1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কলকাতায় সরকারি কার্নিভাল বনাম দ্রোহের কার্নিভাল

পায়েল সামন্ত কলকাতা
১৫ অক্টোবর ২০২৪

উৎসবের শেষে কলকাতায় জোড়া কার্নিভাল। প্রতিমার শোভাযাত্রার পাশাপাশি 'দ্রোহের কার্নিভাল' চিকিৎসক সংগঠনের। এই কর্মসূচি রুখতে পুলিশ জারি করেছে কড়া নির্দেশিকা।

https://p.dw.com/p/4lnJK
কলকাতায় পুজোর কার্নিভাল, ২০১৯ সালের ছবি।
কলকাতায় এবার সরকারি পুজো কার্নিভালের পাশাপাশি চিকিৎসকদের দ্রোহের কার্নিভাল হবে। ছবি: DW/S. Bandopadhyay

প্রতি বছরের মতো এবারও রেড রোডে রাজ্য সরকার আয়োজন করেছে পুজোর কার্নিভালের। অনুষ্ঠানে থাকবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর জি কর হাসপাতালে চিকিৎসক খুনকে ঘিরে প্রতিবাদের আবহে এবারের কার্নিভাল।

চিকিৎসকদের বিদ্রোহ

মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে চারটেয় শুরু হবে পুজো কার্নিভাল। রেড রোডে শোভাযাত্রা যখন চলবে, সেই সময় 'দ্রোহের কার্নিভাল' করতে চান চিকিৎসকরা। এই কর্মসূচি নিয়েছে জয়েন্ট প্লাটফর্ম অফ ডক্টরস। একই সঙ্গে রানি রাসমণি রোডে মানববন্ধনের ডাক দিয়েছেন আন্দোলনকারী ডাক্তাররা। 

পুলিশ চিকিৎসকদের কর্মসূচির অনুমতি দেয়নি। বরং 'দ্রোহের কার্নিভাল' ঠেকাতে কড়া পদক্ষেপ নিয়েছে লালবাজার। কলকাতা পুলিশ ধর্মতলা লাগোয়া এলাকায় ন্যায় সংহিতার ১৬৩ ধারা(আগে বলা হতো ১৪৪ ধারা) জারি করেছে।

লালবাজারের নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, কোন কোন রাস্তায় এই ধারা জারি থাকবে। পূর্বে ডোরিনা ক্রসিং থেকে পশ্চিমে নেতাজি মূর্তি পর্যন্ত। উত্তরে হাওড়া মেট্রোর গ্রিন চ্যানেল এবং রানি রাসমণি পার্ক থেকে দক্ষিণে সেন্ট্রাল বাস টার্মিনাস এবং ভবানীপুর তাঁবু পর্যন্ত  জমায়েত করা যাবে না। 

এর পাশাপাশি পূর্বে মেট্রো চ্যানেলের পুলিশ ফাঁড়ির পিছন দিক থেকে জওহরলাল নেহরু রোডের ধার বরাবর ডোরিনা ক্রসিং পর্যন্তও ১৬৩ ধারা জারি থাকবে। উত্তরে এসপ্ল্যানেড রো পূর্ব থেকে দক্ষিণে রানি রাসমণি এভিনিউ পর্যন্ত জমায়েত করা যাবে না। 

সোমবার জারি করা নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, প্রেস ক্লাব লাগোয়া ফুটপাথ, মেয়ো রোড, আউটরাম রোড, কেপি রোড, রেড রোড, ডাফরিন রোড, স্ট্র্যান্ড রোডে পাঁচজনের বেশি জমায়েত করা যাবে না।

এই নির্দেশিকা অনুযায়ী মঙ্গলবার সকাল থেকে ধর্মতলা লাগোয়া এলাকা কার্যত দুর্গে পরিণত হয়েছে। রাস্তার মোড়ে মোড়ে বসেছে গার্ডরেল। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেশি সংখ্যায় পুলিশ মোতায়েন করা হচ্ছে।

আদালতের নির্দেশ

কলকাতার একটি মণ্ডপে বিচারের দাবিতে স্লোগান দেয়ায় নয়জনকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু হয়। নিম্ন আদালতে তাদের পুলিশি হেফাজত হলেও হাইকোর্ট ধৃতদের জামিন মঞ্জুর করে।

কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি শম্পা সরকার একইসঙ্গে নির্দেশ দেন, রাজ্যের পুজো কার্নিভালে সমস্যা তৈরি করা যাবে না। এই নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ এদিন প্রতিবাদ রুখতে কড়া ব্যবস্থা নিয়েছে। 

আন্দোলনকারী জুনিয়র চিকিৎসক অর্ণব তালুকদার ডিডাব্লিউ কে বলেন, ''আমরা আদালতের নির্দেশ মেনে মানববন্ধনের কর্মসূচি নিয়েছি। এই কর্মসূচির পোস্টারে লেখা হয়েছে, পুজো কার্নিভালে বাধা সৃষ্টি করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। রাস্তার একপাশে মানববন্ধন হবে। এতে কার্নিভাল কেন, যান চলাচলেও বাধা তৈরি হবে না।"

পুলিশের ১৬৩ ধারা জারির বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন চিকিৎসকরা। মঙ্গলবার সকালে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতিকে ইমেইল করে দ্রুত শুনানির আবেদন জানানো হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে এদিন দুপুরে শুনানির জন্য বিশেষ বেঞ্চ গঠন করেছে হাইকোর্ট। বিচারপতি রবি কিষেন কাপুরের বেঞ্চে শুনানি হবে।

সুপ্রিম কোর্টে আর জি কর মামলার শুনানি হচ্ছে। পর্যবেক্ষণে প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় আগেই বলেছেন, কোনো শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে রাজ্য তাদের ক্ষমতা ব্যবহার করে রুখতে পারবে না। জুনিয়র চিকিৎসকদের আইনজীবীদের দাবি, ১৬৩ ধারা জারি শীর্ষ আদালতের নির্দেশের বিরোধী।

সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়েই এই আন্দোলন: কৌশিক

'দ্রোহের কার্নিভাল' এর অন্যতম উদ্যোক্তা, ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরামের সভাপতি কৌশিক চাকি বলেন, "উৎসবের কার্নিভাল করা যেমন গণতান্ত্রিক অধিকার, শোকের কার্নিভালও তাই। আমরা পুজোর শোভাযাত্রায় বিঘ্ন ঘটাতে চাই না, সেখান থেকে দূরে আমাদের কর্মসূচি।"

অনশনের ১১ দিন

ধর্মতলায় জুনিয়র চিকিৎসকদের অনশন মঙ্গলবার ১১ দিনে পড়েছে। কলকাতার পাশাপাশি উত্তরবঙ্গে অনশনে বসেছেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। সবমিলিয়ে পাঁচজন চিকিৎসক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। সোমবার রাতে অসুস্থ হয়ে পড়েন তনয়া পাঁজা। তিনি এখন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি।

এদিন দেশজুড়ে ১২ ঘণ্টার প্রতীকী অনশনের ডাক দিয়েছে চিকিৎসক সংগঠন। সোমবার থেকে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে চলছে আংশিক কর্মবিরতি। তবে কোথাও জরুরি পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়নি।

ডা. চাকি বলেন, "সব জায়গায় পরিষেবা চালু আছে। পেসমেকার বসছে, ডায়ালিসিস হচ্ছে, জরুরি অস্ত্রোপচার করা হচ্ছে। সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়েই এই আন্দোলন।"