1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কোভিডের বিরুদ্ধে সামাজিক ঐক্য

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা
৭ আগস্ট ২০২০

সংক্রমণ এড়াতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার এই সময়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে পশ্চিমবঙ্গের কোভিড কেয়ার নেটওয়ার্ক৷ শেখাচ্ছে, কোভিডের বিরুদ্ধে সবাইকে একজোটেই লড়তে৷

https://p.dw.com/p/3gc89
Indien Mumbai | Coronakrise
ছবি: Imago Images/Hindustan Times

কোভিড হয়েছে বলে কেউ সামাজিকভাবে অচ্ছ্যুৎ হয়েছেন, এটা এখন আর কোনো নতুন ঘটনা নয়৷ হাসপাতালের গেটে পড়ে থেকে মারা গেছেন কোভিড রোগী, কারণ, কেউ তাঁকে ছুঁতে রাজি হয়নি, অথবা বাড়ির কারো কোভিড হয়েছে বলে গোটা পরিবারকেই উৎখাত করা হয়েছে বাড়ি থেকে— এমন বহু ঘটনা জানা যাচ্ছে৷ এর পাশাপাশি আছে রোগটি সম্বন্ধে মানুষের ভুল ধারণা, যাতে ইন্ধন জোগাচ্ছে আধাসত্যি, বা একেবারেই ভুল তথ্য৷ বিজ্ঞানের নামে ফলাও চর্চা হচ্ছে অপবিজ্ঞানের৷ রোগের ভয় মানুষকে সতর্ক করার বদলে সন্ত্রস্ত করে তুলছে৷ এই অবস্থায় মানুষকে বোঝাতে, দরকারে চিকিৎসা থেকে হাসপাতালে ভর্তির ব্যাপারে সাহায্য করতে, সর্বোপরি মানসিক মদত জোগাতে পথে নেমেছে কোভিড কেয়ার নেটওয়ার্ক নামে এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন৷ চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী থেকে শুরু করে অভিনেতা, যন্ত্রশিল্পীরাও শামিল হয়েছেন এই উদ্যোগে, যাদের কাজ কলকাতা শহর ছাড়িয়ে এখন জেলাতেও ছড়িয়ে পড়ছে৷

এভারেস্ট বিজয়ী, পর্বতারোহণে গিনেস বুক অফ ওয়র্ল্ড রেকর্ডে জায়গা পাওয়া সত্যরূপ সিদ্ধান্ত এই সেবা সংগঠনের সম্পাদক৷ তিনি জানালেন, ব্যক্তিগত জীবনে প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করার অভিজ্ঞতাই তাঁকে উৎসাহ দিয়েছিল এই কাজে এগিয়ে যেতে৷ ছোটবেলায় হাঁপানি ধরার পড়ার পরও তিনি দুরূহ সব শৃঙ্গজয়ের অভিযানে অংশ নিয়েছেন এবং সফল হয়েছেন৷ পর্বতারোহণের সেই অভিজ্ঞতা অবশ্যই সাহায্য করছে এই অতিমারি পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে৷

সত্যরূপ সিদ্ধান্ত

সত্যরূপ জানাচ্ছেন, ‘‌‘যখন আমার নিজের পরিবারের মধ্যে, আমার মামা কোভিড আক্রান্ত হয়, তখন খুব কাছ থেকে যখন গোটা ঘটনাটা আমি ট্যাকল করি এবং ‌মামা ফাইনালি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন, তখনই ভেবেছিলাম যে এরকম একটা করলে কেমন হয়৷ আমরা তখনই ডা. যোগীরাজ রায়ের (‌বেলেঘাটা আই ডি হাসপাতাল)‌ কাছে অ্যাপ্রোচ করেছিলাম যে, আমরা কাউন্সেলিং করতে চাই (‌হাসপাতালের)‌ ভিতরে ঢুকে৷ ওয়ার্ডের ভিতরে ঢুকে কিন্তু সেটা লিগ্যালি অ্যালাউড ছিল না, কিন্তু আমরা কনস্ট্যান্টলি অ্যাপ্রোচ করে গেছি যে কোনোভাবে কি আমরা হেল্প করতে পারবো?‌'‌'‌

