1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

চিকিৎসা ক্ষেত্রে আলোড়ন সৃষ্টিকারী উভচর ‘আক্সোলোটল’

৫ এপ্রিল ২০১১

মেক্সিকোর গিরগিটিসদৃশ এক ধরনের উভচর প্রাণীর নামটাও অদ্ভুত ‘আক্সোলোটল’ অর্থাৎ জলদৈত্য৷ জার্মানির হানোফার শহরের মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা এই প্রাণীটির প্রকৃতিপ্রদত্ত বিশেষ ক্ষমতা নিয়ে গবেষণা করছেন এখন৷

https://p.dw.com/p/10nY0
এই প্রাণীটির কোন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ কাটা পড়লেও আবার তা গজিয়ে উঠেছবি: picture-alliance/Evolve/Photoshot

আক্সোলোটল-এর গুণাগুণ

প্রায় ২০ সেন্টিমিটার দীর্ঘ এই প্রাণীটির কোন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ কাটা পড়লেও আবার তা গজিয়ে উঠতে পারে৷ নিজ থেকেই রক্তক্ষরণও বন্ধ হয়ে যায় কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে৷ এই বিষয়টি গবেষকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে৷ কঠিন দুর্ঘটনায় আহত রোগীদের চিকিৎসায় এই বিশেষ নৈপুণ্য কাজে লাগানো যায় কিনা, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করছেন তাঁরা৷

জার্মানির হানোফার মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োরিজেনারেশন সেন্টার এব্যাপারে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে৷ শোনা যাচ্ছে সেখানকার যন্ত্রপাতির আওয়াজ৷ ঘরটাও ঠাণ্ডা৷ অ্যাকোয়ারিয়ামে পানির উষ্ণতাও ১৬ ডিগ্রির বেশি নয়৷ এর চেয়ে বেশি গরম হলে সরীসৃপগুলি অসুস্থ হয়ে পড়বে৷

গবেষক ক্রিস্টিনা আলমেলিং জানান, ‘‘আমাদের বায়োরিজেনারেশন সেন্টারে শুধু গবেষণা নয়, জীবগুলোর সুরক্ষা ও প্রজননের দিকেও লক্ষ্য রাখা হচ্ছে৷ আমরা বিশেষ করে মেক্সিকোর লেজযুক্ত উভচর প্রাণী বা আক্সোলোটল নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করছি৷ এগুলিকে সহজেই লালন পালন করা যায়৷ সারা জীবনই তারা পানিতে কাটায়৷ এদের বংশবিস্তারের বিযয়টিও ভালভাবে পরীক্ষা করা হয়েছে৷''

Ein Axolotl
এই প্রাণীটির বিশেষ ক্ষমতা নিয়ে গবেষণা করছেন বিজ্ঞানীরাছবি: picture alliance/dpa


হুমকির মুখে এই প্রাণীগুলি

পরিবেশ দূষণের কারণে উৎপত্তিস্থল মেক্সিকোতে এই সরীসৃপগুলিকে প্রায় দেখাই যায়না৷ বিজ্ঞানের দিক দিয়ে আকর্ষণীয় না হলে এই প্রাণীগুলি হয়তো একেবারেই নিশ্চিহ্ন হয়ে যেত৷ হানোফারের গবেষণাগারে ১২০টি আক্সোলোটল রয়েছে৷ অলস ভঙ্গিতে অ্যাকোয়ারিয়ামের এদিক সেদিকে অবস্থান করছে তারা৷ দেখলে মনেই হবেনা, যে তাদের অসাধারণ গুণাগুণ রয়েছে৷

ক্রিস্টিনা আলমেলিং-এর ভাষায়, ‘‘অ্যাম্ফিবিয়াস আক্সোলোটল পুনরুজ্জীবনের ক্ষেত্রে এক বিস্ময়৷ কোনো দুর্ঘটনায় বা অন্য কোনো জন্তুর কামড়ে কোন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ কাটা পড়লে আবার তা গজিয়ে ওঠে তাদের শরীরে৷ ঠিক এই বিষয়টি আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ৷''

