1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ডোনাল্ড লুর চিঠির পরই দ্রুত তফসিল?

১৪ নভেম্বর ২০২৩

বুধবার নির্বাচন কমিশনের বৈঠকে নির্বাচনের তফসিলের তারিখ নির্ধারণ হবে বলে ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান৷

https://p.dw.com/p/4Ynjb
সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন কমিশন (ফাইল ফটো)
সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন কমিশন (ফাইল ফটো)

তিনি বলেন, ‘‘সংবিধান অনুযায়ী এছাড়া আমাদের আর কিছু করার নেই৷ এখন আর কোনো সংলাপ বা আলোচনা নয়, রোডম্যাপ অনুযায়ী নির্বাচনের দিকে যাচ্ছি আমরা৷''
তিনি জানান, বুধবার বিকেলে কমিশনের বৈঠকের আগেই সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলবেন কমিশন সচিব৷ সেই ব্রিফিং-এ নির্বাচনের তফসিলের ব্যাপরে বিস্তারিত জানানো হবে৷
মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশন সচিব জাহাংগীর আলম জানান, কখন কীভাবে তফসিল ঘেষণা হবে তা বুধবার সকাল ১০টায় সাংবাদিকদের জানানো হবে৷
এদিকে শর্তহীন সংলাপের বিষয়য়ে যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুর তিন প্রধান রাজনৈতিক দলকে দেয়া চিঠির ব্যাপারে কমিশন অবহিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘নির্বাচনের তফসিলে এর কোনো প্রভাব পড়বে না৷''
জানা গেছে, বুধবারের বৈঠকের পর রাতেই জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিতে পারেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিুবল আউয়াল৷ ওই ভাষণে তিনি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবেন বলে জানা গেছে৷ নির্বাচন হতে পারে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে৷
এদিকে, মঙ্গলবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঙ্গলবার এক ভার্চুয়াল উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘‘হয়তো দুই-একদিনের মধ্যে নির্বাচন কমিশন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবে৷''
সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু শাসক দল আওয়ামী লীগ, বিরোধী দল বিএনপি ও জাতীয় পার্টিকে শর্তহীন সংলাপের জন্য চিঠি দেন৷
নির্বাচন কমিশন এমন এক সময় নির্বাচনের জন্য তফসিল ঘোষণা করতে যাচ্ছে যখন বিএনপির নেতৃত্বে ৩৭টি রাজনৈতিক দল সরকার বিরোধী আন্দোলনে আছে৷ তারা সরকারের পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন চাচ্ছে৷

‘আমার মনে হয় ডোনাল্ড লু’র চিঠি তফসিলকে ত্বরান্বিত করছে’

তারা এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাবে না৷ এর বাইরে জামায়াতে ইসলামীসহ আরো কয়েকটি দল একই দাবিতে আন্দোলনে আছে৷ তারা এখন হরতাল ও অবরোধ করছে৷ তফসিল ঘোষণা হলে তারা আন্দোলন আরও তীব্র করবে৷ অসহযোগ আন্দোলন শুরু করতে পারে৷
জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদের (জানিপপ) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বলেন, ‘‘ডোনাল্ড লু তিন বড় রজনৈতিক দলকে শর্তহীন সংলাপের চিঠি দেয়ার পরইদিনই আমরা দেখলাম প্রধানমন্ত্রী তার উদ্বোধনী কাজের সমাপ্তি ঘোষণা করলেন৷ তফসিল ঘোষণার পর প্রধানমন্ত্রী নিয়মতান্ত্রিক প্রধানমন্ত্রী থাকবেন৷ তাই তফসিল আর উদ্বোধন একসঙ্গে চলতে পারে না৷ আমার মনে হয় ডোনাল্ড লুর চিঠি তফসিলকে ত্বরান্বিত করছে৷''
 ‘‘শাসক দল আর কোনো ঝুঁকি নিতে চাইছে না৷ নির্বাচন কমিশনও তফসিলের ইঙ্গিত দিয়েছে,'' বলেন তিনি৷
তার কথা, ‘‘তফসিল ঘোষণার পর থেকেই বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন কমিশন ঘেরাওয়ের কর্মসূচি পালন করবে বলে জানিয়েছে৷ তারা হরতাল অবরোধের পাশাপাশি অসহযোগ আন্দোলনে যাবে৷ ফলে পরিস্থিতি পয়েন্ট অব নো রিটার্নের দিকে চলে গেল৷''
তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে তাতে ডেনাল্ড লুর পত্রবাণের পর অগ্নিবাণ আসতে পারে৷''
এদিকে সাবেক নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম মনে করেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী যখন বলেন এক-দুই দিনের মধ্যে নির্বাচনের তফসিল হবে সেটা নির্বাচন কমিশনকে ডিকটেট করার মতো৷ তফসিল কবে হবে এটা নিয়ে তিনি কেন, রাষ্ট্রপতিও কথা বলতে পারেন না৷ এটা বলে তিনি ঠিক করেননি৷''
তার কথা, ‘‘নির্বাচন কমিশন সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণেই৷ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করছে৷ তবে তাদের হাতে আরো সময় আছে৷ আরো একটু সময় নিতে পারতো পরিস্থিতি বিবেচনা করে৷ জানুয়ারির ২০ তারিখে নির্বাচন করা যায়৷ আর তাতে ২৫ নভেম্বরেও তফসিল ঘোষণা করা যেত৷ তবে এর বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই৷ জরুরি পরিস্থিতি হলে আরো তিন মাস সময় পাবে৷ সেটা সেই পরিস্থিতি হতে হবে৷ তখন নির্বাচন কমিশন একা পারবে না৷ সরকারকে লাগবে৷''
তার কথা, ‘‘আজকালের মধ্যে যে তফসিল ঘোষণার কথা বলা হচ্ছে এটা অবাক করা কাণ্ড৷ এটা প্রধানমন্ত্রীর ডিকটেশনে হচ্ছে বলে আমার মনে হয়৷ আরেকটু সময় নেয়া যেত, পরিস্থিতি বিবেচনায়৷''
তিনি মনে করেন,‘‘এখন যে পরিস্থিতিতে তফসিল ঘোষণা করা হচ্ছে তাতে এটা যদি আরো ভয়াবহ রূপ ধারণ করে যদি পরিস্থিতি আরও সহিংস হয় তাহলে সেটা গণতন্ত্রের জন্য কল্যাণকর হবে না৷ এটা গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচন না হয়ে ক্ষমতার বাহন হয়ে যাচ্ছে নির্বাচন৷''
নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান বলেন, ‘‘আমাদের বিবেচনায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে৷ বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটছে সেগুলো রাজনৈতিক৷ সেগুলো নিয়ে আমাদের কিছু করার নেই৷ সংবিধান অনুযায়ী আমাদের সামনে বিকল্প কিছু নাই৷ আমরা রোড ম্যাপ ধরে নির্বাচনের দিকে যাচ্ছি৷''
তার কথা, ‘‘নির্বাচনের জন্য আমরা সার্বিকভাবে প্রস্তুত৷ তফসিলের আগের যে কাজ ছিলো তা শেষ হয়েছে৷ এখন তফসিল ঘোষণার পর যা কাজ তাও সম্পন্ন হবে৷''
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘আমরা আর কোনো সংলাপ করব না৷ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আমাদের আর কোনো আলোচনার সুযোগ নেই৷ আমাদের সামনে এখন শুধুই নির্বাচন৷''

‘তফসিল কবে হবে তা নিয়ে রাষ্ট্রপতিও কথা বলতে পারেন না’