‘বারো বছর ধরে ক্রীতদাস’
২১ অক্টোবর ২০১৩‘‘টুয়েল্ভ ইয়ার্স আ স্লেভ'' নামক ছবিটির চিত্রপরিচালক ব্রিটিশ স্টিভ ম্যাককুইন৷ সলোমন নর্থাপ নামধারী এক কৃষ্ণাঙ্গের বাস্তব জীবনকাহিনীর উপর ভিত্তি করে ছবি৷ নর্থাপের জন্ম নিউ ইয়র্কে৷ ভালো বেহালাবাদক৷ ১৮৪১ সালে তাঁকে কাজের লোভ দেখিয়ে ওয়াশিংটনে নিয়ে যাওয়া হয়৷ কাজের বদলে তাঁর ‘‘চাকুরিদাতারা'' তাঁকে ওষুধ খাইয়ে অজ্ঞান করে বেচে দেয় এক দাসব্যবসায়ীর কাছে৷
এর আগে নর্থাপ নিউ ইয়র্ক রাজ্যের সারাটোগা'য় একটা সুন্দর জীবন যাপন করছিলেন স্ত্রী আর দুই সন্তানকে নিয়ে৷ অপহরণের পর যখন চোখ খুললেন, তখন তাঁর হাতে-পায়ে বেড়ি, পকেটের কাগজপত্র, মানিব্যাগ, সবই উধাও৷ যেন তাঁর পরিচিতিই কেড়ে নেওয়া হয়েছে, নামটা পর্যন্ত৷ শীঘ্রই তাঁকে লুইজিয়ানায় পাঠানো হচ্ছে৷ নর্থাপ অন্যান্য ক্রীতদাসদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে - বিক্রির জন্য৷ বিক্রেতা এই কালো মানুষগুলোকে গরু-ছাগলের মতো খুঁচিয়ে দেখাচ্ছে তার হবু খদ্দেরদের৷ অনেক হবু ক্রীতদাসের পরণে বস্ত্র পর্যন্ত নেই৷ মায়ের কাছ থেকে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের কেড়ে নিয়ে বিক্রি করতে দ্বিধা করছে না সেই দাসব্যবসায়ী৷
নর্থাপের প্রথম মালিক ছিলেন উইলিয়াম ফোর্ড, মানুষ হিসেবে খুব খারাপ নন৷ কিন্তু ফোর্ডের ওভারসিয়ারই দাসেদের, এবং নর্থাপের বিভীষিকা হয়ে দাঁড়ায়৷ এমনকি নর্থাপকে একটি গাছ থেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঝুলিয়ে রাখতেও দ্বিধা করে না - ছবির একটি মর্মান্তিক দৃশ্য৷ নর্থাপ মৃত্যুর মুখে, তবুও পায়ের আঙুল দিয়ে মাটি ছুঁতে পারছেন, সেটাই তাঁর একমাত্র আশা৷ নর্থাপ মৃত্যুর মুখে, অথচ তার কাছেই বাচ্চারা খেলছে, অন্য ক্রীতদাসরা কর্মরত, মালিকের স্ত্রী বারান্দা থেকে ঝুঁকে মজা দেখছেন৷
নর্থাপের পরের মালিক এডউইন এপ্স আরো বিভীষণ৷ ক্রীতদাসদের প্রয়োজনে ১৫০ ঘা বেত মারাটাও তার কাছে কিছুই নয় - অথচ মুখে বাইবেলের বুলি আওড়াচ্ছে৷ এপ্স আবার প্যাটসি নামের এক কিশোর ক্রীতদাসের প্রতি আকৃষ্ট - যার ফলে প্যাটসি'কে এপ্স'এর স্ত্রীর রোষও সহ্য করতে হচ্ছে৷ এ'সব কিছুর মাঝেই চলেছে নর্থাপের বেঁচে থাকার, শুধু বেঁচে থাকার অসম, অসীম সাহসী লড়াই, যে ভূমিকায় চুইতেল এজিওফর সম্ভবত তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠ অভিনয় করেছেন৷ এবং সেটা করতে পারার আগে তিনি নর্থাপের স্মৃতিকথা পড়েছেন, বিভিন্ন প্ল্যান্টেশনে গেছেন, এমনকি বেহালা বাজানো শিখেছেন৷
কিন্তু লুইজিয়ানার গ্রীষ্মে এ'ধরনের একটি খামারে ক্রীতদাসের কাজ? গত মাসে টরোন্টো ফিল্ম ফেস্টিভালে এজিওফর একটি সাক্ষাৎকারে বলেন: ‘‘ভাবো সেখানে তোমার প্রথম দিন৷ ১০৮ ডিগ্রি গরম৷ তার মধ্যে কার্পাস তুলতে হচ্ছে৷ এটা লোকে করে কি করে? এ' যেন বিকার৷''
উনবিংশ শতকের মাঝামাঝি অ্যামেরিকায়, প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার অ্যামেরিকায়, কালো মানুষেরা ঠিক সে'ভাবেই কাজ করত৷
এসি / জেডএইচ (এপি)