1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

খালেদা জিয়ার চিকিৎসা কোথায় হবে?

১০ জুন ২০১৮

কারাবন্দি খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা ইউনাইটেড হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা করাতে চাচ্ছেন৷ আর কারা কর্তৃপক্ষ মনে করে কারাগারে রেখেই তাঁর চিকিৎসা সম্ভব৷ এরইমধ্যে কারা কর্তৃপক্ষ তাঁর কয়েকবার পরীক্ষা করিয়েছে৷

https://p.dw.com/p/2zEk2
খালেদা জিয়া
ছবি: picture-alliance/dpa/AP Photo/A. M. Ahad

শনিবার খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা কারাগারে দেখা করেন৷ দেখা করার পর তারা সাংবাদিকদের জানান যে, গত ৫ জুন খালেদা জিয়া কারাগারে মাইল্ড স্ট্রোক করেছিলেন৷ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক এবং খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎক দলের সদস্য ডা. এফএম সিদ্দিকী সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘গত ৫ জুন বেলা ১টার দিকে খালেদা জিয়া দাঁড়ানো অবস্থায় হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে মাথা ঘুরে পড়ে যান৷ ৫-৭ মিনিট পর তাঁর জ্ঞান ফিরলেও ওই সময়ের কথা কিছুই মনে করতে পারছেন না তিনি৷ তাঁর অ্যাটেনডেন্স যে মেয়েটি ছিল সে অনেক চেষ্টা করে তুলে বসিয়েছে৷ আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেছি, তাঁর টিআইএ (ট্রানজিয়েন্ট স্কিমিক অ্যাটাক) হয়েছে৷ এটা মাইল্ড স্ট্রোকের মতো৷'' 

খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক দলের এই সদস্য আরও বলেন, ‘‘মাইল্ড স্ট্রোকের ক্ষেত্রে যা সবচেয়ে বিপজ্জনক তা হলো কারও যদি টিআইএ হয় তাহলে আগামীতে বড় ধরনের স্ট্রোক হওয়ার আশঙ্কার আভাস থাকে খুব বেশি৷ আমরা যারা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে দেখতে এসেছিলাম, আমাদের সমস্ত মতামত ও পর্যবেক্ষণ লিখে দিয়ে এসেছি কারা কর্তৃপক্ষকে৷'' 

Mosarraf Hossain.mp3 - MP3-Stereo

অধ্যাপক এফএম সিদ্দিকীর মতে, ‘‘আমরা মনে করি কয়েকটি বিশেষ ধরনের পরীক্ষা দরকার খালেদা জিয়ার৷ এর মধ্যে অন্যতম প্রসথেসিস কমফোর্টেবল এমআরআই মেশিন দিয়ে এমআরআই করানো৷ খালেদা জিয়ার মস্তিস্কে রক্ত সঞ্চালন পর্যবেক্ষণ করা দরকার৷ তাঁর নার্ভ কন্ডিশন স্টাডিও করতে হবে৷ যেহেতু ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) মাঝে মধ্যে শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখতে পারছেন না, এ কারণে হাঁটলে মনে হয় তিনি পড়ে যাবেন৷ সেজন্য আমরা বলেছি, এসব সুযোগ-সুবিধা আছে ইউনাইটেড হাসপাতালে৷ চিকিৎসক হিসেবে তাঁকে দ্রুত সেখানে ভর্তি করানোর পরামর্শ দিয়েছি৷ শিগগিরই এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আমরা আশা করছি৷''

খালেদা জিয়ার আরেকজন ব্যক্তিগত চিকিৎসক নিউরো সার্জন অধ্যাপক সৈয়দ ওয়াহিদুর রহমানও শনিবার চিকিৎসক দলের সঙ্গে খালেদা জিয়াকে দেখতে কারাগারে যান৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘‘উনি (খালেদা জিয়া) আগে থেকেই কিছু ক্রনিক্যাল ডিজিজে ভুগছেন৷ তাঁর আর্থারাইটিসের (বাত) সমস্যা আছে অনেক আগে থেকেই৷ তাঁর সারা শরীরে ব্যথা৷ তাঁর দীর্ঘকালের ডায়াবেটিস এবং ব্লাড প্রেসার আছে৷ তাঁর প্রস্রাবের ইনফেকশন আছে৷ এবং বার বার ইনফেকশন হওয়ায় কিডনি দুর্বল হয়ে যাচ্ছে৷ ওনার রাতে রাতে একটু একটু করে জ্বর হচ্ছে৷ ওনার উঠতে বসতে একটু অসুবিধা হচ্ছে৷ এবং আগে দুই চোখেই অপারেশন হওয়ায় চোখ দু'টি লাল হয়ে আছে৷''

তিনি বলেন, ‘‘সর্বশেষ পাঁচ তারিখ তিনি মাথা ঘুড়ে পরে যান৷ তাঁর সাথে থাকা এটেনডেন্ট মেয়েটি তাঁকে তোলে৷ এই যে ৫ থেকে ৭ মিনিটে তিনি পড়ে গেলেন এবং তাঁকে তোলা হল - এই সময়ের ঘটনা তিনি মনে করতে পারছেন না৷ উনি বসে থাকতে পারছেন৷ কিন্তু হাঁটলে বা দাঁড়ালে যেকোনো একদিকে হেলে যাচ্ছেন৷''

তিনি বলেন, ‘‘এখন যেটা হয়েছে তাকে আমরা বলি ব্রেইনে ট্রানজিয়েন্ট স্কিমিক অ্যাটাক৷ এর ফলে মস্তিস্কে রক্ত চলাচল স্বাভাবিকের চেয়ে কম হয়৷ এখন উনি স্বাভাবিক আছেন৷ কিন্তু ভয়ের ব্যাপার হল আগে যে তাঁর রোগ এবং বর্তমান যে অবস্থা এবং যা বয়স তাতে তিন মাসের মধ্যে স্ট্রোকে টার্ন করতে পারে৷ এখনো হয়নি৷ তবে আশঙ্কা আছে৷'' 

Wahidur Rahman.mp3 - MP3-Stereo

এদিকে খালেদা জিয়া যে ৫ জুন মাথা ঘুড়ে পরে গিয়েছিলেন সে খবর কারা কর্তৃপক্ষের কাছে ছিল না বলে শনিবার জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল৷ খালেদা জিয়াকে কখন হাসপাতালে নেওয়া হবে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমরা দুপুরের পর নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলাম৷ কিন্তু ঠিক কখন খালেদা জিয়াকে পরীক্ষার জন্য নেওয়া হবে তা নির্ধারণ করবেন আইজি প্রিজন্স৷ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (বিএসএমএমইউ) বড় বড় চিকিৎসক ও গবেষকরা রয়েছেন৷ আর খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসকেরা তো আছেনই৷ সুতরাং সেখানেই তাঁর চিকিৎসা হবে৷''

প্রসঙ্গত, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা জানতে রবিবার কারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও দায়িত্বশীল কারো বক্তব্য জানা যায়নি৷ তবে নাম প্রকাশ না করে কারাগারের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘‘খালেদা জিয়া ৫ জুন মাথা ঘুড়ে পরে গিয়েছিলেন সত্য৷ তবে এটা রোজা রাখার কারণে হয়েছিল বলে আমরা মনে করি৷''

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় গত ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত৷ ওই দিনই তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়৷