কুমেরুর বরফ গলছে
২৯ মার্চ ২০১৭ব্রিটিশ গবেষণা কেন্দ্র হ্যালি সিক্স-কে অন্যত্র সরে যেতে হবে, কেননা, কেন্দ্রটি যে বরফের ওপর, তা ভেঙে যেতে পারে৷ ট্রাক্টর আর বুলডোজার দিয়ে কয়েক টন ওজনের মডিউলটিকে ডাঙার দিকে ২৩ কিলোমিটার টেনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে৷
হ্যালি সিক্স একটি ভাসমান বরফের পাতের ওপর দাঁড়িয়ে, পরিভাষায় যার নাম ‘ব্রান্ট শেল্ফ আইস’৷ এই বরফের পাতে অনেক ফাটল দেখা দিয়েছে৷ ফাটল আরো বাড়লে বরফের একটা বড় অংশ ভেঙে হিমশৈল হয়ে সাগরে ভেসে যেতে পারে৷
ভাসন্ত বরফের উপর গবেষণা কেন্দ্র
হেল্মহলৎস সেন্টার ফর পোলার অ্যান্ড মেরিন রিসার্চের আলফ্রেড ভেগেনার ইনস্টিটিউটের প্রফেসর ব্যার্নহার্ড ডিকমান বলেন, ‘‘এই ফাটলটার উপর স্বভাবতই গবেষণা কেন্দ্রের ভাগ্য নির্ভর করছে৷ কেন্দ্রটির অবস্থান এমন যে, হিমশৈল যখন সাগরে ভেসে যাবে, তখন গবেষণা কেন্দ্রটি ঠিক সেই হিমশৈলের ওপর থাকবে৷’’
জার্মান কুমেরু গবেষণা কেন্দ্র নয়মায়ার-৩ অন্য একটি শেল্ফ আইসের পাতের উপর খাড়া৷ তবে এই গবেষণা কেন্দ্রটি আরো ছোট ও অনেক বেশি স্থিতিশীল৷ এখানে বরফ ভাঙলে গবেষণা কেন্দ্রটি ডাঙার দিকে থাকবে৷
কুমেরুর মাঝখান থেকেও বরফের ঢাল চলেছে উপকূলের দিকে৷ কত তাড়াতাড়ি এই বরফ সাগরে পৌঁছাবে, তা নির্ভর করবে উপকূলের শেল্ফ আইসের পাতগুলির ঘনত্ব ও অবস্থার উপর, কেননা, এই শেল্ফ আইস হিমবাহগুলির ব্রেক হিসেবে কাজ করে৷
প্রফেসর ডিকমান জানালেন, ‘‘কিন্তু বেশি বরফ ভেঙে গেলে পাতটা স্থিতিহীন হয়ে পড়বে, ভারসাম্য হারাবে৷ তার ফলে পিছনে হিমবাহের বরফ সোজা সাগরে গিয়ে পড়তে পারে৷ সাগরের পানির উচ্চতার জন্য একটি আইস শেল্ফ ভাঙলে ক্ষতি নেই, কেননা, বরফ জলে ভাসে৷ কাজেই বরফের পাত ভাঙলে সাগরের পানি বাড়বে না৷ কিন্তু মেরুপ্রদেশের ভিতর থেকে যে বরফ আসছে, তার ফলে সাগরের পানির উচ্চতা বাড়বে বৈকি৷’’
বরফের পাত
কাছের একাধিক বরফের পাত ইতিমধ্যেই ভেঙে গেছে৷ ২০০২ সালের পরিস্থিতি শীঘ্র আবার দেখা দিতে পারে বলে গবেষকদের আশঙ্কা৷ সে বছর মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যে লার্সেন-বি নামের শেল্ফ আইসের পাতটি ছোট ছোট আইসবার্গ, অর্থাৎ হিমশৈলে ভেঙে যায়৷ ২,৬০০ বর্গকিলোমিটার বরফ সাগরে মিশে যায়৷
যে কুমেরু উপদ্বীপের উপর এই বরফের পাতগুলো অবস্থিত, সেই এলাকাটি বিশেষভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের দ্বারা প্রভাবিত৷ কিন্তু আরো শীতল এলাকাগুলিতেও বরফ গলছে৷ এর মূল কারণ জলবায়ু পরিবর্তন বলে অনেক গবেষকের ধারণা৷ জলবায়ু পরিবর্তন দু'ভাবে মেরুপ্রদেশের বরফের ক্ষতি করছে৷ কুমেরুর পশ্চিমাঞ্চলে উষ্ণ জলের স্রোত তলা থেকে বরফ গলাচ্ছে৷ শেল্ফ আইসের বরফের পাতগুলোর উপরের বরফ গরম বাতাসে গলে জলের কুণ্ড তৈরি হচ্ছে৷
জলের কুণ্ড
প্রফেসর ডিকমান জানালেন, ‘‘এই জলের কুণ্ডগুলো আবার শীতকালে জমে যায়৷ কিন্তু সেই নতুন বরফের প্রকৃতি হয় হিমবাহের বরফ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা৷ এই বরফ হয় কিছুটা নরম৷ প্রতিবছর গরমে বরফ গলে কুণ্ডি তৈরি হওয়া চলে বছরের পর বছর৷ তার ফলে বরফ ঝুরঝুরে হয়ে পড়ে৷’’
ব্রিটিশ গবেষণা কেন্দ্রটি আগামী মার্চ মাস থেকে আট মাস বন্ধ থাকবে, কেননা, কুমেরুর শীতে কোনো ত্রাণ অভিযান পাঠানো সম্ভব নয়৷ আর এখানকার বরফ আগামীতে কি করবে বা না করবে, তা বলা কারুর পক্ষেই সম্ভব নয়৷
কর্নেলিয়া বর্মান/এসি