1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ডাক্তারদের আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ছে

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা
১৪ জুন ২০১৯

রোগী মৃত্যুর জেরে ডাক্তার নিগ্রহের ঘটনা পশ্চিমবঙ্গে ঘটছে প্রতিদিন৷ কিন্তু এবার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙেছে৷ প্রশাসনের নির্দেশ, এমনকি হুঁশিয়ারি শুনতেও নারাজ ধর্মঘটরত ডাক্তারেরা৷

https://p.dw.com/p/3KTNB
Indien Kalkutta Medizinstudenten protestieren
ছবি: DW/Sirsho Bandopadhyay

কলকাতার এনআরএস হাসপাতালে রোগী-মৃত্যুর জেরে দুই জন নবীন ডাক্তারের ওপর মারাত্মক হামলার পর, সরকারি হাসপাতালে কর্মরত ডাক্তারদের সুরক্ষার দাবিতে চার দিন ধরে জুনিয়র ডাক্তাররা কর্মবিরতি পালন করছেন৷ তবে এখন পর্যন্ত প্রশাসন ডাক্তারদের দাবি মেন নিতে নারাজ৷

মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি পাল্টা হুমকি দিয়েছেন, আগে হাসপাতালে কাজ শুরু হবে, তার পর বাকি কথা৷ এ অচলাবস্থার মধ্যে জুনিয়র ডাক্তারদের ন্যায্য দাবির প্রতি সমর্থন জানাতে দলে দলে পদত্যাগ করছেন কলকাতাসহ গোটা পশ্চিমবঙ্গের সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক ও অধ্যাপকেরা৷ বৃহস্পতিবার এর শুরুটা করেছিলেন ব্যারাকপুর মহকুমার সাগর দত্ত হাসপাতালের ১৮ চিকিৎসক৷ শুক্রবার আরজি কর মেডিকেল কলেজের ১৩০ জন ডাক্তার একযোগে ইস্তফা দেওয়ার খবর আসার পর এনআরএস, কলকাতা মেডিকেল কলেজ, ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ, এসএসকেএম, অর্থাৎ সবকটি প্রথম সারির মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকেও ডাক্তারদের  ইস্তফার খবর আসতে থাকে৷

প্রতিবাদী ডাক্তারদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁদের অসহযোগিতায় রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবা ব্যবস্থা কার্যত ভেঙে পড়েছে৷ সংবাদ মাধ্যমের একাংশও চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যাওয়া, অথবা মারা যাওয়া রোগীদের খবর দিয়ে এই অভিযোগকেই আরও পুষ্ট করছেন৷ কিন্তু সদ্য পদত্যাগী, আরজিকর হাসপাতালের চিকিৎসক-অধ্যাপক ডাঃ সন্দীপ হালদার ডয়চে ভেলেকে স্পষ্ট জানালেন, হাসপাতালে সুরক্ষা নিশ্চিত করার কোনো পদক্ষেপ না নেওয়া হলে আমরা আমাদের অবস্থানে অনড় থাকবো৷ তবে ডাঃ হালদার জানাচ্ছেন,  আউট পেশেন্ট ডিপার্টমেন্টে, বা হাসপাতালের ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ঘুরে রোগী দেখা বন্ধ থাকলেও এমারজেন্সি বিভাগে আপৎকালীন চিকিৎসা পরিষেবা পুরোমাত্রায় চালু রেখেছেন ডাক্তাররা৷

ডাঃ সন্দীপ হালদার

পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হওয়া, বা রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হওয়ার দায় মমতা ব্যানার্জির সরকার এড়াতে পারছে না৷ কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রী হর্ষবর্ধন শুক্রবারই মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেছেন, তিনি যেন এটাকে ইজ্জতের লড়াই না বানিয়ে নেন!‌ মমতা তবুও অনড়৷

ফলে আন্দোলনের ঢেউ ক্রমশ ছড়াচ্ছে দেশজুড়ে৷ শুক্রবার রাজধানী দিল্লি, মুম্বই, বেঙ্গালুরু, চেন্নাই–সহ সবকটি বড় শহরে এইমস, জিপমার–এর মতো প্রথম সারির চিকিৎসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ডাক্তাররা প্রতীকী ধর্মঘটে সামিল হন৷ সোমবার ফের তাঁরা দেশজুড়ে কর্মবিরতি পালন করবেন জাতীয় চিকিৎসক সংগঠন আইএমএ-র ডাকে৷ স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং হাসপাতালে সন্ত্রাসমুক্ত পরিবেশ, ডাক্তারদের নিরাপত্তার জন্য সর্বভারতীয় আইন আনার দাবিতে আইএমএ আর্জি জানিয়েছে প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে৷

মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বৃহস্পতিবার, অর্থাৎ আন্দোলনের চার দিনের মাথায় শহরের প্রধান সরকারি হাসপাতাল এসএসকেএম-এ গিয়ে কার্যত হুমকি দেন, চার ঘণ্টার মধ্যে ধর্মঘট তুলে কাজে যোগ না দিলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷ জুনিয়র ডাক্তারেরা যদি সরকারি হাসপাতালের আউটডোরে না বসেন, তা হলে তাঁরা মেডিকেল কলেজ হোস্টেলে থাকতে পারবেন না৷ ভারতে সত্তরের দশকের জরুরি অবস্থার সময় জারি হওয়া অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা আইন ‘‌এসমা'‌ জারির হুমকিও দিয়ে আসেন মুখ্যমন্ত্রী৷

কিন্তু তাতে বিপরীত ফল হয়েছে, ডাক্তাররা স্পষ্ট ভাষায় আবারও জানিয়েছেন, নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিশ্চিত না হলে তাঁরা কাজ শুরু করবেন না৷ একমাত্র আপৎকালীন চিকিৎসা ছাড়া সব বন্ধ থাকবে৷ আর হোস্টেল ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশের অভাবনীয় প্রতিক্রিয়া এসেছে৷ কেন্দ্রীয় সরকারের ইএসআই হাসপাতালের ছাত্র-ছাত্রীরা ভিডিও বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছেন সোশাল মিডিয়ায়, যে কোনো ডাক্তারির ছাত্র-ছাত্রীর থাকার জায়গার অভাব হলে যেন ইএসআই হোস্টেলে চলে আসেন৷ সরকার এবং শাসকদলের তরফে পাল্টা প্রচার চলছে যে বিক্ষোভরত ডাক্তাররা কাজ করছেন না৷ তার প্রতিবাদে বেসরকারি কেপিসি মেডিকেল কলেজের ডাক্তার সাব্বা হাকিম তাঁর ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, মানবিকতা ডাক্তারদেরও আছে৷ আউটডোরে রোগী দেখা না হলেও জরুরি পরিষেবা চালু আছে৷ কিন্তু নিরাপত্তা জরুরি এবং সেই প্রশ্নে রাজ্য সরকারের ভূমিকায় তিনি মর্মাহত৷ এই সাব্বা হাকিম রাজ্যের প্রভাবশালী মন্ত্রী এবং কলকাতার মেয়র, মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ ফিরহাদ হাকিম-এর কন্যা৷ ফেসবুকে তিনি ডাক্তারদের আন্দোলনের পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন৷

বারাসাতের তৃণমূল সাংসদ ডঃ কাকলি ঘোষ দস্তিদারের চিকিৎসক পুত্র বৈদ্যনাথ ঘোষ দস্তিদারও তাঁর ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, রাজনীতি গোল্লায় যাক, তিনি আছেন এনআরএস-এর পাশে৷ দুইশ গুণ্ডা চড়াও হয়েছিল এনআরএস–এর ডাক্তারদের ওপর আর গ্রেপ্তার হয়েছে মাত্র পাঁচজন৷ এটা মেনে নেওয়া যায় না৷

কেপিসি মেডিকেল কলেজের ছাত্র ইউনিয়নের নেতা আবেশ ব্যানার্জিও ডাক্তারদের আন্দোলনের সমর্থনে মিছিলের সামনে হেঁটেছেন, সম্পর্কে তিনি খোদ মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপো৷

সাধারণ মানুষের এক বড় অংশের সমর্থনও রাজ্য সরকারের সঙ্গে নেই৷ ডাক্তাররা ছাড়াও অন্যান্য পেশার মানুষজন এসে যোগ দিচ্ছেন আন্দোলনে৷

ডাক্তাররা পশ্চিমবঙ্গে সরকারি চিকিৎসার দুর্বল পরিকাঠামোর দিকেই আঙুল তুলছেন৷ ডাঃ দোলনচাঁপা দাশগুপ্ত এবং ডাঃ সব্যসাচী সেনগুপ্ত, দুজনেই ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন যে, তাঁরা মনে করেন না চিকিৎসা করাতে আসা রোগীর আত্মীয়-স্বজন মারামারি করতে আসেন৷ একটু ভালভাবে তাঁদের বুঝিয়ে বলা গেলেই তাঁরা বোঝেন, শান্ত থাকেন৷ কিন্তু সরকারি হাসপাতালে এত বেশি রোগীর চাপ, অথচ ডাক্তারের সংখ্যা এমন অস্বাভাবিক কম যে, কথা বলার সময়ও তাঁরা পান না৷ ফলে মানুষের ক্ষোভ বাড়ে৷ তাতে ইন্ধন জোগানোর জন্যে আছে সংগঠিত দালাল চক্র এবং রাজনৈতিক মদতপুষ্ট মাস্তানেরা৷ ফলে সামান্য উত্তেজনা থেকেই পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যায়৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য