1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘ঘুস দুর্নীতিতে কলুষিত সমাজ’

২৮ নভেম্বর ২০১৭

আইনের ফাঁকফোকর গলিয়েই অপরাধীরা পার পেয়ে যাচ্ছে, সাজা হচ্ছে নিরাপরাধীর৷ সুপ্রিম কোর্টের প্রবীণ আইনজীবী মনসুর হাবিব মনে করেন, ঘুস দুর্নীতির ফলে যারা অন্যায় করছে তাদের সাজা দেয়ার ব্যবস্থাও হারিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশে৷

https://p.dw.com/p/2oFW7
Bangladesch Justitia-Skulptur wieder aufgestellt
ছবি: Getty Images/AFP

ডয়চে ভেলে: অনেক আসামি গোপনে বের হয়ে যাচ্ছে, এর কারণ কী?

অ্যাডভোকেট মনসুর হাবিব: যিনিই জেলখানায় থাকবেন, তার বের হতে গেলে হয় খালাসের আদেশ লাগবে, নতুবা জামিনের আদেশ লাগবে৷ এর একটা ছাড়া কোনোভাবেই তিনি বের হতে পারবেন না৷

ফৌজদারি অপরাধে আসামি দোষী প্রমাণিত হলেও পরে মুক্তি পায়, এটা কি বিচার বিভাগের কোনো ত্রুটি না আইনের ফাঁক-ফোকর?

এটাও খুবই অসম্ভব ব্যাপার৷ যেমন দু'সপ্তাহ আগের একটা ঘটনার কথা ধরুন৷ ঝিনাইদহের একটা মেয়ে ভগ্নিপতির বাড়ি যাচ্ছিল৷ দু'জন লোক তাকে ধরে নিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করল৷ মেয়েটা চিৎকার করলে আশেপাশের লোক ছুটে এলো৷ এতে লোক দু'টি পালিয়ে গেল৷ মেয়েটা থানায় মামলা করতে গেল৷ কিন্তু থানা মামলা নিল না৷ পরে মেয়েটা ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে গেল৷ সেখানে মামলা হল৷ মেয়েটা সাক্ষী দিল, প্রত্যক্ষদর্শীরাও সাক্ষী দিল৷ কিন্তু ম্যাজিস্ট্রেট বলল মামলা প্রমাণ হয়নি৷ ফলে আসামীরা খালাস পেয়ে গেল৷ এরপর মেয়েটা আমার কাছে এলো৷ প্রায় এক-দেড় বছর চেষ্টার পর উচ্চ আদালতে আমি প্রমাণ করলাম যে, মেয়েটাকে ধর্ষণের চেষ্টা হয়েছিল৷ দু'সপ্তাহ আগে আদালত ঐ মামলায় আসামীদের পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে৷ তার মানে একবার খালাস হলেই পার পেয়ে যাবে, তেমনটা নয়৷ সেক্ষেত্রে আপনি উচ্চ আদালতে যেতে পারেন৷

Advocate Monsur Habib for dwAlaap - MP3-Stereo

আইনে তো নিশ্চয় ফাঁকফোকর আছে?

আইনের কোনো ফাঁক নেই৷ এটা হচ্ছে কথার কথা৷ প্রাচীন আমলের একটা প্রবাদ বাক্য আছে আর সেটা হলো – আইনের ফাঁক গলে শত শত অপরাধী বেরিয়ে যাক, কিন্তু একজন নিরাপরাধীও যেন শাস্তি না পায়৷ এটা সভ্য জাতির হাজার বছরের প্রবাদবাক্য৷ এ সব বিখ্যাত ব্যক্তিরা বলছেন, শত শত অপরাধী শাস্তি না পেলেও তেমন কোনো ক্ষতি নেই৷ কিন্তু একজন নিরাপরাধ ব্যক্তি যদি সাজা পান, তাহলে মস্ত বড় ক্ষতি৷ তবে আমাদের দেশে কোর্ট-কাচারিতে দুর্নীতি আছে৷ এরপরেও অবশ্য আমার আদালতের প্রতি আস্থা আছে৷

আইনজীবীরা অনেক সময় আদালতে তথ্য গোপন করেন? এটা কেন?

আইনজীবী কখনও তথ্য গোপন করতে পারেন না৷ ফৌজদারি মামলায় আগে মামলা হয়, তারপর পুলিশ তদন্ত করে রিপোর্ট দেয়৷ এরপর আদালতে এলে উভয় পক্ষের শুনানি হয়৷ সাক্ষীরা সাক্ষ্য দেন৷ এখানে তথ্য গোপনের কোনো সুযোগ নেই৷ ‘ভিকটিম' তো নিজেই সব কথা বলছেন৷ এখানে আসামীর তথ্য গোপনের সুযোগ নেই৷ তবে তার কিছু গোপন করার সুযোগ আছে৷ যেমন তিনি যে আগেও দু'টো মামলায় শাস্তি পেয়েছেন, সেটা তিনি গোপন করতে পারেন৷

আইনের ফাঁক-ফোকরে কি পুলিশ কোনো সুবিধা নিচ্ছে?

