চকলেট কি আদৌ উপকারী?
১৭ মার্চ ২০১৪চকলেট প্রসঙ্গে কোনো দেশের কথা মনে হয় প্রথমে? নিশ্চয়ই সুইজারল্যান্ডের কথা৷ যেমন নোবেল প্রাইজের ব্যাপারে মনে ভেসে ওঠে সুইডেনের কথা৷ এই দুই দেশে অনেক চকলেট খাওয়া হয়৷ আর এই দুই দেশ থেকেই এসেছেন বহু নোবেল বিজয়ী৷ চকলেট ও বুদ্ধিমত্তার মধ্যে কি কোনো সংযোগ রয়েছে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছেন নিউইয়র্কের গবেষক ফ্রান্স মেসের্লি৷ তাঁর এই গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করেছেন ‘নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিনে'৷
২৩টি দেশের ওপর সমীক্ষা
সুইজারল্যান্ডে বছরে একজন প্রায় ১২ কিলো চকলেট খেয়ে থাকেন৷ আর এই দেশটি থেকেই সবচেয়ে বেশি নোবেল প্রাইজ বিজয়ী (৩৬) এসেছেন৷ সব মিলিয়ে ২৩টি দেশের ওপর সমীক্ষা চালিয়েছেন মেসের্লি৷
তবে সুইডেনে ৬.৫ কিলোগ্রাম চকলেট খাওয়া হয়৷ অথচ দেশটি থেকে ৩২ জন নোবেল বিজয়ী এসেছেন৷ ‘চকলেট-পরিসংখ্যান' অনুযায়ী, সুইডেনে এই ধরনের বিজ্ঞ ব্যক্তির সংখ্যা ১৪ হওয়ার কথা৷
এই বিষয়টির ব্যাখ্যাও দিয়েছেন মেসের্লি৷ সুইডিশরা এব্যাপারে সংবেদনশীল৷ তাই অল্প চকলেটেই কাজ হয়৷ যা নোবেল পাওয়ার জন্য যথেষ্ট৷ অন্য আরেকটি সম্ভবনার কথাও বলেছেন এই গবেষক৷ নোবেল প্রাইজ কমিটির কেন্দ্র সুইডেনে অবস্থিত৷ তাই পুরস্কারের ব্যাপারে কিছুটা পক্ষপাত থাকতে পারে৷
রসাত্মক গবেষণা
অবশ্য এই গবেষণাকে তেমন গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন না জার্মান পুষ্টি সোসাইটির আঙ্গেলা বেশ্টহোল্ড৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘নানা বৈজ্ঞানিক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে চকলেটের উপাদান মানুষের কর্মদক্ষতার ওপর ইতিবাচক প্রভাব রাখতে পারে৷ আর এর ওপর ভিত্তি করে মেসের্লি সমীক্ষাটি করেছেন৷ কোনো কোনো দিক দিয়ে দুটির মধ্যে একটা সংযোগও লক্ষ্য করেছেন তিনি৷ তবে একে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে নয় বরং রসাত্মক গবেষণা হিসাবে দেখা উচিত৷'' ‘মেসের্লি-পরিসংখ্যান' অনুযায়ী জার্মানির স্থান সপ্তম৷
বিজ্ঞানের জগতে চকলেটের গুণাগুণ নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে৷ বিশেষ করে মানুষের শরীরে কালো ও তিতা স্বাদের চকলেটের প্রভাব নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে৷
ইতিবাচক প্রভাব পেতে প্রচুর চকলেট
শরীরে ইতিবাচক প্রভাব পেতে হলে চকলেটে কমপক্ষে ৭০ শতাংশ কোকো থাকতে হবে৷ রহস্যটা রয়েছে কোকো দানাতে থাকা ‘ফ্লাভোনয়েডস' নামে এক ধরনের উদ্ভিজ উপাদানে৷ এর সংক্রমণ প্রতিরোধী গুণাগুণ রয়েছে৷ যা রক্তের চর্বি নিয়ন্ত্রণ করে, কোলেস্টরেল ও উচ্চ রক্তচাপ কমায়৷ বার্ধক্যের প্রক্রিয়া মন্থর করে৷ স্মৃতিশক্তি ও মানসিক দক্ষতা বৃদ্ধি করে৷ এদিক দিয়ে মেসের্লি ঠিকই বলেছেন৷
আঙ্গেলা বেশ্টহোল্ড বলেন ‘ফ্লাভোনয়েডস'-এর আরো কিছু ইতিবাচক গুণাগুণ রয়েছে৷ এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধশক্তি ও রক্তের ধমনির ওপর ইতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে৷ এর ফলে রক্তচলাচল ভালোভাবে হয়৷ প্রতিরোধ হয় স্ট্রোক ও হার্টঅ্যাটাকের মতো অসুখবিসুখ৷
চকলেট সুখানুভূতির হরমোন ‘সেরোটোনিন' উজ্জীবিত করে৷ এখানে প্রশ্ন জাগতে পারে, সুখি হতে হলে কী পরিমাণ চকলেট খাওয়া প্রয়োজন? উত্তরে বলা যায়, প্রচুর চকলেট৷ চকলেটের একটি বার দিয়ে তা হবে না৷
পুরস্কারসরূপও চকলেট
পুরস্কারস্বরূপও চকলেট দেওয়া হয়৷ ভালো কাজের জন্য কোনো বাচ্চাকে চকলেট দিয়ে পুরস্কৃত করলে এক ধরনের ইতিবাচক অনুভূতি সৃষ্টি হয়৷ যা সুখের অনভূতিও এনে দেয়৷
এবার মন্দের দিকটাও উল্লেখ না করলেই নয়৷ বেশি চকলেট খেলে স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়৷ কালো বা সাদা যে কোনো চকলেটেই থাকে প্রচুর পরিমাণে চিনি ও তৈলাক্ত পদার্থ৷ তাই প্রচুর পরিমাণে চকলেট খেলে ক্যালোরিও গ্রহণ করা হয় বেশি, ওজন বেড়ে যায়৷ দেখা দেয় নানা রকম অসুখ-বিসুখ৷ বলেন পুষ্টি বিজ্ঞানী বেশ্টহোল্ড৷
তবে চকলেট শুধু খেতেই মজা নয়৷ সৌন্দর্য চর্চাতেও সাহায্য করে এই মিষ্টি পদার্থটি৷ মুখের মাস্ক, বাথ কিংবা ম্যাসেজও করা যায় চকলেট দিয়ে৷ এনে দেয় সুখের অনুভূতি৷