ফিকে হচ্ছে অভিবাসীদের স্বপ্ন
২৭ মে ২০১৭সাম্প্রতিক সময়ে উদ্বাস্তুদের স্বাগত জানানোর ফলে দেশটি সম্পর্কে ব্যতিক্রমধর্মী বার্তা পাচ্ছে বিশ্ববাসী৷ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার মাধ্যম হিসাবে ইংরেজিতে গুরুত্বারোপ, দেশটির বিভিন্ন খাতের জন্য বিদেশে কর্মী খোঁজার মতো বিষয়গুলো এই অবস্থানকে শক্তিশালী করছে৷
তবে বাস্তবতার কষাঘাতে আশ্রয়প্রার্থী ভূক্তভোগীর চোখের জলে বাস্তবে তার অনেকটাই ভেসে যাচ্ছে৷ আমলাতন্ত্রের যে সব জায়গায় ‘স্বাগত জানানো' মানসিকতা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, সে সব জায়গাই হতাশ করছে তাদের৷
বৈদেশিক দপ্তরগুলো অভিবাসীদের শুনতে হচ্ছে নানা কথা৷ সেখানে কথা উঠছে ব্যক্তির জাত-পাত নিয়েও৷ অনেককে বিদ্বেষপূর্ণ নানা কথাও শুনতে হচ্ছে৷ ‘‘দেয়ালে হেলান দেয়া বন্ধ করো, তোমরা এটাকে নোংরা করে দিচ্ছো'' – চিৎকার করে বলা এমন কথাও শুনে কেঁদে বুক ভাসিয়েছেন একজন আশ্রয়প্রার্থী৷
কোলন এবং ফ্রাইবুর্গে লেখক নিজেও এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখী হয়েছেন, যে অভিজ্ঞতা নিতে হবে – এমনটা তিনি কল্পনাও করেননি৷ যে অভিজ্ঞতায় তিনি খুঁজে পেয়েছেন জার্মান অভিবাসন আইনের গলদও৷
তিনি জানান, নানা ধরনের কাগজপত্র দিতে বাধ্য হয়েছেন তিনি৷ উভয়পক্ষের সম্মতিতে সময় দিয়েও এমনকি তিনঘণ্টা তাকে ঠায় ফ্লোরে বসে অপেক্ষা হয়েছে৷ ১০ লাখ মানুষের শহরে ওয়েটিং রুমে চেয়ার ছিল মাত্র আটটা৷
‘‘স্পষ্টতই বিপরীত প্রমাণ থাকলেও এমন ধারণা করা যে, আমি সম্ভবত জার্মান শিখতে পারবো না৷ এ কারণে একটা বিশেষ কোর্স ধরিয়ে দেয়ার মত ঘটনাও ঘটেছে৷''
‘‘কিন্তু আমি একজন অ্যামেরিকান, এসেছি ‘শিক্ষার্থী-ভিসায়'৷ সাধারণদের যে রকম অবমাননাকর এবং অপমানকর যে সব অভিজ্ঞতার মুখে পড়তে হয়, এটা তার তুলনায় সামান্যই৷''
হিজাবে উদ্বেগ
ভিরাজেশ নামে একজন ভারতীয় একাডেমিককে মাত্র দুই সপ্তাহের ভিসা দেয়া হয়৷ এ জন্য তিনি এখানকার বৈদেশিক দপ্তরে যোগাযোগ করেন৷ যেখান থেকে তাকে বার্লিন অফিসে যেতে বলা হয়৷ সেখানে এক ভদ্রমহিলা আমার কাগজপত্র দেখে বললেন, ‘‘ওহে চিন্তিত হইয়ো না৷ সমস্যা তো তুমি না৷ যারা হিজাব করছে, সমস্যা তারা৷''
রাজেশের মতে, ইসলাম-ভীতিতেই এটা শেষ হয়ে যায় না৷ তারা তোমার ত্বক দেখবে, দীর্ঘশ্বাস ফেলবে, ধীরে ধীরে কথা বলতে শুরু করবে৷ ধরেই নেবে, তুমি জার্মান ভাষা জানো না৷
