1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

চিকিৎসা করাতে এসে লাঠির মুখে রোগিণীর পরিজন

২ জুলাই ২০২৪

বুকে ব্যথার চিকিৎসা করাতে এসেছিলেন সরকারি হাসপাতালে। পুলিশ রোগিণীর পরিজনকে লাঠিপেটা করলো বলে অভিযোগ।

https://p.dw.com/p/4hlhv
কলকাতার ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল।
কলকাতার এই হাসপাতালেই রোগীর পরিবারকে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে। ছবি: Subrata Goswami/DW

কলকাতার দক্ষিণে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। সেখানে চিকিৎসা করাতে এসেছিলেন স্থানীয় এক বাসিন্দা। সঙ্গে ছিলেন পরিবারের সদস্যরা। আপৎকালীন বিভাগে নার্সের কাজকর্ম নিয়ে প্রশ্ন তোলে রোগিণীর পরিবার। সেখান থেকেই গন্ডগোলের সূত্রপাত। সংবাদ মাধ্যমের প্রচারিত ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, পুলিশ ও সিভিক ভলেন্টিয়াররা ঘিরে ধরে তিন-চার জনকে লাঠিপেটা করছে।

রোগীর পরিবারের প্রশ্ন

পার্ক সার্কাসের বাসিন্দা শাহানাজ বেগম রবিবার বুকে ব্যথা অনুভব করেন। যন্ত্রণা বেশি হওয়ায় ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের আপৎকালীন বিভাগে পরিজনরা তাকে নিয়ে যান। চিকিৎসকরা প্রেসক্রিপশনে লিখে দেন, তিনটি ইঞ্জেকশন দিতে হবে রোগিণীকে। আপৎকালীন বিভাগের নার্স তৃতীয় ইঞ্জেকশন দেয়ার পর রোগীর ব্যথা বেড়ে যায় বলে অভিযোগ।

এই পরিস্থিতিতে খুবই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন রোগিণীর কন্যা ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা। কর্তব্যরত নার্সকে তারা প্রশ্ন করেন, কেন তৃতীয় ইনজেকশন দেয়ার পর যন্ত্রণা বেড়ে গেল? অভিযোগ, এই প্রশ্নে কোন সদুত্তর দেননি নার্স। বরং রোগিণীর পরিবারকে বলেন, এ ব্যাপারে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলতে হবে।

নিজেকে নার্সিং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বলে দাবি করে রোগিণীর মেয়ে বলেন, "যেভাবে নার্স ইনজেকশন দিয়েছেন, সেটা সঠিক পদ্ধতি নয়। এরপর যন্ত্রণা বেড়ে গেলে আমরা শুধু প্রশ্ন করেছি। তিনি উত্তর দিতে না পারায় বলেছি, এই চেয়ারে যখন বসে আছেন, জবাব দিতে হবে। কাউকে খারাপ কথা বলা হয়নি। কিন্তু প্রশ্ন করার জন্য আমাদের হেনস্থা করা হয়।"

লাঠিপেটা করার অভিযোগ

হাসপাতালের আপৎকালীন বিভাগে ছোটখাটো উত্তেজনা নিত্যদিনের ব্যাপার। কিন্তু রোববারের গন্ডগোল সেখানেই থেমে থাকেনি। রোগীর পরিবারের অভিযোগ, এরপরই তাদের উপর চড়াও হয় হাসপাতালে কর্তব্যরত নিরাপত্তা কর্মীরা।

শাহনাজের সঙ্গে ছিলেন তার স্বামী, ভাই ও দুই সন্তান। রোগিণী বলেন, "আমার মেয়ে প্রশ্ন করার পর উর্দিধারী পুলিশ ও সিভিক ভলেন্টিয়াররা চলে আসে। আমার স্বামীর কলার ধরে বার করা হয়। একজন পুরুষ পুলিশ কর্মী আমার মেয়েকে টানতে টানতে বার করে নিয়ে যায়। এর প্রতিবাদ করায় ঘিরে ধরে লাঠিপেটা করে পুলিশ ও সিভিক ভলেন্টিয়ার।"

যে ভিডিও প্রকাশ্যে এসেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে রোগিণীর পরিবারের সদস্যদের লাঠিপেটা করছে খাঁকি উর্দির দুই পুলিশ ও নীল পোশাকের এক সিভিক ভলেন্টিয়ার। হাসপাতাল চত্বরেই এই ঘটনা ঘটে। সেই সময় অন্যান্য রোগী ও তাদের পরিজনরা অবাক হয়ে এই ঘটনা দেখেন। এই ভিডিওর সত্যতা ডিডব্লিউ যাচাই করেনি। তবে অভিযোগের পক্ষে ভিডিও হয়ে উঠেছে সবচেয়ে বড় হাতিয়ার।

হাসপাতাল সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন রোগিণী। অভিযোগ করা হয়েছে থানাতে। শাহনাজের দাবি, সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখলে বোঝা যাবে কীভাবে লাঠিপেটা করা হয়েছে। স্বাস্থ্য ভবন এই ঘটনা সম্পর্কে রিপোর্ট চেয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে।

রোগিণীর দাবি, বেদম লাঠিপেটায় গুরুতর আঘাত লেগেছে তার স্বামী ও ভাইয়ের। তাদের প্রশ্ন, চিকিৎসা করাতে এসে কেন লাঠিপেটা খেতে হল? তারা কী অপরাধ করেছেন?

সিভিকের এক্তিয়ারে প্রশ্ন

প্রচারিত ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, দুই পুলিশ কর্মী ও এক সিভিক ভলেন্টিয়ার লাঠি চালাচ্ছে। সিভিক ভলেন্টিয়ারদের হাতে লাঠি থাকলেও তা এভাবে ব্যবহার করার কথা নয়। কেন ওই সিভিক কর্মী লাঠিপেটা করল, কার নির্দেশে করল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

সিভিক ভলেন্টিয়াররা শুধু পুলিশকে সহযোগিতা করে থাকেন। তাদের বিশেষ ভূমিকা থাকে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে। পুজো, মেলা বা উৎসবের সময় এদের বড় সংখ্যায় মোতায়েন করা হয়। রাজ্য সরকার কিছু পারিশ্রমিকের বিনিময়ে এই সিভিক কর্মীদের নিয়োগ করেছে। এদের এক্তিয়ার সম্পর্কে হাইকোর্টেরও নির্দেশ রয়েছে। তা সত্ত্বেও সিভিক ভলেন্টিয়ারকে লাঠিপেটা করতে দেখা গেল হাসপাতাল চত্বরে!

সাবেক পুলিশকর্তা সলিল ভট্টাচার্য বলেন, "সিভিক ভলেন্টিয়ারের ভূমিকা হাইকোর্টের নির্দেশকে অগ্রাহ্য করেছে। হাসপাতালে রোগিণীর পরিবার ভাঙচুর করেনি, তারা দল বেধে গিয়ে চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মীর গায়ে হাত দেয়নি, তবু তাদের কেন লাঠিপেটা খেতে হবে? একজন অসুস্থ প্রবীণ নাগরিক ও তার পরিবারের তিন সদস্য এমন কি অনর্থ করলেন যে, তাদের ওভাবে প্রকাশ্যে লাঠিপেটা করতে হবে? এটা পুলিশেরই কলঙ্ক। হাসপাতালে যে পুলিশ অফিসার দায়িত্বে ছিলেন, তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত অবিলম্বে শুরু করা উচিত।"

এরকম ব্যবহার সত্যিই খুব দুর্ভাগ্যজনক: সজল

মাত্র তিন-চার জনকে সামলানোর মতো পর্যাপ্ত পুলিশ ও সিভিক ভলেন্টিয়ার হাসপাতালের আউটপোস্টে ছিল। তবু কেন লাঠিপেটা করতে হল, কী এমন ঘটনা ঘটেছিল, কতটা আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছিলেন রোগিণীর পরিবার, এই প্রশ্ন উঠেছে।

তৃণমূল এই ঘটনাকে অনভিপ্রেত, অবিচ্ছিন্ন হিসেবে দেখছে। দলের মুখপাত্র শান্তনু সেন বলেন, "রাজ্যের ১০০ শতাংশ মানুষ সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উপর নির্ভর করেন। আগে একটা ইনজেকশন কিনতেও বাইরে যেতে হত। এখন হাসপাতালে সেটা পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে যে ঘটনা ঘটেছে, সেটা নিন্দনীয়। যারা এ কাজ করেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।"

দুদিন আগেই উত্তরবঙ্গে এক যুগলকে প্রহারের ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। তার সঙ্গে তালিবানি শাসনের তুলনা টানছে বিরোধীরা। ন্যাশনাল মেডিক্যালের ঘটনাকে একই বন্ধনীতে রাখতে চাইছেন অনেকে। তবে বিজেপি মুখপাত্র বিমলশঙ্কর নন্দ বলেন, "এটাকে তালিবানি না বলে তৃণমূলের কায়দায় শাসন বলা ভালো। চিকিৎসা করাতে এসে এভাবে মার খেতে হবে? তৃণমূল বলছে, কাদের বিরুদ্ধে সব ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। পারবেন ওখানকার বিধায়কের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে?"

সার্ভিস ডক্টরস ফোরামের রাজ্য সম্পাদক ডা. সজল বিশ্বাস বলেন, "রোগীকে চিকিৎসা করাতে এনে তার পরিজনরা হাসপাতালে খুবই উদ্বেগের মধ্যে থাকেন। তাদের সঙ্গে এরকম ব্যবহার সত্যিই খুব দুর্ভাগ্যজনক। ঠিক কী ঘটেছিল তা তদন্ত করে দেখা দরকার। চিকিৎসকের বিরুদ্ধে রোগীর পরিবারের অভিযোগ তেমন নেই। কিন্তু তাদের কেন লাঠিপেটা করা হল, সেটা খতিয়ে দেখতে হবে।"

ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি পায়েল সামন্ত৷
পায়েল সামন্ত ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি৷