1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করছে রাজউক, তারপর কী?

১ এপ্রিল ২০১৯

ঢাকার বনানীতে এফআর টাওয়ারে আগুন লেগে ২৬ জন নিহত হওয়ার পর নড়েচড়ে বসেছে রাজউক৷ তারা সোমবার থেকে ঝঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করার কাজ শুরু করেছে৷ কিন্তু চিহ্নিত করার পর কী হবে, তা সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারেননি রাজউক চেয়ারম্যান৷

https://p.dw.com/p/3G2CH
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Stache

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) গত বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত ঢাকার বিভিন্ন এলাকার দুই লাখ ৪ হাজার ভবনের ওপর জরিপ চালায়৷ এই ভবনগুলো ৩ তলা বা তার বেশি উচ্চতার৷ তারা ওই জরিপে দেখতে পায়, প্রতি ১০টি ভবনের ৯টিই অনুমোদন ও নকশার বাইরে গিয়ে তৈরি করা হয়েছে৷ ২ লাখ ৪ হাজার ১০৬টি ভবনের মধ্যে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৬২৫টি ভবন নিয়ম ভঙ্গ করে নির্মাণ করা হয়েছে৷ শতকরা হিসেবে এটা ৬৬.১১ ভাগ৷

২০১২ সালে ফায়ার সার্ভিস, ডেসা, ওয়াসা, পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন দেয়া ১১২টি ভবনে বুয়েটের করা গবেষণায় দেখা যায়, মাত্র দুটি ভবন তাদের সব নির্মাণ নীতিমালা মেনেছেন৷ বাকিরা কোনো না কোনো নিয়ম এড়িয়েছেন, অথবা মানলেও তা অকার্যকর৷ 

‘১৫ দিনের মধ্যে আমরা এই কাজ শেষ করতে চাই’

২০১৬ সালে ড্যাপ-এর করা জরিপে দেখা যায়, ঢাকা শহরে সাততলা বা তার চেয়ে উঁচু ভবন আছে ১৬ হাজার ৯৩০টি৷ স্বাভাবিক নগরায়ন ও উন্নয়নের কারণে গত দুই বছরে এর সংখ্যা আরো ১০-১৫ ভাগ বেড়েছে৷ আইন অনুযায়ী এসব ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে ফায়ার সার্ভিসের ছাড়পত্র থাকা বাধ্যতামূলক৷ কিন্তু ফায়ার সার্ভিস থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে ২০০০ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত মাত্র ৫ হাজার ২৪টি ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে ছাড়পত্র নেওয়া হয়েছে৷ তাহলে এটা স্পষ্ট যে দুই তৃতীয়াংশের বেশি বহুতল ভবনের ফায়ার সার্ভিসের ছাড়পত্র নেই৷ আর গত বছর ফায়ার সার্ভিস ৫ হাজারেরও বেশি ভবনকে নোটিশ দেয়৷ কারণ তাদের ফায়ার সিস্টেম নেই বা কার্যকর নয়৷

রাজউক যা করছে

রাজউকের চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘গত বছরের জরিপে আমরা নিয়ম ভেঙে ভবন নির্মানে নানা ধরণের ত্রুটি পেয়েছিলাম৷ তারমধ্যে নকশার বাইরে গিয়ে ভবন বর্ধিত করাই প্রধান৷ তবে এবার আমরা যে কাজ শুরু করেছি তাতে হাই-রাইজ ভবনের সেফটি সিকিউরিটি, বিশেষ করে ফায়ার ফাইটিং সিস্টেমকে প্রাধান্য দিচ্ছি৷ আজ (সোমবার) থেকেই কাজ শুরু হয়েছে৷ ১৫ দিনের মধ্যে আমরা এই কাজ শেষ করতে চাই৷ এরপর আমরা নীচু ভবনগুলো নিয়ে কাজ করব৷ আমাদের কাজ ধারাবাহিকভাবে চলবে৷''

ঢাকা শহরকে মোট আটটি জোনে ভাগ করে রাজউকের ২৪টি টিম এই ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করার কাজ করছে৷ প্রতিটি টিমে ৮-১০ জন সদস্য রয়েছেন৷ তবে টিমে ফায়ার সার্ভিসের কোনো লোক রাখা হয়নি৷ 

রাজউকের নোটিশ বলছে, তারা ১০ তলা বা তার চেয়ে বেশি উঁচু ভবনে চিহ্নিত করার কাজ করবে৷ রাজউক চেয়ারম্যান জানান এধরণের ভবন ঢাকা শহরে ৩-৪ হাজারের বেশি হবেনা৷

এই ভবনগুলো চিহ্নিত করার পর কী ব্যবস্থা নেয়া হবে জানতে চাইলে রাজউক চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘আইনে যা আছে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে৷ কোন ভবনের কী ত্রুটি আছে, তা দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে৷ ফায়ার সিঁড়ি, যন্ত্রপাতি ঠিকমত আছে কিনা, কাজ করে কিনা, তা আমরা দেখছি৷ আমরা তা ঠিক করতে নোটিশ দেব৷ ভবন মালিকরা যদি সে অনুযায়ী কাজ না করেন তাহলে আরো কঠিন ব্যবস্থা নেব৷''