অঙ্গচ্ছেদ হয়ে যাওয়ার পর কী ঘটে তা দেখার জন্য বিজ্ঞানীরা পরীক্ষামূলক অপারেশন করেন৷ বিজ্ঞানী বিয়র্ন মেনগার একটি আক্সোলোটলকে ন্যার্কোটিক দিয়ে অচেতন করে তার একটি পা অপারেশন করে ছেদ করেন৷ যার বর্ণনা দেন তিনি এভাবে: ‘‘সাধারণ অপারেশনের মতই আমরা একটি অঙ্গচ্ছেদ করি৷ কাটার ক্ষতটাতে কোনো ওষুধও লাগাতে হয়নি৷ কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই রক্তপাত বন্ধ হয়ে যায়৷ অত্যন্ত দ্রুত ঘটে যায় এ সব৷ অঙ্গচ্ছেদ একটি অতি সাধারণ ব্যাপার৷''


ডক্টরেটের থিসিসে আক্সোলোটল

ডক্টরেটের থিসিসের জন্য আক্সোলোটল-এর ওপর ৩০০ বারের মত এই ধরনের অপারেশন করেছেন বিয়র্ন মেনগার৷ প্রত্যেকবারই অবাক হয়ে লক্ষ্য করেছেন যে, সেকেন্ডের মধ্যেই রক্তপাত বন্ধ হয়ে যায়৷ এবং কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে মাংসের তন্তু দিয়ে ঘা টাও বন্ধ হয়ে যায়৷ এ প্রসঙ্গে গবেষণাগারের পরিচালক ড. ক্যার্স্টিন রাইমার্স বলেন, ‘‘স্তন্যপায়ী প্রাণীদের তুলনায় ভিন্নভাবে ঘটে ব্যাপারটা৷ ‘ঘা' টা শুকোনোর সাথে সাথে তার নীচের অংশও ভাল হয়ে যায়৷ কয়েকদিনের মধ্যে পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু হয় এবং কাটা পা টা আবার বেড়ে উঠতে থাকে৷''

কয়েক সপ্তাহের মধ্যে নতুন পা সম্পূর্ণ আকার ধারণ করে৷ এই প্রক্রিয়াটা কীভাবে ঘটে সেটা জানতেই এখন বিজ্ঞানীরা উৎসুক৷ কোনো কোনো মাছের মধ্যেও দেখা যায় এই ধরনের পুনরুজ্জীবনের প্রক্রিয়া৷ কিন্তু চারপায়ী মেরুদণ্ডযুক্ত প্রাণী হিসাবে আক্সোলোটল জিনের দিক দিয়ে মানুষের কাছাকাছি৷ তাই এই উভচরের প্রকৃতিদত্ত বিশেষ দক্ষতা মানুষের ক্ষেত্রেও কাজে লাগানো যেতে পারে বলে আশাবাদী বিজ্ঞানীরা৷ তা হলে চিকিৎসা ক্ষেত্রে এক বিশাল দ্বার খুলে যাবে বলে মনে করেন প্লাস্টিক সার্জারি বিশেষজ্ঞ ডা. বিয়র্ন মেন্গার৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘মানুষের চামড়া বা হাড়ে বড় রকমের আঘাত বা খুঁত হলে নিজের শরীরের কোষ প্রতিস্থাপন করেও অনেক সময় ভাল হয়না৷ তাই চিকিৎসকরা এমন এক পদ্ধতির খোঁজ করছেন, যার সাহায্যে পুনর্গঠন প্রক্রিয়াটা সহজ হয়৷ এক্ষেত্রে উভচরের প্রকৃতিদত্ত ক্ষমতাটা কাজে লাগাতে চান তাঁরা৷''

বিজ্ঞানীরা এমন এক ওষুধ তৈরি করতে চান, যার মাধ্যমে দুর্ঘটনায় অঙ্গ প্রত্যঙ্গ কাটা গেলে আক্সোলোটলের মতই দ্রুত আরোগ্যলাভ সম্ভব হয়৷ ড. ক্যার্স্টিন রাইমার্সের অবশ্য আকাঙ্ক্ষাটা আরো বেশি৷ সেটাই শোনা গেল তাঁর কণ্ঠে – ‘‘আমাদের স্বপ্ন, মানুষের শরীরে পুনরুজ্জীবন প্রক্রিয়ার শক্তিটা এমনভাবে বাড়ানো, যাতে মানুষের অঙ্গ প্রত্যঙ্গও স্বয়ংক্রিয়ভাবে পুনরুজ্জীবিত হতে পারে৷''

প্রতিবেদন: রায়হানা বেগম

সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন