জঙ্গিদের নানা নাম, ছাতা একটাই
২২ মে ২০১৫
বুধবার আল কায়েদা-আনসারুল্লাহ বাংলাটিম-১৩ নামে একটি সংগঠন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার, তারানা হালিম, জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ অসীম সরকার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কাবেরী গায়েন, বিকাশ সাহা, ইকবালুর রহিম ও পলান সুতার এই ১০ জনকে হত্যার হুমকি দিয়ে চিঠি পাঠায়৷
বাংলাদেশে আনসার আল ইসলাম, আনসার আল শরিয়াহ, আনসার বাংলা-৭, আনসার বাংলা-৮, আল কায়েদা-আনসারুল্লাহ বাংলাটিম জঙ্গি গ্রুপের নাম এর আগে শোনা গেলেও আল কায়েদা-আনসারুল্লাহ বাংলাটিম-১৩-র নাম এই প্রথম শোনা গেল৷ আগের জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা এর আগে ব্লগারদের হত্যার হুমকি এবং হত্যার সঙ্গে জড়িত বলে প্রমাণ মিলেছে৷ তবে আল কায়েদা-আনসারুল্লাহ বাংলাটিম-১৩ কি আলাদা সংগঠন, না একই সংগঠনের পরিবর্তিত নাম ?
এই প্রশ্নের জবাবে ডিএমপির উপ কমিশনার (মিডিয়া) জাহাঙ্গির আলম ডয়চে জানান, ‘‘আমরা মনে করছি এটা নতুন কোনো জঙ্গি গ্রুপ নয়৷ আগে যারা ব্লগারদের হত্যা এবং হত্যার হুমকি দিয়েছে তারাই এ কাজ করেছে৷ তাদের প্রধানসহ বড় একটি গ্রুপ এখন কারাগারে থাকলেও তাদের অনুসারীরা সক্রিয় আছে৷'' তিনি জানান, ‘‘এরা আল কায়েদার অনুসারী৷ আগে যারা গ্রেপ্তার হয়েছেন তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা কাগজ পত্র এবং ডকুমেন্ট থেকে এটা জানা গেছে৷''
আর গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার সানোয়ার হোসেন দীর্ঘদিন কাজ করছেন জঙ্গিদের নিয়ে৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘এই জঙ্গি গ্রুপগুওলো শুধু নাম পালটায়৷ কিন্তু তাদের মূল একই বলে আমার কাছে মনে হয়৷ কারণ তাদের সবার ধরণ এবং কর্মপদ্ধতি একই রকম৷''
২০১৩ সালে মিরপুরে ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার হত্যার ঘটনায় নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ ছাত্রকে আটকের পর আলোচনায় আসে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম৷ তখন জানা যায়, জসীমুদ্দিন রাহমানী এ সংগঠনের আধ্যাত্মিক নেতা৷ পরে বরগুনা থেকে বেশ কয়েকজন অনুসারীসহ জসীমুদ্দিন রাহমানী আটক হন৷
তিনি এখনো কারাগারে থাকলেও তার অনুসারীরা বাইরে আছেন৷ তাদের মধ্যে একজন নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএর সাবেক ছাত্র রেদওয়ান আজাদ রানা পলাতক অবস্থায় সংগঠনকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করছে বলে জানা গেছে৷ অভিজিৎ রায় হত্যায় রানাকে সন্দেহের শীর্ষে রেখেছেন গোয়েন্দারা৷
গত বছর ঢাকার মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের এক শিক্ষককে হত্যার চেষ্টা, মোহাম্মদপুরে রাকিব মামুন নামে এক ব্লগারকে গুলি ও আশুলিয়ায় আরেক ব্লগারকে হত্যা করা হয়েছিল৷ ওই সময়ের পর ‘আনসার আল শরিয়াহ' ও ‘আনসার আল ইসলাম' নামে দুটি সংগঠন দায়িত্ব স্বীকার করে৷ সিলেটে ব্লগার অনন্ত বিজয় দাসকে হত্যার পর পরই টুইটার বার্তায় দায় স্বীকার করেছিল আনসার বাংলা-৮ নামে একটি সংগঠন৷ সব সংগঠনই আল কায়েদার অনুসারী বলে জানান গোয়েন্দা কর্মকর্তারা৷
গোয়েন্দারা বলছেন, তাদের হুমকি এবং হত্যার ধরণ একই৷ তারা আল কায়েদার ‘লোন উলফ, এবং ‘স্লিপার সেল পদ্ধতিতে হত্যাকাণ্ড ঘটনায়৷ ফলে নেপথ্যে কারা আছে তা সব সময় জানা যায়না৷ যারা হত্যাকাণ্ডে অংশ নেন তারাও খুব বেশি উপরের লোকজনকে চেনেন না বা জানেন না৷ আর তাদের কেউ প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ বা বোমা বিশেষজ্ঞ৷ আবার কেউ হত্যাকাণ্ডে পারদর্শী৷ তারা স্থানীয়ভাবে ড্রোন তৈরি করেও হামলার পরিকল্পনা করেছিল৷
আনসারুল্লাহ বাংলা টিমকে উগ্রপন্থি জঙ্গি সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করতে পুলিশের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে৷ স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল জানিয়েছেন, ‘নিষিদ্ধ করার প্রক্রিয়া চলছে৷'
এর আগে জেএমবি, জেএমজেবি, হুজিবি, হিযবুত তাহরির ও শাহাদাত ই আল হিকমা – এই পাঁচটি জঙ্গি সংগঠন নিষিদ্ধ করা হয় বাংলাদেশে৷