এখন ওঁরা যেটা করছেন, ২৪ ঘণ্টার একটা হেল্প লাইন চালু করেছেন কোভিড আক্রান্তদের সাহায্যে৷ টেলিফোনে রোগী এবং তাঁর পরিবারের সঙ্গে কথা বলে চিকিৎসার ব্যবস্থা থেকে টেস্ট করানো, হাসপাতালে ভর্তি হতে সাহায্য করা, সবই ওঁরা করছেন৷ পাশাপাশি চলছে কাউন্সেলিং৷ সাধারণের মধ্যে সচেতনতা প্রচার করা৷ এলাকায় এলাকায় ঘুরে, অথবা টেলিফোনে৷

কোভিড কেয়ার নেটওয়ার্কের পুরোধা ডা. অভিজিৎ চৌধুরি জানাচ্ছেন, ‘‌‘‌যে ফোনগুলো আসছে, ফোনের প্রথম (‌কথা)‌ হচ্ছে, আমার করোনা হয়েছে৷ মানে ব্যাপারটা হচ্ছে যে, আমার করোনা হয়েছে, আমি আর কতটুকু সময় বাঁচবো!‌ এটাই হচ্ছে, যার করোনা হয়েছে, তার অনুভূতি৷ এবং আমরা ওই জন্যে কোভিড উইনারদের অনুভূতি থেকে ব্যাপারটা আনার চেষ্টা করছি৷ তাঁরা বোঝাচ্ছেন যে, এক্ষুনি বেড না পেলে, বা বাড়িতে থাকলে আপনার কিচ্ছু ক্ষতি হয়ে যাবে না৷'‌'‌

ডা. অভিজিৎ চৌধুরি

কিন্তু কোভিড কেয়ার নেটওয়ার্কের অভিজ্ঞতা বলছে, সমাজ যে কুনজরে কোভিড রোগীকে দেখছে, তাতে আরো বেশি আতঙ্ক ছড়াচ্ছে৷ ডা. চৌধুরির বক্তব্য, ভারতের ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশ লোকই উপসর্গহীন অথবা মৃদু উপসর্গ যুক্ত, যাদের চিকিৎসা বাড়িতেই হতে পারে৷ ‘‌‘‌কিন্তু এই লোকগুলোই এসে হাসপাতালের বেডগুলো অকুপাই করছে৷ কারণ নানান রকম৷ ওরা ভয়ে থাকছে না পাড়ার লোকে ‘‌এই করোনা এই করোনা'‌ বলে মাঝেমাঝে প্যাঁক মারছে!‌ দরজা খুলিস না, জানলা খুলিস না বলছে৷ এবং এগুলো করছে, যারা সবথেকে বেশি আলোকিত, অর্থাৎ উচ্চশিক্ষিত মানুষজন বেশি করছে৷ যার কাছে বেশি আলো আছে, বিজ্ঞানী, চিকিৎসক, অধ্যাপক— এরাই সবথেকে (‌বেশি)‌ গন্ডগোলটা করছে বেশি৷ ‌আমরা এই জায়গাটায় আঘাত হেনে কমিউনিটিকে বলার চেষ্টা করছি, কোভিড ইনফেক্টেডের ব্যবস্থা তোমাকেই করতে হবে৷ পাড়ার ক্লাবগুলোকে জাগতে হবে৷ তোমার পাড়াতে কারো (‌কোভিড)‌ থাকলে তার বাজারের ব্যবস্থা করতে হবে৷'‌'‌

অর্থাৎ ছোঁয়াচ এড়ানোর সামাজিক দূরত্বের এই আবহে আরো বেশি সামাজিক দায়বদ্ধতার কথা বলছে কোভিড কেয়ার নেটওয়ার্ক৷ সমাজের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নয়, সমাজের সবার সঙ্গে একজোটে বাঁচার কথা বলছে৷