reuters/M.P. Hossain

বাংলাদেশে শুরু থেকেই করোনা চিকিৎসা এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে কোনো ‘এপিডেমিক প্রজেকশন মডেল’ তৈরি করা হয়নি৷ ফলে জানা নেই কত আক্রান্ত হতে পারে, কতগুলো হাসাপতাল লাগবে, কত বেড লাগবে, কতগুলো আইসিইউ বেড লাগবে, লাগবে কতগুলো টেস্টিং সেন্টার৷

সাধারণ ছুটি দিয়ে কী হবে, কোথায় লকডাউন লাগবে, কেন লাগবে তাও বৈজ্ঞানিকভাবে ঠিক করা হয়নি৷ ফলে করোনার বিরুদ্ধে সামনে থেকে বাংলাদেশ কোনো প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারেনি৷ তাই এখন করোনার পেছনে দৌড়াচ্ছে বাংলাদেশ৷

সাধারণ ছুটির নামে প্রায় দুই মাস বাংলাদেশে নানা পরীক্ষা চলেছে৷ পোশাক শ্রমিকদের একবার বাড়ি পাঠানো হয়েছে আবার ঢাকায় আনা হয়েছে৷ তখন গণপরিবহন আবার বন্ধ ছিল৷ ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি বাড়িয়ে বাড়িয়ে ৩০ মে পর্যন্ত চালানো হয়েছে৷ এরপর সব কিছু খুলে দেয়া হলো৷ বলা হলো সীমিত পরিসরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব কিছু চলবে৷ আগেই ঈদে বাংলাদেশের সব দোকানপাট, শপিংমল খুলে দেয়া হলো৷ এখন সারাদেশে সব কিছু খোলা৷ লঞ্চে, গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্বের কথা বলা হলেও বাস্তবে তার কোনো বালাই নেই৷

আর সবশেষ শুরু হয়েছে জোনিং পদ্ধতি৷ পুরো বাংলাদেশকে লাল, হলুদ আর সবুজ রঙে ভাগ করা হয়েছে৷ লাখে ৩০-এর বেশি আক্রান্ত হলে লাল, ৩০-এর কম হলে হলুদ আর করোনা রোগী না থাকলে সবুজ৷ রেড জোন লকডাউন শুরু হয়েছে পরীক্ষামূলকভাবে৷ তাও একটি এলাকা, ঢাকার পূর্ব রাজাবাজার ২৭ নাম্বার ওয়ার্ড দিয়ে৷
করোনায় প্রায় ৩ মাস পর এক হাজারের বেশি মৃত্যু আর প্রায় ৮০ হাজার আক্রান্ত নিয়ে বাংলাদেশ এখনো পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যে আছে৷

ড. লেনিন চৌধুরী

কত কমিটি, কাজ কী?
কোভিড-১৯ নিয়ে ‘ন্যাশনাল কমিটি ফর প্রিভেনশন অ্যান্ড কন্ট্রোল অব কোভিড’-এর প্রধান স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক৷ করোনা নিয়ে এটিই সর্বোচ্চ কমিটি৷ পোশাক কারখানা চালু করা, মসজিদ খুলে দেয়া, সাধারণ ছুটি বাতিল করাসহ আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত তাকে ছাড়াই হয়েছে বলে তার দাবি৷ সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বারবার বলেছেন, ‘‘আমি জানি না৷’’ তাই স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে জানেন কে? সিদ্ধান্ত কারা নেন?

এই সর্বোচচ জাতীয় কমিটির সদস্য সংখ্যা ২৬ জন৷ কমিটিতে প্রথম ২০ জনের মধ্যে কোনো চিকিৎসক নেই৷ 

আরেকটি কমিটির নাম ‘ন্যাশনাল কো-অর্ডিনেশন কমিটি ফর প্রিভেনশন অ্যান্ড কন্ট্রোল অব কোভিড-১৯’ ৷ কমিটির প্রধান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক৷ কমিটির উপদেষ্টা মেডিসিন বিশেষজ্ঞ এবং প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ৷ তিনি বলেন, ‘‘আমাকে তো কখনোই মিটিংয়ে ডাকেনি৷ নাম দিয়ে রেখেছে৷ এই কমিটির কোনো কাজ আছে বলে আমার মনে হয় না৷ আর স্বাস্থ্যমন্ত্রী অনেক সিদ্ধান্ত কেন জানেন না তা তিনিই ভালো বলতে পারবেন৷’’

এরকম মোট ৯টি কমিটি আছে৷ তার মধ্যে জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির প্রধান হলেন বিএমডিসির প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ৷ তিনি একজন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ৷ এই কমিটির পরমর্শও মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে৷ তারা ৩১ মে থেকে সাধারণ ছুটি বাতিল করে সব কিছু খুলে দেয়ার বিরোধিতা করেছিলেন৷ তারা জোনিংয়ের প্রস্তাবও আগেই দিয়েছিলেন৷ আর এখন যে পরীক্ষমূলক জোনিং করা হচ্ছে তারা এটাকে বড় এলাকা ধরে করার পক্ষে৷ কিন্তু তা হচ্ছে না৷

নেতা-নেত্রীদের তুষ্ট করা?