আমাদের দেশে পুলিশ কী করছে জানেন? একটা উদাহরম দেই৷ পুলিশ ইয়াবা ধরল৷ কিন্তু যাদের ধরল, তাদের সাথে সমঝোতা হয়ে গেল৷ তার মানে পুলিশ ভাগ পেল, স্থানীয় রাজনীতিবিদরা ভাগ পেলেন৷ তারপর বিষয়টা আর আদালত পর্যন্ত গেলই না৷ এখন তো দেশে এটাই হচ্ছে৷ পুলিশ অপরাধীদের সাহায্য করছে৷ এর সঙ্গে স্থানীয় রাজনীতিবিদরাও জড়িত৷

অনেক অপরাধীর ঠিকমতো সাজা হয় না, এটা আইনের দুর্বলতার কারণে নাকি অন্য কোনো কারণে?

আমাদের দেশে কোনো ঘটনা ঘটলে পুলিশ সেটার তদন্ত করে৷ আবার তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ আসামীকে ফেরার করতে পারে৷ সাক্ষী নষ্ট করতে পারে৷ ফলে মামলাটাকে দুর্বল করে দিতে পারে৷ এটা তো আমাদের সমাজে হামেশাই হচ্ছে৷

আমাদের বিচার ব্যবস্থার সঙ্গে অনৈতিক আর্থিক কর্মকাণ্ডের কি কোনো যোগসূত্র আছে?

আমাদের সমাজ ব্যবস্থাটাই আসলে কলুষিত৷ ঘুস বলেন, দুর্নীতি বলেন, সবই চলে আমাদের সমাজে৷ ফলে দেশটা  সুষ্ঠুভাবে চলছে না, গণতান্ত্রিকভাবে চলছে না৷ গণতন্ত্রের চর্চাটাও হচ্ছে না৷ এখানে হঠাৎ করেই মানুষ হারিয়ে যাচ্ছে৷ আর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এটা করছে৷ দেশে একটা অস্থিরতা চলছে৷ হাজার হাজার কোটি টাকা লুট হচ্ছে৷ এটা কারা করছে? উপর মহলের লোকজনই তো করছে, তাই না? অতএব এই সমাজে বিচারকরাও আছেন, সাধারণ মানুষও আছে৷ কেউ তো এই সমাজের বাইরে না!

আসামিদের প্রভাব কি আদালতে কোনো ভূমিকা রাখে?

অবশ্যই রাখে৷ যেমন ধরুন নারায়ণগঞ্জের ত্বকী হত্যা, সাত খুনের ঘটনা৷ এখানে আসামী যত প্রভাবশালী হবেন, তার জন্য ততরকম ব্যবস্থা থাকবে৷ ভালো আইনজীবী থাকবেন, রাজনৈতিক নেতারা থাকবেন...৷

যৌতুকের কারণে যারা অভিযুক্ত হন বা নারী নির্যাতনের মামলায় অভিযুক্তদের কি পর্যাপ্ত শাস্তি হচ্ছে?

যৌতুকের মামলার ৯০ ভাগই মিথ্যা৷ যৌতুকের মামলায় সাজার আছে৷ কিন্তু মামলা যদি মিথ্যা হয় তাহলে সাজা হবে কীভাবে? আর নারী নির্যাতনের মামলার যেগুলো আসল, সেগুলোতে তো সাজা হচ্ছে৷

আইনের যে ফাঁকফোকরের কথা আমরা বলছি, সেটা বন্ধে আপনার পরামর্শ কী?

আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত করতে হবে, শাসক শ্রেণিকে গণমুখী হতে হবে৷ ইংল্যান্ডের দিকে তাকালে দেখবেন, এক হাজার বছর ধরে তাদের সমাজটা কীভাবে গড়ে উঠেছে৷ ইংল্যান্ড সারা পৃথিবী জয় করে সারা বিশ্ব থেকে সম্পদ নিয়ে দেড়শ' বছর আগে মাটির নীচে রেললাইন করেছে৷ আর আমাদের দেশে যারা দুর্নীতি করে কোটি কোটি টাকার মালিক হচ্ছেন, তারা টাকা দেশে রাখছেন না, বিদেশে পাঠাচ্ছেন৷ আমাদের দেশে যারা অন্যায় করে তাদের সাজা দেয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই৷ আসল কথা হলো, গণতন্ত্রের কোনো বিকল্প নেই৷ গণতন্ত্র মানে আসল গণতন্ত্র, তথাকথিত গণতন্ত্র না৷ আমার মতে, মানুষের কল্যাণের গণতন্ত্র থাকতেই হবে৷

আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷

ডয়চে ভেলের ঢাকা প্রতিনিধি সমীর কুমার দে৷
সমীর কুমার দে ডয়চে ভেলের ঢাকা প্রতিনিধি৷
স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য