দক্ষতার জন্য খ্যাতি লাভ করা একটা দেশে এই ক্রান্তিকালে যোগাযোগ ভেঙে পড়েছে৷
ইসরায়েলের সাংবাদিক ইয়েল বলেন, সোজা ভাষায় একটা কথা বলি, এখানকার শুরুটা ভয়ংকর৷ যখন আপনি প্রচণ্ড মানসিক চাপে আছেন, তখন এরা তাদের হাতে আপনার ভবিষ্যৎ নিয়ে বসে আছে৷ কে আগে ডাক পাবে, কিসের ভিত্তিতে এই ক্রম নির্ধারিত হবে –তার কোনো ঠিক-ঠিকানা নেই৷ বসার মত কোন জায়গাও নেই৷
ইয়েল যখন কোলনে বিদেশ দপ্তরে তার কাজের জন্য অপেক্ষা করছিলেন, তখন তিনি সেখানে একজন অভিবাসী নারীকে দেখেন, যিনি তার সন্তানকে প্রবোধ দিচ্ছিলেন৷ তিনি জানান, এ সময় এক লোক উঠে আমাদের দিকে আসলো, ক্রম উচ্চস্বরে চিৎকার করতে করতে বলতে লাগলো ‘‘দেয়ালে হেলান দেয়া বন্ধ করো, তোমরা এটাকে নোংরা করে দিচ্ছো৷''
ইয়েল ডয়চে ভেলেকে বলেন, একজন ইহুদি জার্মানিতে কী শুনতে চাইবে-বিষয়টা তেমন নয়৷ তবে সেদিন আমি অনেক কেঁদেছিলাম৷
‘এটা আমার সমস্যা না'
চোখের পানি এখানে খুব সস্তা হয়ে গেছে৷ যারা নিজের কথাগুলো বলতে চায়, এটা কেবল তাদের মধ্যেই না৷ বরং বৈদেশিক দপ্তরের সাধারণ দৃশ্য এটা৷ দক্ষিণের শহর ফ্রাইবুর্গে আমি আমি বেইজিং থেকে আসা এক ব্যক্তিকে কাঁদতে দেখেছি৷
ওই ব্যক্তির বস তাঁর কাজের দৈর্ঘ্য ১০ ভাগ কমিয়ে দিয়েছেন৷ এরফলে তিনি আর জার্মানি থাকতে পারবেন না বলে তাকে জানিয়ে দেয়া হয়৷ তিনি বলেন, ‘‘আমার বাচ্চারা এখানকার স্কুলে পড়ে৷ আমার স্ত্রীও এখানে একটা খণ্ডকালীন চাকুরি করে৷ তার বন্ধু-বান্ধবরাও এখানেই৷ আমাদের জীবন এখানেই জড়িয়ে আছে৷''
এর জবাবে তাকে বলা হয়, ‘‘এটা আমার সমস্যা না৷ এখানে থাকতে আয়ের যে শর্ত রয়েছে, তোমার সেটা নেই৷''
‘‘এটা আমার সমস্যা না'' – এ রকম কথা আমি ফ্রাইবুর্গে হরহামেশাই শুনেছি৷ লিয়া নামে একজন কানাডিয়ান জানিয়েছেন, ফ্রাংকফুর্টেও তাকে এটা শুনতে হতো৷
পৌঁছানোর সময় তাকে বলা হয়, দু'মাস আগে যেন তিনি ভিসা নবায়নের জন্য আবেদন করেন৷
সে অনুসারে আবেদন করলে তাকে বলা হয়, তোমার ভিসা অগাস্টে শেষ হয়ে গেলে আমি কী করবো৷ আমি তোমাকে জানুয়ারিতে সাক্ষাৎকারের দিন দিতে পারি৷
জার্মানিতে অভিবাসীদের স্বাগত জানানো হচ্ছে বলে প্রচারণার মধ্যে যেখানে সবচেয়ে বেশি স্বাগত জানানো প্রয়োজন, সেখানেই এই মানসিকতার অভাব সবচেয়ে বেশি৷
এলিজাবেথ শুমাখার/এসএন
বন্ধু, কেমন লাগলো প্রতিবেদনটি? জানান নীচের ঘরে৷