এদিকে স্থপতি ইকবাল হাবিব ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘রাজউক যেভাবে সারা ঢাকা শহরের ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করতে নেমেছে তা আসলে কোনো কাজে আসবে বলে মনে হয়না৷ এতে বছরের পর বছর লেগে যাবে৷ কাজটি করা দরকার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে৷ যেমন মার্কেট, শপিং কমপ্লেক্স, অফিস, বাণিজ্যিক কেন্দ্রর মতো ভবন, যেখানে লোক সমাগম বেশি হয় সেগুলো নিয়ে আগে কাজ করা দরকার৷ সেগুলোর ফায়ার সেফটি ও সিকিউরিটি নিয়ে আগে ভাবা উচিত৷ আগে জরুরি ভিত্তিতে জীবন রক্ষার উদ্যোগ নিতে হবে৷ রাজউক যেভাবে কাজ শুরু করেছে তাতে আমার মনে হয় তারা বিষয়টি অন্যদিকে নিয়ে যেতে চায়৷''

তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশে বড় উদাহরণ হলো পোশাক কারখানা৷ রানাপ্লাজা ধসের পর এক দেড় বছরের মধ্যে পোশাক কারখানাগুলো সেফটি সিকিউরিট উন্নত করেছে৷ ফায়ার ফাইটিং সিস্টেমকে মানম্পন্ন করেছে৷ এটা সম্ভব হয়েছে ক্রেতাদের চাপের কারণে৷ রাজউক এই মডেল অনুসরণ করতে পারে৷''

ভবন ৪০ হাজার, অকুপেন্সি সার্টিফিকেট মাত্র ১৬১

২০০৮ সালে ইমারত নির্মাণ আইন পরিবর্তন করে অকুপেন্সি সার্টিফিকেটের বিধান করা হয়৷ এই বিধান অনুযায়ী, ভবন নির্মাণের পর রাজউক এবং এক্সপার্টদের নিয়ে গঠিত একটি কমিটি ভবনটি অনুমোদিত নকশা এবং সব নিয়ম মেনে তৈরি হচ্ছে কিনা, তা দেখে ব্যবহারের ছাড়পত্র দেবে৷ তারপর গ্যাস ও বিদ্যুৎ লাইন দেয়া হবে৷

স্থপতি ইকবাল হাবিব জানান, ‘‘২০০৮ সালের পর থেকে ঢাকা শহরে ৪০ হাজার ভবন নির্মাণ করা হয়েছে, কিন্তু অকুপেন্সি সার্টিফিকেট নিয়েছে মাত্র ১৬১টি ভবন৷ তাহলে রাজউক কী করেছে, এটাতো রাজউকেরই কাজ৷''

তিনি দাবি করেন, ‘‘ঢাকা শহরের ভবনগুলোর এইযে দুরবস্থা বা ভবনগুলো যে মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে তার জন্য প্রধান এবং প্রথম দায়ী রাজউক৷ এটা তাদের অবহেলা এবং দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের কারণে হয়েছে৷ প্রতিবছর তাদের ভবন পরিদর্শন করে কোনো আইনের ব্যত্যয় ঘটেছে কিনা, তা দেখে ব্যবস্থা নেয়ার কথা৷ তারা কাজ করলেতো এই পরিস্থিতি হতনা৷ তাদের কেউ কেউ অবৈধভাবে নিয়ম না মেনে ভবন নির্মাণে উলটো সহযোগিতা করে৷''

ইকবাল হাবিব আরো বলেন, ‘‘রাজউক তার মূল কাজ না করে জমি ও ফ্ল্যাটের ব্যবসা করছে৷ আর মানুষ মারা গেলে তারা বলে ভবনটি অননুমোদিত৷ এই অননুমোদিত ভবনের দায় রাজউকের৷ এরজন্য তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে৷'' 

‘কাজটি করা দরকার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে’

এদিকে, রাজউক চেয়ারম্যান বলছেন, ‘‘আমাদের পক্ষে সবসময় মনিটরিং করা সম্ভব হয়না৷ আমরা এর আগে ভবনগুলোর ছোটখাট ত্রুটি পেয়েছি৷ যেমন কর্নিশ বড় করা, বাড়তি বরান্দা নির্মাণ৷ এফআর টাওয়ারে আমরা বড় ধরণের ত্রুটি দেখতে পেলাম৷ আমাদের কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারীর অবহেলা বা দুর্নীতির কারণে যদি এটা হয় তাহলে আমরা অবশ্যই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবো৷ এটা সরকারের একটি প্রতিষ্ঠান, এখানে দুর্নীতি প্রমাণ হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে৷''

এফআর টাওয়ারের নথি

এফআর টাওয়ারের নকশা এবং অনুমোদন নিয়ে নানা বিতর্ক চলছে৷ রাজউক চেয়ারম্যান জানান, ‘‘আমরা তাদের ১৮ তলা পর্যন্ত অনুমোদনের কাগজ খুঁজে পেয়েছি৷ কিন্তু পরে যে আরো ২৩ তলা পর্যন্ত বাড়ানো হয় তার কাগজপত্র পাইনি৷ কিছু ফটোকপি পেয়েছি৷ এখন আমরা খতিয়ে দেখছি ওই কাগজগুলো সঠিক কিনা৷ আর বাড়তি ৫ তলার অনুমোদন দেয়া হয়ে থাকলে তা কীভাবে দেয়া হয়েছে৷''

এদিকে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি রাজউক থেকে ওই ভবনের কোনো নকশা পায়নি৷ তারা নকশা ছাড়াই তদন্ত শুরু করেছে৷