1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কালো টাকা আর মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের দাপট

৭ মে ২০২৪

বুধবার বাংলাদেশে প্রথম ধাপে ১৪০ উপজেলায় নির্বাচন৷ এই নির্বাচনে একদিকে যেমন ধনী প্রার্থীর ছড়াছড়ি অন্যদিকে আওয়ামী লীগের মন্ত্রী এমপিদের স্বজনরাও দলের নিষেধ উপেক্ষা করে নির্বাচনে আছেন৷

https://p.dw.com/p/4fawU
বাংলাদেশি টাকার ছবি
মন্ত্রী এমপিদের স্বজনদের বিরুদ্ধে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ আছে৷ আর টাকার খেলা চলছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছেছবি: MD Mehedi Hasan/ZUMA Press/picture alliance

আছেন বিএনপির তৃণমূলের বহিষ্কৃত নেতারা৷ ফলে এই নির্বাচন ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে৷

নির্বাচন কমিশন আর আওয়ামী লীগ যাই বলুক না কেন মন্ত্রী এমপিদের স্বজনদের বিরুদ্ধে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ আছে৷ আর টাকার খেলা চলছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে৷ কোটিপতি প্রার্থীরা টাকা দিয়ে ফলাফল নিজেদের অনুকূলে আনার চেষ্টা করছেন৷ আর বিএনপির বহিষ্কৃত প্রার্থীরা স্থানীয়ভাবে জনপ্রিয় হওয়ায় তারাও চাইছেন ভোটের ফল ঘরে তুলতে৷

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) প্রধান নির্বাহী ড. ইফতেখারুজ্জামান মনে করেন, ‘‘নির্বাচনগুলোর মতই এই নির্বাচন টাকা আর পেশি শক্তির মহড়ায় পরিণত হয়েছে৷ তৃণমূলে ক্ষমতা আরো কুক্ষিগত করতেই মন্ত্রী এমপিরা দলের নির্দেশ অমান্য করে তাদের স্বজনদের প্রার্থী করেছেন৷''

তবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল মঙ্গলবার দাবি করেছেন, ‘‘এমপিদের নিবৃত্ত করা হয়েছে, প্রভাব বিস্তারের কারণে কিছু কিছু ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে৷ বিশেষ করে নির্বাচনের দিন কেউ যেন ভোটকেন্দ্রে অনুপ্রবেশ করতে না পারে এবং সেখানে যেন অনিয়ম না হয়, সে বিষয়ে নির্দেশনা রয়েছে৷''


মন্ত্রী এমপিদের স্বজন ও কোটিপতি প্রার্থী:
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) বলছে, প্রথম ধাপের নির্বাচনে প্রার্থীদের ৭০ ভাগই ব্যবসায়ী৷ আবার তাদের মধ্যে ৯০ শতাংশ কোটিপতি৷ প্রার্থীদের হলফনামা বিশ্লেষণ করে তারা এই তথ্য জানিয়েছে৷ তারা আরো জানিয়েছে মন্ত্রী এমপিদের অন্তত ১৩ জন স্বজন চেয়াম্যান পদপ্রার্থী হয়েছেন৷ তাদের মধ্যে তিন জন এমপি পুত্র, তিনজন ভাই এবং একজন জামাতা৷ তার মধ্যে রয়েছেন মাদারীপুর-২ এর এমপি শাজাহান খানের ছেলে আসিবুর রহমান ও চাচাতো ভাই পাভেলুর রহমান৷ ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকুর ছোট ভাই আবদুল বাতেন ও ভাইয়ের ছেলে আবদুল কাদের৷ কুষ্টিয়া-৩ এর এমপি মাহবুব-উল-আলম হানিফের চাচাতো ভাই আতাউর রহমান৷ বগুড়া-১ এর এমপি সাহাদারা মান্নানের ছেলে সাখাওয়াত হোসেন ও ছোট ভাই মিনহাদুজ্জামান৷ পিরোজপুর-১ এর এমপি শ ম রেজাউল করিমের ছোট ভাই নূর ই আলম৷ টাঙ্গাইল-১ আসনের এমপি ও সাবেক মন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাকের খালাতো ভাই হারুন অল রশিদ৷ পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার জামাতা বিশ্ব প্রদীপ কারবারী৷ ঠাকুরগাঁও-২ আসনের এমপি মাজহারুল ইসলামের চাচা সফিকুল ইসলাম এবং চাচাতো ভাই আলী আফসার এবং নোয়াখালীর সুবর্ণচরের এমপি একরামুল করিম চোধুরীর ছেলে ইশরাক শাবাব চৌধুরী৷

