চীনের ভুয়া বন্ধু-বান্ধবীদের কথা

চীনে নতুন বছরের ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে গেলে বিবাহযোগ্য ছেলে বা মেয়েকে পরিবারের বয়স্ক সদস্যরা তাড়াতাড়ি বিয়ে করার জন্য চাপ দেন৷ পরিস্থিতি সামাল দিতে এসেছে কিছু মোবাইল অ্যাপ আর ওয়েবসাইট৷ এ সবের মাধ্যমে ছুটির সময়টুকুর জন্য অর্থের বিনিময়ে মেয়ে কিংবা ছেলে বন্ধু জোটানো যায়৷

বিষয়টা কীভাবে কাজ করে, তা জানতে চীনের ব্লগার ঝাও ইয়ুকিং (ছবিতে যাকে দেখছেন) গত বছরের জানুয়ারিতে (২০১৭ সালে চীনা নববর্ষ ছিল ২৮ জানুয়ারি) একজনের ভুয়া বান্ধবী হয়েছিলেন৷ এরপর পুরো ঘটনার অভিজ্ঞতা নিয়ে একটি ব্লগ লেখেন৷

ভুয়া বান্ধবী হতে আগ্রহ প্রকাশ করে অনলাইনে বিজ্ঞাপন দেয়ার পর প্রায় ৭০০ জন ইয়ুকিংকে গার্লফ্রেন্ড হিসেবে পেতে আগ্রহের কথা জানায়৷ এর মধ্য থেকে ওয়েবসাইট অপারেটর ত্রিশোর্ধ্ব ওয়াং কুয়ানমিংকে (ছবিতে যাকে দেখছেন) বেছে নেন তিনি৷ এই চুক্তির কথা জানতে পেরে এই জুটির সঙ্গে কুয়ানমিংয়ের বাড়িতে যাওয়ার ইচ্ছাপোষণ করেন এক আলোকচিত্রী৷ ছবিঘরের ছবিগুলো তাঁরই তোলা৷

ব্লগার ইয়ুকিং ওয়েবসাইট অপারেটর কুয়ানমিংয়ের সঙ্গে ফুজিয়ান রাজ্যে তাঁর (কুয়ানমিং) গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলেন৷ যাওয়ার আগে দুজনের মধ্যে হাতে লেখা একটি চুক্তি (ছবিতে দেখা যাচ্ছে) হয়৷ এতে তাঁদের মধ্যে চুম্বন বিনিময় হবে না, তাঁরা একসঙ্গে ঘুমাবেন না কিংবা পান করবেন না বলে সম্মত হন৷ তবে ঘরের কাজে কুয়ানমিংয়ের মা-বাবাকে সহায়তা করবেন বলে রাজি হয়েছিলেন ইয়ুকিং৷

বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়ার আগে লিখিত চুক্তি ছাড়াও নিজেদের মধ্যে আলোচনা সেরে নেন ইয়ুকিং আর কুয়ানমিং৷ সেই সময় তাঁরা পরিবারের সামনে নিজেদের মধ্যকার দীর্ঘদিনের সম্পর্কের বানানো গল্প কীভাবে এবং কতটুকু বলবেন, তা আলোচনা করে নিয়েছিলেন৷

কুয়ানমিংয়ের বাড়িতে যাওয়ার পর ইয়ুকিংকে বেশ ভালভাবে গ্রহণ করেন কুয়ানমিংয়ের মা নং চিওরং (ছবিতে যার মুখ দেখা যাচ্ছে )৷ ইয়ুকিং যেন নিজের বাড়ি মনে করে সেখানে থাকতে পারেন সেই ব্যবস্থা করেছিলেন চিওরং৷ এছাড়া ছেলে কুয়ানমিং ইয়ুকিংয়ের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের ব্যাপারে বেশি কিছু জানতে না চাইতে, মা চিওরংকে অনুরোধ করেছিলেন৷ চিওরং ছেলের এই অনুরোধ রেখেছিলেন৷

কুয়ানমিংয়ের বাড়িতে সবকিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটেছে৷ কুয়ানমিংয়ের পরিবারের সদস্যরা সত্যটা ধরতে পারেনি৷ সেখানে গিয়ে ইয়ুকিংয়ের বেশ ভালো অভিজ্ঞতা হয়৷ বিষয়টি তিনি পরবর্তীতে তাঁর ব্লগে তুলে ধরেন৷

ইয়ুকিংয়ের ব্লগ মা চিওরংকে দেখিয়েছেন কুয়ানমিং৷ তবে চিওরং জানান, সত্যটা জানার পর তাঁর মেজাজ বিগড়ে যায়নি৷ বরং ইয়ুকিংয়ের ব্লগ পড়ে তিনি আপ্লুত হয়েছেন বলে জানান৷ অবশ্য এই ঘটনার পর ছেলের বিয়ে নিয়ে আবারও চিন্তিত হয়ে পড়েছেন বলে জানিয়েছেন চিওরং৷

চীনে গ্রামে থাকা মা-বাবাদের এই আগ্রহের জন্য ফেক গার্লফ্রেন্ড ও বয়ফ্রেন্ড খোঁজার অ্যাপ এবং ওয়েবসাইটের বেশ প্রচলন শুরু হয়েছে৷ ফলে বিশোর্ধ্ব ও দেখতে সুন্দর ছেলে বা মেয়ে ছুটির সময় ৪৩৬ থেকে ১,৪৫৩ ডলার পর্যন্ত আয় করে থাকে৷