1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে তিন কিশোরকে পিটিয়ে হত্যা

১৪ আগস্ট ২০২০

যশোরে কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে তিন কিশোরকে হাত-পা বেঁধে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ৷ হত্যাকাণ্ডের জন্য সংশোধন কেন্দ্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়ী করা হচ্ছে৷

https://p.dw.com/p/3gyj2
Symbolbild Jugendkriminalität in Brasilien
প্রতীকী ছবিছবি: Getty Images

বৃহস্পতিবার বিকেলে যশোর সদরে কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে মারপিটের শিকার হলে হাসপাতালে নেয়ার পর তিন কিশোর মারা যায়৷ ১৪ জনকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে৷ প্রথমে কেন্দ্র কতৃপক্ষ দাবি করেছিল, কেন্দ্রে কিশোরদের মধ্যে দুইটি গ্রুপ আছে, তারা নিজেদের মধ্যে মারামারি করে৷ ওই ঘটনায় তিনজন নিহত ও ১৪ জন আহত হয়েছে৷ কিন্তু পুলিশের প্রাথমিক তদন্ত এবং আহতদের কথায় অন্য তথ্য বেরিয়ে এসেছে৷ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ দুই গ্রুপের মারামারির কথা বলে ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে চেয়েছিল বলে অভিযোগ উঠেছে৷

নিহতরা হলো: পারভেজ হাসান রাব্বি (১৮), রাসেল ওরফে সুজন(১৮) এবং নাঈম হোসেন(১৭)৷

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কিশোরদের অভিযোগ, পূর্বের একটি ঘটনার জের ধরে বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত হাত-পা বেধে কেন্দ্রের নীচ তলার একটি কক্ষে কয়েক দফায় কেন্দ্রের লোকজন তাদের মারপিট করে৷ আর এই মারপিট করা হয় গ্রুপে ভাগ করে৷ মারপিটের এক পর্যায়ে তাদের হাত-পা বাঁধা অবস্থায় গাছের নীচে ফেলেও রাখা হয়৷ জ্ঞান হারিয়ে ফেলার পরও তাদের হাসপাতালে নেয়া হয়নি৷ এক পর্যায়ে এক জন মারা গেলে তাদের পর্যায়ক্রমে হাসাপাতালে নেয়া হয়৷ ওই কিশোরদের সাথে হাসপাতালে কথা বলেছেন যশোরের সাংবাদিক তৌহিদ জামান৷ তিনি আহত কিশোরদের উদ্ধৃত করে বলেন, ‘‘কেন্দ্রে চুলকাটার লোক না আসায় কিশোরদের একজন সবার চুল কেটে দেয়৷''

‘জ্ঞান হারিয়ে জ্ঞান ফেরার পর আবারও মারপিট করে কেন্দ্রের লোকজন’: সাইফুল ইসলাম নান্টু

কেন্দ্রের প্রধান নিরাপত্তারক্ষীও তার চুল কেটে দিতে বললে কিশোররা পরে কেটে দেবে বলে জানায়৷ এই নিয়ে গত ৩ আগস্ট সেই গার্ডের সাথে কিশোরদের বাকবিতণ্ডা হয়৷ বৃহস্পতিবার ওই ঘটনার বিচার করতে কেন্দ্রের কর্মকর্তারা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে ১৭ জনের বিচার বসায়৷ বিচারের নামে দুপরের পর থেকে বিকেল পর্যন্ত তাদের মারপিট করা হয়৷ আহত কিশোররা সাংবাদিক তৌহিদকে বলেছে, তাদের লোহার পাইপ, বাটাম ও রড দিয়ে পেটানো হয়েছে৷ জানালার গ্রিলের ভেতর তাদের হাত ঢুকিয়ে বেঁধে ফেলা হয়৷ মুখের ভেতর কাপড় দিয়ে এবং পা বেঁধে মারধর করা হয়৷ তৌহিদ জানান, আহত কিশোরদের দাবি, এর আগেও তারা খাবার নিয়ে কয়েকবার প্রতিবাদ করেছে৷

নিহত রাসেল ওরফে সুজনের বড় ভাই সাইফুল ইসলাম নান্টু৷ তাদের গ্রামের বাড়ি বগুড়া৷ ভাই নিহত হওয়ার খবর পেয়ে তিনি শুক্রবার সকালেই যশোরে যান৷ তিনি বলেন, তার ভাই কয়েকদিন ধরেই সমস্যার কথা টেলিফোনে জানাচ্ছিল৷ কিন্তু সমস্যা কী তা বলেনি৷ তবে তারা ঈদের আগে খাবার নিয়ে প্রতিবাদ করেছিল৷ গার্ডদের লক্ষ্য করে ঢিলও ছুঁড়েছিল৷ সাইফুল ইসলাম আহত কিশোরদের সাথে হাসাপাতালে কথা বলেছেন৷ তাদের উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, ‘‘আগে নানা অনিয়মের প্রতিবাদ করায় কেন্দ্রের গার্ড এবং কর্মকর্তারা তাদের ১৭ জনকে হাত-পা বেঁধে মারপিট করে৷ তাদের স্পর্শকাতর অঙ্গেও আঘাত করা হয়৷  লোহার রড ও শক্ত কাঠ দিয়ে মারপিট করা হয়৷ জ্ঞান হারিয়ে ফেলার পর আবারও মারপিট করে কেন্দ্রের লোকজন৷''

‘‘আমার ভাইসহ যে তিনজন মারা গেছে তাদের হাসপাতালে আগে নেয়া হয়৷ বাকি ১৪ জনকে পরে পুলিশ গিয়ে হাসপাতালে নেয়'', জানান সাইফুল৷ ঈদের আগেও ওই কিশোরদের একবার মারপিট করা হয়েছিল বলে অভিযোগ তার৷

এদিকে নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে বিকেলে যশোর সদর থানায় একটি হত্যা মামলা করা হয়েছে৷ যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গোলাম রাব্বানী শেখ জানান, মামলায় আসামি হিসেবে তারা কোনো ব্যক্তির নাম উল্লেখ করেননি৷ তারা হত্যার জন্য কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্র কর্তৃপক্ষকে দায়ী করেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘কেন্দ্রের লোকজন আমাদের প্রথমে দুই পক্ষের মারামারির কথা জানালেও আসলে সেটি সত্য নয়৷ ঘটনাটি এক পাক্ষিক৷ তাদের মারধর করা হয়েছে তাতেই নিহত এবং আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে৷ তদন্তে জানা যাবে কারা এই ঘটনার সাথে জড়িত৷''

তিনি বলেন, এখন আর কেন্দ্রের পক্ষ থেকে পাল্টা কোনো মামলা করার সুযোগ নেই৷

‘তদন্তে জানা যাবে কারা এই ঘটনার সাথে জড়িত’:গোলাম রাব্বানি শেখ

পুলিশ এই ঘটনায় এখনো কাউকে আটক করেনি বা কোনো আলামত উদ্ধার করেনি৷ যশোর সদর হাসপাতালের ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক জানিয়েছেন, প্রচণ্ড মারপিটের কারণেই ওই তিনজনের মৃত্যু হয়েছে৷

কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে৷ কেন্দ্রে অবস্থানরত কিশোরদেরমধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে৷ তাদের সাথে দেখা করতে আসা উদ্বিগ্ন স্বজনদের দেখা করতে দেয়া হচ্ছে না৷

এই কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা অসিত কুমার সাহার বক্তব্য জানতে বার বার ফোন করলেও তিনি ফোন ধরেননি৷ কেন্দ্রটিতে এখন ২০৮ জন কিশোর আছে৷