1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কোটা বাতিলে প্রজ্ঞাপন জারির দাবি

১৪ মে ২০১৮

সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা বাতিলে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ঘোষণা অনুযায়ী প্রজ্ঞাপন জারির দাবিতে ছয় ঘণ্টা ঢাকার শাহবাগে বিক্ষোভের পর সড়ক ছেড়েছে আন্দোলনকারীরা। সারা দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ধর্মঘট পালন করছেন তারা৷

https://p.dw.com/p/2xfzV
ছবি: bdnews24.com

সোমবার সন্ধ্যা ৭টায় আন্দোলনকারীদের নেতা নুরুল হক নূর তাদের দাবি বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রীর একটি বার্তা পাওয়ার কথা জানিয়ে অবস্থান কর্মসূচি স্থগিতের ঘোষণা দেন৷ তিনি বলেন, ‘‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার একটি বার্তা একটি বিশেষ মাধ্যমে আমাদের আমাদের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন, যে তিনি যা বলেছেন, তার বাস্তবায়ন করবেন৷ আমাদের পাঁচ দফা দাবি প্রধানমন্ত্রী বাস্তবায়ন করবেন বলে আমাদের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসে আমরা আমাদের কর্মসূচি আজকের মত স্থগিত করলাম।’’

তবে, প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন৷ বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ব্যানারে এই আন্দোলন করছেন তাঁরা৷

ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম জানাচ্ছে, কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন জারির দাবিতে আজ বেলা ১১টা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশির ভাগ বিভাগে ক্লাস হচ্ছে না৷ প্রজ্ঞাপন না হওয়া পর্যন্ত ছাত্র ধর্মঘট চলবে বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা৷

শাহবাগ চত্বরের মাঝখানে অবস্থান নিয়েছেন কয়েক হাজার আন্দোলনকারী৷ ফলে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে৷ তবে আন্দোলনকারীরা অ্যাম্বুলেন্সসহ জরুরি সেবার গাড়িগুলোকে ছেড়ে দিচ্ছেন৷ শাহবাগ মোড় আটকে থাকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি, এলিফেন্ট রোড, মৎস ভবন, বাংলা মোটর এলাকায় তীব্র যানজট দেখা দিয়েছে৷

কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন জারির দাবিতে চট্টগ্রামে বিশ্ববিদ্যালয়গামী শাটল ট্রেন আটকে বিক্ষোভ করছে শিক্ষার্থীরা৷

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে আন্দোলনকারীরা সমবেত হওয়ার চেষ্টা করছেন৷ মো. রাতুল সরকার ফেসবুকে আন্দোলনে যোগ দেয়ার আহ্বান জানিয়ে লিখেছেন, ‘‘গাজীপুর থেকে শাহবাগ গিয়ে প্রায় সব কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছি৷ কমপক্ষে ২০ বার টিয়ারগ্যাসে আক্রান্ত হয়েছি৷ সারাদিন না খেয়ে রাত পর্যন্ত প্রায় ৬ ঘণ্টা জেলে কাটিয়েছি৷ ২ বার পুলিশের লাঠির আঘাত খেয়েছি৷ ৩৬ টা রাবার বুলেটের স্প্লিন্টার হজম করেছি, যার ৭ টা স্প্লিন্টার এখনো আমার শরীরে৷ তোমরা কি ভাবছো আমি ক্লান্ত হয়ে গেছি? তরুণরা কখনো ক্লান্ত হয় না৷ আপনি আসছেন তো?’’

তানিন লিখেছেন, ‘‘কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বহনকারী বাসে অতর্কিত হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় নগরের পুলিশ লাইনস এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে৷ ছাত্রলীগ ওই হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে৷ এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন৷’’

জাকির হোসেন রাজু লিখেছেন, ‘‘একটি বিষয় আমরা বুঝতে অপারগ, যেখানে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা বলেছেন, তাঁরা সরকারের প্রতিপক্ষ নন, সরকার তরুণদের প্রতিপক্ষ ভাবছে কেন? এক মাসেরও বেশি সময় ধরে সমস্যাটি ঝুলিয়ে রেখেছে তারা৷ তরুণদের প্রতি সরকার এত অসংবেদনশীল হলো কীভাবে? এই তরুণেরা ক্ষমতায় যেতে চান না৷ তাঁরা কোনো বিষয়ে সরকারকে চ্যালেঞ্জও করেননি৷ তাঁরা চান, লেখাপড়ার পর মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে একটি চাকরির নিশ্চয়তা৷ এটা ন্যায্য দাবি৷’’

শহিদুল ইসলাম সবাইকে শাহবাগে আসার আহ্বান জানিয়ে লিখেছেন, ‘‘কোটা নিয়ে শিগগিরই সিদ্ধান্ত আসছে, বললেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব৷ বিজয়ের সাক্ষী হতে চাইলে সবাই শাহাবাগ চলে আসুন৷’’

বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকারি চাকরিতে কোটার বিষয়ে শিগগিরই একটি সিদ্ধান্ত পাওয়ার আশা প্রকাশ করেছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম৷ সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানাতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন৷ সচিব বলেন, ‘‘যত দূর শুনেছি, কোটার বিষয়ে ইতিমধ্যে একটি সারসংক্ষেপ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে৷ বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে৷ হয়তো কিছু দিনের মধ্যে হয়ে যাবে৷’’

বর্তমানে সরকারি চাকরিতে নিয়োগে ৫৬ শতাংশ পদ বিভিন্ন কোটার জন্য সংরক্ষিত; এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারী ১০ শতাংশ, জেলা ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ৫ শতাংশ, প্রতিবন্ধী ১ শতাংশ৷ কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী ‘ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ' কোটার পরিমাণ ১০ শতাংশে কমিয়ে আনার দাবি তুলেছিল৷ কোটায় প্রার্থী পাওয়া না গেলে মেধা তালিকা থেকে তা পূরণের দাবিও জানিয়েছিল তারা৷ শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনে ক্ষুব্ধ হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১১ এপ্রিল জাতীয় সংসদে কোটা পদ্ধতিকে বাতিল ঘোষণা করেন৷ কোটা নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি করার কথাও ওই দিন বলেছিলেন সরকারপ্রধান৷

সংকলন: অমৃতা পারভেজ

সম্পাদনা: আশীষ চক্রবর্ত্তী

১৩ এপ্রিলের ছবিঘরটি দেখুন...