টিআইবি বলছে, উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থীদের মধ্যে ৯৪ জন কোটিপতি, যা আগের নির্বাচনের তুলনায় প্রায় তিনগুণ৷ পঞ্চম উপজেলা নির্বাচনে এই সংখ্যা ছিল ৩৭৷ এবার ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে ১৭ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে ছয়জন কোটিপতি৷ অস্থাবর সম্পদের তালিকার শীর্ষে আছেন গোপালগঞ্জ সদরের কামরুজ্জামান ভূঁইয়া, তার মোট অস্থাবর সম্পদ ২৫.২৪ কোটি টাকার৷ তালিকায় এর পর রয়েছেন কাউনিয়া উপজেলার আনোয়ারুল ইসলাম৷ তার অস্থাবর সম্পদ ২০.৩০ কোটি টাকার  ও সুবর্ণচরের আতাহার ইশরাক শাবাব চৌধুরীর অস্থাবর সম্পদ ১৮.৮৫ কোটি টাকার৷

 কালো টাকা আর মন্ত্রী এমপিদের দাপট :
বগুড়ার সোনাতলা উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে দুইজন প্রার্থী৷ এককজন বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান এবং এমপি সাহাদারা মান্নানের ভাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বর্তমান চেয়ারম্যান মিনহাদুজ্জামান লিটন৷ আরেকজন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি মো. জাকির হোসেন বলেন৷ জাকির হোসেন অভিযোগ করেন, ‘‘মিনহাদুজ্জামানের লোকজন প্রতিটি সেন্টার এলাকায় গিয়ে হুমকি দিচ্ছে৷ বলছে আমাকে ভোট দিলে ঠ্যাঙ(পা) ভেঙে দেবে৷ আর বলছে তাদের ভোট না দিলে ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার দরকার নাই৷ তারা একটি ভোট পেলেও উপজেলা চেয়ারম্যান হবে৷''

‘‘আমাদের বেশ কয়েকটি নির্বাচনী অফিস তিন দিন আগে পুড়িয়ে দিয়েছে৷ তার বোন এমপি হওয়ায় সে নানা ধরনের প্রভাব বিস্তার করছে৷ এখন টাকা ছড়াচ্ছে৷ প্রত্যেক কর্মীকে পাঁচ-সাত হাজার টাকা করে দিচ্ছে৷ আরো খবর পেয়েছি তারা নির্বাচন ম্যানেজ করতেও টাকা নিয়ে নেমেছে৷ আমি নির্বাচন কমিশন থেকে শুরু করে ডিসি, ইউএনও সব জ্য়াগায় অভিযোগ দিয়েছি৷ কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না,'' বলেন তিনি৷ তার কথা, ‘‘আশঙ্কা করছি তারা জোর খাটিয়ে ভোট কেটে নেবে৷ অনেকগুলো সেন্টারে তারা ভোট কাটার পরিকল্পনা করেছে বলে আমি খবর পেয়েছি৷''

এর জবাবে মিনহাদুজ্জামান লিটন বলেন, ‘‘আমার তো টাকাই নেই ছড়ারো কীভাবে?  নির্বাচনের আগের দিন পর্যন্ত সোনাতলায় খারাপ কিছু হয়নি৷ আমার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নানা মিথ্য অভিযোগ করে উপজেলার সুনাম ক্ষুন্ন করছেন৷আমি কি ফকিরের সন্তান? আমি এখনো উপজেলা চেয়ারম্যান৷ আমার বোন এমপি হওয়ার আগেই আমি চেয়ারম্যান হয়েছি৷ আমি কারুর উপর নির্ভর করে নির্বাচন করছি না৷ আমার আত্মীয় স্বজন সবাই বড় বড় পদে আছেন এবং ছিলেন৷ এটা কি আমার অপরাধ?''

দেদারসে কালো টাকা ছড়াচ্ছেন: খায়রুল

এদিকে নোয়াখালী-৪ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য একরামুল কবির চৌধুরীর ছেলে ইশরাক শাবাব চৌধুরী সুবর্ণচর উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী ৷ তার প্রতিদ্বদ্বী বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খায়রুল আনম চৌধুরী৷ তিনি অভিযোগ করেন , ‘‘শাবাব চৌধুরী এখন দেদারসে কালো টাকা ছড়াচ্ছেন৷ এমপি পিতার প্রভাব খাটিয়ে সে প্রশাসনকে নিজের পক্ষে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে৷ বাইরে থেকে সন্ত্রাসী ভাড়া করে এনেছে আগামীকাল(বুধবার) ভোট কেন্দ্র দখলের জন্য৷ নির্বাচনে কাজে লাগানোর জন্য জেল থেকে দাগী আসামিদের জামিনে বের করেছে৷''