গণস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং প্রিভেন্টিভ মেডিসিনের চিকিৎসক ড. লেনিন চৌধুরী বলেন, ‘‘কোভিড প্রতিরোধ ব্যবস্থায় নেতৃত্ব দেয়ার কথা জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং সংক্রামক রোগতত্ত্ববিদদের৷ আর আগেই ‘এপিডেমিক প্রজেকশন মডেল' তৈরি করা অত্যাবশ্যক ছিল৷ কিন্তু তা হয়নি৷ জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির প্রধান একজন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ৷ কোনো এলাকা লকডাউন হয় প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে৷’’

ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে৷ আইইডিসিআর মাত্র  দুই হাজার টেস্টিং কিট এবং দিনে একশ'রও কম পরীক্ষা করে ফেব্রুয়ারি মাসে বলল আমরা করোনা মোকাবেলায় প্রস্তুত৷ কিন্তু করোনা প্রতিরোধের মূল কথা হলো কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং, টেস্টিং এন্ড ট্রিটমেন্ট৷ আসলে নেতা-নেত্রী তুষ্ট করা ছাড়া করোনার জন্য কার্যকর কোনো কাজ হয়নি বলে মনে করেন তিনি৷

বাংলাদেশে প্রথম করোনা শনাক্ত হয় ৮ মার্চ৷ আর করোনায় প্রথম মৃত্যু হয় ১৮ মার্চ৷ ২৬ মার্চ যখন সাধারণ ছুটি শুরু হওয়ার আগের দিন ২৫ মার্চ পর্যন্ত মোট করোনা আক্রান্ত ছিলেন ৩৯ জন, মারা গেছেন পাঁচ জন৷

ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী

কাণ্ডজ্ঞানহীন কাজ

কোনো কোনো চিকিৎসক নেতা প্রকাশ্যেই টেলিভিশন টকশো-তে বলেছেন, বাংলাদেশে করোনা আসাবে না৷ রাজনৈতিক নেতা বলেছেন, চীনের চেয়েও আমরা দ্রুত হাসপাতাল বানাতে পারি৷ আবার কেউ বলেছেন, আমরা করোনার চেয়ে বেশি শক্তিশালী৷ কিছু ধর্মীয় বক্তা বলেছেন, করোনা বাংলাদেশের মুসলমানদের আক্রমণ করবে না৷

করোনা প্রতিরোধে সার্বিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার দিকে না গিয়ে জোর দেয়া হয়েছে বিভিন্ন পেশার মানুষের আলাদা আলাদা হাসপাতালে চিকিৎসার৷ ভিআইপিদের চিকিৎসার জন্য আলাদা হাসাপতালের প্রস্তাবও করা হয়েছিল৷ আর করোনায় আক্রান্ত হলে বিশেষ কয়েকটি পেশার মানুষকে আর্থিক প্রণোদনার ঘোষণা এক ধরনের অসাম্য তৈরি করে৷

উহান থেকে শিক্ষা না নেয়া

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী বলেন, ‘‘আমি জানি না বললেই স্বাস্থ্যমন্ত্রী দায় এড়াতে পারেননা৷ আসলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কোনো প্রস্তুতিই নেয়নি সময়মতো৷ তারা হয়ত করোনা মহামারিকে বুঝতেই সক্ষম ছিলেন না৷ যদি বুঝতে পারতেন তাহলে ডিসি, এসপি লকডাউন করেন কিভাবে? তারা কি এটার মানে এবং উদ্দেশ্য বোঝেন? কোভিড নিয়ে চরম সমন্বয়হীনতার কারণেই এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে৷’’

‘‘উহান থেকে তারা আদৌ কোনো শিক্ষা নেয়নি৷ তারা মনে করেছেন, উহানের চেয়ে তাদের জ্ঞান বেশি’’, বললেন এই চিকিৎসক নেতা৷

প্রিয় পাঠক, আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷

 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান