1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কেন এত রাগ, কেনইবা এত গালির কলুষ?

গৌতম হোড় নতুন দিল্লি
২৩ এপ্রিল ২০২১

রাগ আর জিনিসের দামের মধ্যে অসম্ভব মিল৷ দুটোই কেবল বাড়ে, কমে না৷

https://p.dw.com/p/3sUBq
Symbolbild Streit
ছবি: picture-alliance/dpa

সবজি, মাছ, মাংস থেকে শুরু করে টমেটো, লেবু পর্যন্ত যাতেই হাত দিন, ছ্যাঁকা লাগবে৷ তেমনই, চারপাশে যে দিকে তাকান, দেখবেন শুধু ক্রুদ্ধ মানুষজন৷ রাগ এবং উত্তেজনার পারদ কেবল বাড়ছে৷ টিভির বিতর্কে চোখ রাখলে মনে হবে, রেগেমেগে, উত্তেজনায় রাজনীতিক বা উপস্থাপকের হার্ট অ্যাটাক হয়ে যাবে৷ গলা ব্যাথা তো হবেই৷  এখনই একজন আরেকজনের উপর চড়াও হয়ে যাবেন৷ সংসদের অধিবেশন কোনোদিন শান্ত থাকাটাই খবর৷

ক্রিকেট বা ফুটবল দেখুন, মনে হবে খেলা নয় যুদ্ধ চলছে৷ দাঁত-মুখ খিঁচিয়ে, একে অন্যের দিকে তেড়ে গিয়ে একাকার কাণ্ড৷ রেফারি পেনাল্টি দিলে বা হলুদ কার্ড দেখাতে গেলেই যাচ্ছেতাই দৃশ্য৷ ভদ্রলোকের খেলা বলে পরিচিত ক্রিকেটে এখন আম্পায়ারও ছাড় পাচ্ছেন না৷ ক্রিকেটাররা একে অন্যের দিকে হামেশাই তেড়ে গিয়ে চেঁচাচ্ছেন৷ যে কথাগুলো বলছেন, তা একেবারেই শ্রুতিমধুর নয়৷

সামাজিক মাধ্যমের অবস্থা তো কহতব্য নয়৷ কোনো যুক্তিসঙ্গত মন্তব্য করলে বা মত না মিললেই কিছু মানুষ রে রে করে তেড়ে আসবেন৷ গালাগালি দেবেন৷ কোন দলের এজেন্ট তা জানতে চাইবেন৷ ১৪ পুরুষ উদ্ধার করে দেবেন৷ তার মধ্যে যদি দুই অক্ষরের গালাগালি থাকে তা হলে বুঝতে হবে অল্পের উপর পার পাওয়া গেল৷ না হলে চার বা ততোধিক অক্ষরের গালাগালির স্রোত বইবে৷ গালাগলি নিয়ে একটা তত্ত্ব আছে৷ গালি দিলে নাকি মনের ক্লেদ দূর হয়৷ তা মানুষের মনে অন্তহীন ক্লেদ আছে নাকি!

নাকি এটা পুরোপুরি পরিচয়ের সংকট, আইডেনটিটি ক্রাইসিস? অথবা মানসিক চাপের প্রেসার কুকারে ক্রমাগত সেদ্ধ হতে হতে সর্বত্র বেরিয়ে আসছে অস্থিরতা, রাগ, হতাশা, খারাপ ব্যবহার৷ কোনো নিয়মকানুনই আর মানতে চাইছে না মানুষ৷ না হলে পরিচয়পত্র দেখতে চাওয়া বা তা যাচাই করতে চাওয়া এমন কী আর গুরুতর ব্যাপার! এটা তো পুলিশ বা টোল বুথ কর্মীদের কাজের অঙ্গ৷ সেটাই করতে চেয়েছিলেন নয়ডা এক্সপ্রেসওয়ের একটি টোল বুথের কর্মীরা৷ সেখানে বাসে করে একটি রাজনৈতিক দলের কর্মীরা যাচ্ছিলেন৷ তাতে একজন এমএলএ বা বিধায়কের স্টিকার লাগানো ছিল৷ টোল কর্মী যাচাই করে দেখতে চেয়েছিলেন, সেই স্টিকারটা ঠিক কিনা৷ কিন্তু তাতে কান না দিয়ে শুরু হলো মারধর৷ একে রাজনৈতিক দলের কর্মী, তার উপর বিধায়কের স্টিকার বলে কথা৷ তাদের তো যেতে দিতেই হবে৷ নিয়ম থাক বা না থাক৷

করোনার আগে প্রায়ই খবর আসতো, সাংসদ গিয়ে টোলের কর্মীদের মেরেছেন, তার সমর্থকরা টোল ভাঙচুর করেছেন৷ কেন?  তারা তো সচরাচর একটা গাড়ি নিয়ে ঘোরেন না৷ সঙ্গে একাধিক গাড়ির মিছিল থাকে৷ তাদের কাছে টোল চাওয়া হয়েছিল৷ ব্যস, আর যায় কোথায়? ২০১৮, ২০১৯-এ  উত্তর প্রদেশ, মহারাষ্ট্র, রাজস্থানে এরকম ঘটনা প্রচুর ঘটেছে৷

২০১৮ সালের ১৭ জানুয়ারি ইন্ডিয়া টুডে ওয়েবসাইটে একটা রিপোর্টে অনেকগুলি ঘটনার উল্লেখ করা হয়েছিল, যেখানে মুখ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে রাজনৈতিক নেতা-মন্ত্রীরা সরকারি কর্মীদের চড় মেরেছেন বা গায়ে হাত তুলেছেন৷ সেই তালিকা অনুযায়ী, মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান তার দেহরক্ষীকে একটি জনসভায় চড় মেরেছিলেন৷ কারণ, জানা নেই৷ হিমাচলে কংগ্রেসের বিধায়ক আশা কুমারী চড় মেরেছেন একজন নারী কনস্টেবলকে৷ কারণ, ওই কনস্টেবল তার গাড়ি থামিয়েছিলেন৷ শিবসেনার সাংসদ বিমানকর্মীকে জুতোপেটা করেছিলেন৷

গ্যাস পাইপলাইনের জন্য জমি অধিগ্রহণ করতে গেছিলেন বলে একজন জেলা কালেক্টরকে মেরেছিলেন মহারাষ্ট্রে এনসিপি-র বিধায়ক৷ রাজস্থানে পুলিশ কর্মী চালান কেটেছিল বলে তাকে পিটিয়েছিলেন বিজেপি বিধায়কের স্বামী৷ মহারাষ্ট্রে এক বিজেপি বিধায়ক থানায় গিয়ে পুলিশকে মেরে এসেছিলেন৷

গৌতম হোড়, নতুন দিল্লি
গৌতম হোড়, ডয়চে ভেলেছবি: privat

আর কত ঘটনার উল্লেখ করবো৷ এই ঘটনাগুলো কিন্তু পুলিশ বা সরকারি কর্মীদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে রাজনীতিকদের আক্রোশ নয়৷ বরং, তারা এখানে পরিচয় সংকটে ভুগেছেন৷ পুলিশ বা সরকারি কর্মীরা আইন মেনে কাজ করেছেন৷ কিন্তু বিধায়ক, সাংসদের মনে হয়েছে, তিনি এত ক্ষমতাবান হওয়ার পরেও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হলো৷ এত সাহস হয় কী করে? হয় তাকে চেনার পরেও পুলিশ বা সরকারি কর্মী ব্যবস্থা নিয়েছে, পরিচয় দেয়ার পরেও থামেনি, অথবা তিনি যে নিয়ম কানুনের বাইরে সেটা পুলিশ মানেনি৷

ডয়চে ভেলেতেই দিন কয়েক আগে খবর প্রকাশিত হয়েছিল, নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী অ্যারনা সোলব্যার্গকে আমাদের হিসাবে প্রায় দুই লাখ টাকা জরিমানা করেছে পুলিশ৷ কারণ, তিনি করোনার নিয়ম ভেঙেছিলেন৷ জন্মদিনে ১০ জনের বদলে ১৩ জনকে নিয়ে বাইরে খেয়েছিলেন৷ ভারত বা এই উপমহাদেশে কবে যে এরকম হবে!

স্টিকার নিয়ে পুলিশের সঙ্গে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে ভিআইপি-দের ঝামেলা তো হামেশাই হয়৷ এক পুলিশ কর্তা জানিয়েছিলেন, আজকাল যে কোনো স্টিকারের হুবহু নকল করা যায়৷ তার বক্তব্য ছিল, ভুলে যাবেন না, নকল স্টিকার গাড়িতে লাগিয়ে ভারতের সংসদ ভবন আক্রমণ করেছিল জঙ্গিরা৷ তাই স্টিকার থাকা সত্ত্বেও পরিচয়পত্র দেখা বা তা যাচাই করা জরুরি৷ আর উপমহাদেশে এই স্বাভাবিক ঘটনা ঘটলেই দেখা যায় অস্বাভাবিক রাগ৷ এই অস্বাভাবিকতাই এখন নিয়ম৷

ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি গৌতম হোড়৷
গৌতম হোড় ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি৷