তিনি বলেন, ‘‘তারা আমাদের লোকজনের ওপর হামলা করছে৷ প্রশাসন তো প্রষসাশন৷ আমরা অভিযোগ দিচ্ছি৷ কিছু কাজ হচ্ছে না৷ কিন্তু এমপি একরাম চৌধুরীর চাপ তো আছে৷ শাবাবের লোকজন ( এমপির ছেলে) এখন সব দলের লোকজনকে ধমক চিচ্ছে৷ বলছে ভোট না দিলে কেন্দ্রে যাওয়ার দরকার নাই৷ তারাই ভোট দিয়ে দেবে৷''

তবে ইশরাক শাবাব চৌধুরী এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘‘তার কোনো জনপ্রিয়তা নাই বলেই সে মিথ্যা অভিযোগ করছে৷ আর গত ১৫ দিনে আমার বাবাকে(এমপি)  কেউ বাইরে দেখেনি৷ আমি একাই নির্বচানি প্রচার চালিয়েছি৷''

কালো টাকা ছড়ানোর অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের কালো টাকা নেই৷ তার আছে৷ জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের জিজ্ঞেস করেন তারাই বলবে৷''

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘তিনি( প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী) তো জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি৷ আমরা বাবা এমপি, দলে কোনো পদ নেই৷ আমরা প্রশাসনকে ব্যবহার করলে তারা কী করছেন?''

এদিকে বিএনপির যারা প্রার্থী আছেন তারা ভালো নির্বাচনের আশায় বসে আছেন৷ মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী বিএনপির যুব সংগঠন যুবদলের উপজেলা যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান জাহিদুর রহমান তুষার৷ তিনি বলেন, ‘‘আশা করি সুষ্ঠু নির্বাচন হবে৷ আমরা সেই আশায় প্রার্থী হয়েছি৷ নির্বাচন সুষ্ঠু হলে আমি জিতব৷ তবে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা টাকা ছড়াচ্ছেন৷ আমরা এলাকায় কালো টাকার ছড়াছড়ি৷ আর আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী থাকায় তারা যে যার মতো গ্রপিং করছে৷ প্রশাসনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে৷''

মিথ্যা অভিযোগ করছে: শাবাব

এই পরিস্থিতির ব্যাপারে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আফজাল হোসেন বলেন, ‘‘সরকার এবং আওয়ামী লীগ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায়৷ নির্বাচনের ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন পুরোপুরি স্বাধীন৷ কোনো প্রভাব বিস্তার, কালো টাকা বা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির চেষ্টা কেউ করলে তারা ব্যবস্থা নেবে৷ আর কোনো মন্ত্রী এমপি প্রভাব বিস্তার করলে দলের পক্ষ থেকেও ব্যবস্থা নেয়া হবে৷''

সাবেক নির্বাচন কশিনার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘‘এমপি মন্ত্রীর আত্মীয়রা যেহেতু শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে আছেন ফলে তারা প্রভাব বিস্তার করবেন এটাই স্বাভাবিক৷ তারা যেহেতু দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করার ক্ষমতা দেখিয়েছেন প্রভাব বিস্তারেও তারা সক্ষম৷''

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘এখন জনপ্রতিনিধি হওয়া অনেক আর্থিক লাভের৷ ফলে অনেকেই বিনিয়োগ করেন৷ টাকা ছাড়ান৷
আর প্রধান নির্বাচন কমিশনার যা বলছেন সেটা বড় ভাইয়ের মতো কথা৷ আসলে নির্বাচন কমিশন কালো টাকা ও মন্ত্রী এমপিদের প্রভাব ঠেকাতে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি'' ৷

নির্বাচনের প্রস্তুতি:
নির্বাচনে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ৪১৮ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে৷ পুলিশের ৮৩ হাজার সদস্য মাঠে নেমেছে৷ থাকছে র‌্যাব৷ এর পাশাপাশি আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর (ভিডিপি) এক লাখ ৫৯ হাজার ৮৭৪ সদস্য কাজ শুরু করেছে৷ এ ছাড়া প্রথমবারের মতো পুলিশের স্ট্রাইকিং ফোর্সের সঙ্গে দুই হাজার ৮২০ জন সশস্ত্র আনসার ভিডিপি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে৷ এর বাইরে আরও ২ হাজার ২৮৮ জন আনসার ব্যাটালিয়ন সদস্য দায়িত্ব পালন করবে৷ ভ্রাম্যমাণ আদালতও দায়িত্ব পালন করবে৷
এরইমধ্যে মোট আটজন চেয়ারম্যান, ১০ জন ভাইস চেয়ারম্যান ও ১০ মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান বিনা ভোটে জয়ী হয়েছেন৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান