জাপানে বিলুপ্তির হুমকিতে পানকৌড়ি দিয়ে মাছ ধরা
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে নদীতে মাছ কমছে৷ এ কারণে পানকৌড়ি পাখি দিয়ে মাছ ধরার ঐতিহ্যও হারিয়ে যেতে বসেছে৷ দেখুন ছবিঘরে...
১৮তম প্রজন্মের মাছ-শিকারী
ইউইচিরো আদাচির কাজই মাছ ধরা৷ তবে জাল ফেলে বা বরশিতে নয়, তিনি মাছ ধরেন পানকৌড়ি দিয়ে৷ পানকৌড়ির প্রিয় খাবার মাছ৷ ইউইচিরো আদাচি তাদের সেই মাছ ধরারই প্রশিক্ষণ দেন৷হঠাৎ করে এই পেশায় আসেননি ইউইচিরো৷ তার পরিবারের আগের সতেরোটি প্রজন্ম এভাবেই মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেছে৷
পানকৌড়ি বড় আপন
জাপানের গিফু এবং সেকি শহরের বুক চিরে বয়ে চলেছে নাগারা নদী৷ ইউইচিরো সেই নদীতেই পানকৌড়ি দিয়ে মাঝ ধরেন৷শৈশব থেকে এ পেশাতেই আছেন বলে পানকৌড়ির সঙ্গে সম্পর্কটা খুব ঘনিষ্ঠ৷ পানকৌড়ির প্রসঙ্গ এলে ৪৮ বছর বয়সি ইউইচিরো তাই অবলীলায় বলেন, ‘‘আমার কাছে পানকৌড়ি হলো পার্টনার বা সঙ্গীর মতো৷’’
১৩০০ বছরের ঐতিহ্য উকাই
পানকৌড়ি পাখি দিয়ে মাছ ধরার এই কৌশলের জাপানি নাম উকাই৷জাপানিরা এই ঐতিহ্যকে ১৩০০ বছর ধরে রেখেছে৷ কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে উকাই পড়েছে অস্তিত্ব সংকটে৷ এখন সারা জাপানে ইউইচিরোর মতো উকাই-কর্মী আছেন মাত্র ৫০ জন৷
পর্যটকদের আকর্ষণ
উকাই টিকে আছে মূলত পর্যটকদের কারণে৷ওপরের ছবিতে রাতের আঁধারে বিশেষ নৌকায় বসে জেলে নৌকা থেকে পানিতে নেমে পানকৌড়িদের মাছ ধরা দেখছেন পর্যটকরা৷
হারিয়ে যাচ্ছে আয়ু মাছ
উকাইয়ের আদর্শ সময় রাত৷ রাতের আঁধারে পানিতে নৌকার আলো পড়লে চঞ্চল হয়ে ওঠে আয়ু মাছ৷ আলোর কাছে এসে শুরু করে ছুটাছুটি৷ প্রশিক্ষিত পানকৌড়িদের তখনই ছেড়ে দেয়া হয় পানিতে৷ পানিতে ডুব দিয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই মুখে মাছ নিয়ে ফিরে আসে পানকৌড়ি৷ ইয়োইচিরো আদাচি জানালেন, আজকাল নদীতে আয়ু মাছ আর আগের মতো পাওয়া যায় না৷ বন্যা রুখতে বাঁধ দেয়া হয়েছে নদীতে, পানিতে ফেলা হয়েছে নুড়ি পাথর৷ ফলে আয়ু মাছের টিকে থাকাই এখন দায়৷
বিরূপ পরিবেশ
পরিবেশ বিষয়ক নানা গবেষণা বলছে, নাগারা নদীর তাপমাত্রা এখন ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসেরও বেশি৷এমন তাপে আয়ু মাছের জীবন বিপন্ন৷ তাছাড়া বড় পাথর কমে যাওয়াও আয়ুদের খুব সংকটে ফেলেছে৷ গিফু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোরিহিরো হারাদা জানান, বড় পাথরের শ্যাওলা আয়ু মাছদের খুব প্রিয় খাবার৷ নাগারার তলদেশে নুড়ি পাথর বড় পাথরের স্থান নেয়ায় আয়ু মাছদের আর শ্যাওলা জোটে না৷
উশোদের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ
পানকৌড়ির সহায়তায় যারা মাছ ধরেন, তাদের বলা হয় উশো৷ সারা দেশে মাত্র ৫০ জন উশো আছে, নদীতে মাছ ক্রমশ কমছে- এসব নিয়ে ভাবলে হতাশ হয়ে পড়েন আদাচি৷ মাছ যদি আরো কমে যায়, কী করবেন তখন? তার ছেলে তোইচোরো কি আর মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতে পারবে? সে আশা ক্ষীণ বলে হতাশা নিয়ে আদাচি বলেন, ‘‘আমরা যদি আর মাছ ধরতে না পারি, সব উৎসাহ তাহলে মরে যাবে আর তাহলে তো আর এসব করার কোনো মানে থাকবে না৷’’