1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ক্ষমতার সঙ্গে ধর্ষকের সংযোগ ও তার ফল

৩ আগস্ট ২০১৭

বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি ঘটনায় দেখে গেছে ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্তরা ক্ষমতার সঙ্গে যুক্ত৷ এমনকি ক্ষমতাসীন দলের সহযোগী বা অঙ্গ সংগঠনের নেতৃত্বেও ছিল কেউ কেউ৷ বিশ্লেষকরা বলছেন, ক্ষমতার সঙ্গে ধর্ষণের সরাসরি সংযোগ আছে৷

https://p.dw.com/p/2hcpV
প্রতীকী ছবিছবি: picture-alliance/Pacific Press/E. McGregor

বগুড়ায় ধর্ষণ এবং পরে ধর্ষণের শিকার মেয়ে ও মাকে সালিশের নামে মাথা ন্যাড়া করে দেয়ার ঘটনায় বাংলাদেশে প্রতিবাদ অব্যহত৷ পুলিশ ধর্ষণ মামলার আসামি তুফান এবং তার সহযোগীদের এরইমধ্যে গ্রেপ্তার করেছে৷ তুফান বগুড়া শহর শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক ছিল৷ তাকে শ্রমিক লীগ থেকেও বহিষ্কার করা হয়৷ শুধু তাই নয়, এ ঘটনায় তুফানের বড় ভাই আব্দুল মতিনকে বগুড়া শহর যুবলীগের যুগ্ম সম্পাকের পদ থেকেও বহিষ্কার করা হয়৷ তবে এই ধর্ষণের ঘটনা প্রকাশই হতো না যদি না ধর্ষণপরবর্তি নির্যাতনের খবর, অর্থাৎ মা-মায়ের মাথা ন্যাড়া করার খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ না হতো৷

যাই হোক, এ পর্যন্ত যা জানা গেছে তাতে স্পষ্ট যে, তুফান ও তার পরিবারের সদস্যরা রাজনীতির জোরেই দীর্ঘদিন ধরে নানারকম অপরাধ করে আসছিল৷ বগুড়ার সাংবাদিক নাজমুল হুদা নাসিম ডয়চে ভেলেকে জানান, ২০১৫ সালে তুফান দুই বস্তা ফেনসিডিলসহ র‌্যাবের হাতে ধরা পড়েছিল৷ পরে ছাড়া পেয়ে তার বড় ভাই যুবলীগ নেতা মতিনের সহয়াতায় শ্রমিক লীগে যোগ দিয়ে অল্প দিনেই বড় নেতা হয়ে ওঠে সে৷ তাদের দুই ভাইয়ের ভিরুদ্ধে অনেক মামলা থাকলেও, তাদের পুলিশ গ্রেপ্তার করেনি৷ পুলিশের কাগজে দেখানো হয় যে, তারা পলাতক৷ অথচ তারা প্রকাশ্যেই গোটা এলাকা দাপিয়ে বেরিয়েছে৷ মন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে একই মঞ্চে বক্তৃতা দিয়েছে, এমনকি ছবিও তুলেছে৷’’

‘প্রথমে লোক দেখানো গ্রেপ্তার করা হলেও পরে তদন্ত ও বিচার পর্যায়ে প্রভাব বিস্তার করে ধর্ষকরা’

নাসিম আরো জানান, ‘‘তারা রাজনৈতিকভাবে এতটাই ক্ষমতাধর যে পুরো পরিবারটি মিলে বগুড়া শহরে মাদকের সিন্ডিকেট গড়ে তোলার পরও পুলিশ তাদের কিছুই করতে পারেনি৷’’

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও মানবাধিকার কর্মী নূর খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বগুড়ার এই শ্রমিক লীগ নেতা কেমন, সেটা যে তাদের উপরের সারির নেতারা জানতেন না, তা নয়৷ তারা জানতেন৷ আমার ধারণা, তারা আরো অনেকের খবর জানেন এবং প্রশ্রয় দেন৷ এই ঘটনা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ায় তারা নিজের মুখ রাক্ষায় ব্যবস্থা নিয়েছেন৷’’

