ছাত্র রাজনীতি
২৬ ডিসেম্বর ২০১২‘‘আমরা যদি সত্যিকার অর্থে একটি সুস্থ ক্যাম্পাস, একটি উন্নয়নমুখী ভালো পরিবেশ চাই, যেখানে জ্ঞান-বিজ্ঞানের উৎকর্ষের পাশাপাশি দেশ ও জাতিকে আমরা নতুন কিছু দিতে পারবো, আগামী দিনের প্রজন্মের জন্য খুব ভালো কিছু রেখে যেতে পারবো – যেমন আমাদের গবেষণা লব্ধ জ্ঞান, তবে তার জন্য আমাদের প্রত্যেকটি পর্যায় থেকে সহযোগিতা দরকার৷ যেমন, রাজনৈতিক নেতারা তাঁদের কর্মকাণ্ড সীমিত করবেন৷ শিক্ষাঙ্গন থেকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডকে দূরে রাখবেন৷ শিক্ষকদেরও উচিত হবে ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষাদান কার্যক্রমের সাথে তাঁদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডকে মিশিয়ে না ফেলা৷ শিক্ষকদের কাজ হবে জ্ঞান, গবেষণা এবং প্রশিক্ষণ৷ তারা যত বেশি গবেষণা ও শিক্ষা – এই দুটো থেকে দূরে সরে যাবেন ছাত্রদের উপর তত বেশি এর সুদূরপ্রসারী খারাপ প্রভাব পড়বে৷ এজন্য আমি মনে করি যে, এসব ব্যাপারে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য আমাদের অনেক রকম কর্মসূচি গ্রহণ করা দরকার৷ ছাত্র রাজনীতির এই ধ্বংসাত্মক ধারার কুফল দেশের বিভিন্ন পর্যায়ে সভা, সেমিনার ও লিফলেট-এর মাধ্যমে জানাতে হবে৷ দেশের জনশক্তিকে আমরা যত বেশি জনসম্পদে রূপান্তরিত করতে পারবো, আমাদের এই জনবহুল দেশকে তত বেশি সমৃদ্ধশালী করতে পারবো৷ তাই ছাত্ররা যেন তুচ্ছ স্বার্থের কথা ভেবে তাদের ও দেশের বৃহত্তর সাফল্যকে জলাঞ্জলি না দেয় – সে ব্যাপারে তাদের সচেতন করতে হবে৷''
বাংলাদেশে প্রচলিত ছাত্র রাজনীতির ধ্বংসাত্মক ধারা ও চরিত্র থেকে উত্তরণের উপর এভাবেই জোর দিলেন শিক্ষাবিদ ও গবেষক ড. এএমএএম জুনায়েদ সিদ্দিকী৷ বললেন ছাত্র দলগুলোকে রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তি পরিহার করার কথাও৷
উন্নত দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে গৃহীত নিরাপত্তা ব্যবস্থার আদলে বাংলাদেশের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা বসানোর মাধ্যমে ছাত্র রাজনীতির নামে সন্ত্রাসী ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার সুপারিশ করেন ড. সিদ্দিকী৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘আমি বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দেখেছি, নিরাপত্তার জন্য তাদের বিভিন্ন ধরণের অত্যাধুনিক সরঞ্জাম থাকে৷ সেখানে সবসময় আমরা পুলিশ দেখি না৷ কিন্তু আমরা জানি যে, কেউ যদি গাড়ি চালাতে গিয়ে সীমা লঙ্ঘন করে কিংবা ভুলভাবে গাড়ি চালায়, তাহলে সেই চালক সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়বে এবং শাস্তি তাকে পেতেই হবে৷ আমি মনে করি, বাংলাদেশের উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর আইন শৃঙ্খলা রক্ষার্থে সেখানে যদি সার্বক্ষণিক সিসি ক্যামেরা থাকে এবং নিয়মিত নজরদারি রাখা হয়, প্রত্যেকের আচরণবিধি যদি আমরা পর্যবেক্ষণ করতে পারি এবং অত্যাধুনিক এসব যন্ত্রপাতির মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীদের আমরা সঠিকভাবে চিহ্নিত করে যথাযথ শাস্তি দিতে পারি, তাহলে আমি নিশ্চিত যে, এ ধরণের কর্মকাণ্ড প্রতিহত করা সম্ভব৷''
এছাড়া উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির পর থেকেই বিশেষ করে আবাসন সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে নতুন ছাত্র-ছাত্রীদের খুব সমস্যায় পড়তে হয়৷ আর এজন্য তাদের প্রভাবশালী ছাত্র সংগঠনের ব্যানারে গিয়ে ছাত্র নেতাদের মর্জি অনুসারে হলে ‘সিট' পেতে হয়৷ ফলে সচেতন ছাত্র-ছাত্রীরাও অনিচ্ছাসত্ত্বেও ছাত্র রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়তে বাধ্য হয়৷ এ অবস্থা থেকে ছাত্র-ছাত্রীদের মুক্তি দিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকেই প্রত্যেকটি শিক্ষার্থীর জন্য আবাসন সুবিধা নিশ্চিত করার দায়িত্ব নিতে হবে বলে জোর দিয়েছেন ড. সিদ্দিকী৷
এছাড়া, ছাত্র রাজনীতির নেতিবাচক ধারা থেকে শিক্ষার্থীদের ফেরাতে তাদের জন্য সাহিত্য, সাংস্কৃতিক, ক্রীড়া ও সমাজসেবামূলক নানা শিক্ষাসহায়ক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধির প্রস্তাব করেন তিনি৷ পাশাপাশি উন্নত দেশগুলোর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাথে মেধা বিনিময় কর্মসূচির মাধ্যমে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদেরকে সেসব স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ করে দিতে হবে৷ একইসাথে ছাত্র রাজনীতির ধারাকে আরো গঠনমূলক ও ইতিবাচক করে তুলতে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র সংসদগুলোকে সক্রিয় করার উপর জোর দেন ড. জুনায়েদ সিদ্দিকী৷
সাক্ষাৎকার: হোসাইন আব্দুল হাই
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