গলা পর্যন্ত গোবরে ভারতের ছয় বিকলাঙ্গ শিশু
২৭ ডিসেম্বর ২০১৯মধ্যযুগের ঘটনা নয়৷ একুশ শতকের ডিজিটাল ভারতেও ঘটছে এমন ঘটনা৷ সূর্যগ্রহণের দিনে ছয় বিকলাঙ্গ শিশুকে গলা পর্যন্ত ডুবিয়ে রাখা হল গরুর গোবরে৷ পরিবারের বিশ্বাস, এর ফলে তাদের শারীরিক অক্ষমতা ঠিক হয়ে যাবে৷
বৃহস্পতিবার ঘটনাটি ঘটেছে দক্ষিণ ভারতের কর্নাটকের একটি গ্রামে৷ এদিন সকালে বছরের শেষ সূর্যগ্রহণ দেখেছে গোটা বিশ্ব৷ কালো চশমা পরে সূর্যগ্রহণ দেখার ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী৷ আর ঠিক তখনই কর্নাটকের ওই গ্রামে ছয় শিশুকে গলা পর্যন্ত গরুর গোবরে ডুবিয়ে রেখে দেয় তাদের পরিবার৷ আশা, এর ফলে সুস্থ হয়ে যাবে তারা৷ প্রায় তিন ঘণ্টা ওই অবস্থাতেই ছিল শিশুগুলি৷ পরে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় যুক্তিবাদী সমিতির কর্মীরা৷ শিশুদের উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে৷ আপাতত তারা একটি হোমে আছে৷
আক্রান্ত শিশুদের বয়স ৫ থেকে ১১৷ পরিবারগুলির দাবি, তারা শুনেছে, গরুর গোবর পবিত্র৷ স্থানীয় এক ওঝা তাদের বলেছিল গ্রহণের সময় গ্রামের বাইরে জমিয়ে রাখা গোবরের পিটে তাদের গলা পর্যন্ত ডুবিয়ে রাখলে শারীরিক সমস্যা কেটে যাবে৷ যদিও এখনও পর্যন্ত ওই ওঝার সন্ধান পাওয়া যায়নি৷
শিশুদের যাঁরা উদ্ধার করেছেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম ভীমারায়৷ সংবাদমাধ্যমকে তিনি জানিয়েছেন, ''কুসংস্কারসমাজের কতটা গভীরে, এ ধরনের ঘটনা দেখলে তা বোঝা যায়৷ এ ধরনের সংস্কার কাটানোর জন্য সরকার কোনওই ব্যবস্থা নেয় না৷'' ঘটনাস্থলে পৌঁছে শিশুদের উদ্ধার করে ভীমারায়সহ অন্যরা তাদের নিয়ে যান স্থানীয় হাসপাতালে৷ সেখানে এক শল্য চিকিৎসকের সঙ্গে তাঁরা যোগাযোগও করেছেন৷ চিকিৎসক জানিয়েছেন, বিনামূল্যে শিশুদের অপারেশন করে শারীরিক সমস্যার সমাধান করা হবে৷
ভীমারায়ের বক্তব্য, চিকিৎসার সুযোগ আছে৷ কিন্তু সেই চিকিৎসা সংস্কারগ্রস্ত সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া যাচ্ছে না৷ রাজনৈতিক দলগুলি ভোটের জন্য গ্রামে গ্রামে প্রচার করতে যায়, কিন্তু সরকার গঠনের পরে তারা আর গ্রামমুখী হয় না৷ সংস্কারের বিরুদ্ধেও কোনও পদক্ষেপ হয় না৷
ছয় শিশুকেই এখন রাখা হয়েছে একটি সরকারি হোমে৷ শিশু সুরক্ষা বিভাগ তাদের দেখভাল করছে৷ কিন্তু তাদের নিয়ে এর পর কী করা হবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়৷ শিশুদের পরিবারগুলি অবশ্য তাদের বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চাইছে৷
এসজি/কেএম (টাইমস অফ ইন্ডিয়া, হিন্দুস্তান টাইমস)