গত বছর সিলেটে খাদিজা আক্তার নারগিসকে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করে সিলেট শাহজাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ সম্পাদক বদরুল৷ বদরুলের প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় নারগিসকে সে পরপারে পাঠিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছিল৷ এই ঘটনাও সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পর প্রতিবাদের মুখে পড়ে বদরুলকে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার ও গ্রেপ্তার করা হয়৷ বিচারে তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডও হয়৷ তবে বদরুল যে বেশ কয়েক বছর ধরে নারগিসের ওপর যৌন হয়ারানি চালিয়ে আসছিল, সেটা নিয়ে কিন্তু কোনো ব্যবস্থাই নেয়নি রাজনৈতিক দলটি৷

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘যার ক্ষমতা আছে সে এক ধরনের বিচারহীনতার সুবিধা ভোগ করে৷ সেই সুবিধা তাকে নানা অপকর্মে প্ররোচিত করে৷ এর মধ্যে ধর্ষণ একটি৷’’

‘যার ক্ষমতা আছে সে এক ধরনের বিচারহীনতার সুবিধা ভোগ করে’

তিনি বগুড়ার ঘটনা উল্লেখ করে বলেন, ‘‘হতে পারে জাতীয় পর্যায়ের অনেক নেতা ওই শ্রমিক লীগ নেতার চরিত্র সম্পর্কে জানতেন না৷ কিন্তু যিনি শ্রমিক লীগের শীর্ষ নেতা, তিনি এ সব তথ্য জানবেন না কেন?’’

কুমিল্লার তনু হত্যা এবং ধর্ষণের ঘটনায় এখনো কেউ গ্রেপ্তার হয়নি বা পুলিশ গ্রেপ্তার করেনি৷ ঐ ঘটনাটি ঘটেছিল কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টের ভিতর৷ অনেক আন্দোলন ও প্রতিবাদ হলেও কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি৷ এমনকি যারা জড়িত বলে তনুর বাবা তদন্তকারীদের জানিয়েছেন তাদের জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়নি৷ স্পর্শকাতর ও নিয়ম নীতির দোহাই দিয়ে অনেক তথ্য আড়াল করা হচ্ছে৷ ড. মিজান বলেন, ‘‘ক্ষমতার নানা দিক এবং রূপ আছে৷ শুধু রাজনৈতি নয়, অর্থবিত্ত এবং কাঠামোরও ক্ষমতা আছে৷ সেই ক্ষমতার প্রভাবে অনেক ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা আড়ালে চলে যাচ্ছে৷’’

নূর খান বলেন, ‘‘প্রথমে লোক দেখানো গ্রেপ্তার করা হলেও পরে গিয়ে তদন্ত এবং বিচার পর্যায়ে প্রভাব বিস্তার করে ধর্ষকরা৷’’

আর ড. মিজান বলেন, ‘‘রাজনীতির সুস্থ চর্চা ন্যায় বিচার নিশ্চিত করে৷ উন্নত বিশ্বেও যাঁরা রাজনীতি করেন, তাঁরাই ক্ষমতাবান৷ কিন্তু তাঁরা জানেন যে, তাঁদের বিচারব্যবস্থায় অপরাধ করে ছাড় পাওয়া প্রায় অসম্ভব৷ তাই তারা অপরাধ থেকে নিবৃত্ত থাকেন৷’’

নূর খান বলেন, ‘‘রাজনৈতিক ক্ষমতার অধিকারী যাঁরা, তাঁরা যদি অপকর্ম করে তাহলে তা সমাজেও সঞ্চারিত হয়৷ আমরাও এমনটা হতে দেখছি৷’’

প্রিয় পাঠক, আপনি কিছু বলতে চাইলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে...

গত নভেম্বরের এই ছবিঘরটি দেখতে পারেন..