বিশ্ব উষ্ণায়নের ধাক্কা সামলাবে ভাসন্ত বাড়ি?
৭ নভেম্বর ২০১৭বাড়িগুলো জলে ভাসতে পারে, তাও আবার শহরের মধ্যে! রিইনফোর্সড কংক্রিটের পন্টুনের উপরে তৈরি করা হয় বাড়িগুলো: প্রায় ১০০ বর্গমিটার থাকার জায়গা, সেই সঙ্গে বাড়ির সামনেই খাল ও নদীতীরের দৃশ্য৷ আগামী কয়েক বছরে হামবুর্গে আরো ৭৫টি এ ধরনের ভাসন্ত বাড়ি সৃষ্টি করা হবে৷ স্থপতিদের কাছে জলের ওপর বাড়ি বানানো ক্রমেই আরো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে৷
স্থপতি হান্স-ক্রিস্টিয়ান লিড-এর ভাষ্যে, ‘‘এর পেছনে বাস্তবসম্মত কারণ রয়েছে৷ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পানির উচ্চতা বাড়ছে৷ কাজেই আমাদের ভাবতে হবে, সেক্ষেত্রে আমাদের পক্ষে কী করা সম্ভব৷''
হামবুর্গের আন্তর্জাতিক স্থাপত্য প্রদর্শনী আইবিএ-তে ভাসন্ত বাড়ি তৈরির উপর বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে৷ জোয়ার এলে কোনো কোনো বাড়ি জলের ওপরেই ভাসতে পারে৷
জল থেকে জ্বালানি
বাড়ির দেয়াল বেয়ে পানি উঠছে, কিন্তু একটা কারণে: ঝুলন্ত জলাধারগুলিতে এক ধরনের অতি ক্ষুদ্র শ্যাওলা বাড়ছে, যা থেকে জ্বালানি শক্তি পাওয়া সম্ভব৷ সূর্যালোক আর কার্বন ডাইঅক্সাইডের প্রভাবে শ্যাওলাগুলি বাড়তে থাকে, যার ফলে পানি গরম হয়৷ পরে রেকুপারেটর দিয়ে সেই তাপ ঘর গরম করার জন্য ব্যবহার করা যায়৷
জলাধারের পানিতে যে বুদবুদ উঠছে, তা হল কার্বন ডাইঅক্সাইড৷ শ্যাওলাগুলো বড় হলে পরে তা বাড়ির একতলায় একটি পাওয়ার প্ল্যান্টে ‘বায়ো-মাস' হিসেবে ব্যবহার করা চলবে৷ এ থেকে একটি চার সদস্যের পরিবারের এক বছর বিদ্যুতের খরচ পুষিয়ে যাবে৷
পাশেই মাটিতে পোঁতা থামের উপর একটি পাঁচতলা বাড়ি তৈরি করা হয়েছে, যা একটি কৃত্রিম পুকুরের মধ্যে দাঁড়িয়ে রয়েছে – বৃষ্টির জলে ঐ পুকুর ভরে যায়৷ স্থপতি হান্স-ক্রিস্টিয়ান লিড বললেন, ‘‘এখানে দু'টি কাজ একসঙ্গে করা হচ্ছে, যার জন্য সাধারণত আলাদা জমি লাগে: প্রথমত থাকার জায়গা; দ্বিতীয়ত, বৃষ্টির জল ধরে রাখা৷ দুটি মিলিয়ে এক বাড়তি উঁচু মান পাওয়া যায়৷''
প্রত্যেকটি ফ্ল্যাটে জলের ওপর একটি রোয়াক বা বারান্দা আছে৷ পানি ও সূর্যালোক এখানেও জ্বালানি শক্তি সৃষ্টির কাজ করে: বাড়ির দেয়ালে রাখা পানি রোদে গরম হয়ে গরম পানি সরবরাহ করে৷
আন্তর্জাতিক স্থাপত্য প্রদর্শনী শুধুনতুন ধরনের বাড়ি তৈরিনিয়েই ব্যস্ত নয়৷ অনেক সময় যে জায়গা আছে, সেটাকেও নতুন ভাবে কাজে লাগানো হয়, যেমন বাড়ির নীচে শুধু গাড়ি নয়, বোট রাখারও জায়গা আছে!
এ যাবৎ স্থপতিরা মোটামুটি শুকনো ডাঙাতেই ছিলেন, কিন্তু পানির পরশে তাদের উদ্ভাবনী শক্তি যেন নতুন প্রেরণা পেয়েছে৷