1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘তাপমাত্রা বাড়ার হার না কমলে অভিযোজনে কাজ হবে না’

৩১ অক্টোবর ২০১৭

প্যারিস চুক্তি থেকে বেরিয়ে গেছে যুক্তরাষ্ট্র৷ অন্যান্য দেশের কার্বন নিঃসরণ কমানোর হারও সন্তোষজনক নয়৷ তাই শুধু অভিযোজন বিষয়ক প্রকল্প বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশ পার পাবে না বলে মনে করেন রেজাউল করিম চৌধুরী৷

https://p.dw.com/p/2mfC4
Klimawandel in Bangladesch
ছবি: picture-alliance/ZUMA Press/S. Kanti Das

তিনি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে কাজ করা সংস্থাগুলোর ট্রাস্ট ‘কোস্ট' (কোস্টাল অ্যাসোসিয়েশন ফর সোশ্যাল ট্রান্সফর্মেশন ট্রাস্ট)-এর নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরী৷ ডয়চে ভেলের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে তিনি অ্যাডাপটেশন বা অভিযোজন প্রকল্প বাস্তবায়নে বাংলাদেশর প্রশংসা করেন৷ কিন্তু শিল্পোন্নতসহ অন্যান্য দেশ কার্বন নির্গমনে রশি টেনে না ধরলে বাংলাদেশ বিপদে পড়তে পারে বলে আশংকা প্রকাশ করেন৷

ডয়চে ভেলে: একসময় বাংলাদেশকে ‘অ্যাডাপটেশন ক্যাপিটাল অফ দ্য ওয়ার্ল্ড' বলা হয়েছিল৷ তার মানে কি অ্যাডাপটেশন, অর্থাৎ অভিযোজনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশি কাজ হচ্ছে?

Reza - MP3-Stereo

রেজাউল করিম চৌধুরী: হ্যাঁ, সেটা ঠিকই আছে৷ কারণ, বাংলাদেশে আসলেই অনেক কাজ হচ্ছে৷ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ আগে থেকেই ভালো কাজ করছে৷ উপকূলীয় এলাকার মানুষেরা দুর্যোগ মোকাবিলায় দক্ষ হয়ে উঠেছে৷ এছাড়া বাংলাদেশ লবণাক্ততা সহিষ্ণু ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে, জলাবদ্ধতা দূরীকরণে কাজ করছে৷ কিন্তু একটা বিষয় হচ্ছে, তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার যদি কমানো না যায় তাহলে অ্যাডাপটেশনে বাংলাদেশ যত ভালোই করুক না কেন, সমস্যা মিটবে না৷ জাতিসংঘে আলোচনায় এলডিসি দেশের প্রতিনিধিত্ব করা জ্ঞান আচার্য (নেপালের রাষ্ট্রদূত) একটা কথা বলেছেন, ‘‘অ্যাডাপটেশন, ইট মিনস দ্যাট, কিপিং এ পারসন ইন আইসিইউ আনটিল ডেথ', অর্থাৎ অ্যাডাপটেশন মানে হচ্ছে, মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত একটা মানুষকে আইসিইউতে রাখা৷ সুতরাং, শিল্পোন্নত দেশগুলো কার্বন নিঃসরণ কমানোর যে লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে, সে অনুযায়ী কাজ না করলে হয়ত বাংলাদেশের এক তৃতীয়াংশের বেশি এলাকা ডুবে যেতে পারে৷ ‘ইন্টেন্ডেড ন্যাশনালি ডিটারমাইন্ড কন্ট্রিবিউশন্স' বা আইএনডিসি-র আওতায় প্রতিটি দেশের জন্য কার্বন নির্গমনের হার ঠিক করা হয়েছে৷ কিন্তু সেটা বাধ্যতামূলক না হওয়ায় দেশগুলো ঠিকমতো তা মানছে না৷ যুক্তরাষ্ট্র প্যারিস চুক্তি থেকে বেরিয়ে গেলেও জার্মান চ্যান্সেলর, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট, ভারত – এই রাষ্ট্রগুলো প্যারিস চুক্তি কার্যকর করার ব্যাপারে কাজ করে যাচ্ছে৷ তবে বিভিন্ন দেশ কার্বন নিঃসরণ কমানোর হার না বাড়ালে ভবিষ্যতে আরও বন্যা, আরও প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দেবে৷

এক্ষেত্রে বাংলাদেশের করণীয় কী? জলবায়ু কূটনীতি দিয়ে বাংলাদেশ অন্য ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে সঙ্গে নিয়ে কি শিল্পোন্নত দেশগুলোর উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে?

বাংলাদেশের তো অবশ্যই কিছু করার আছে৷ সেক্ষেত্রে সিভিসি (ক্লাইমেট ভালনারেবল কান্ট্রিজ) দেশগুলোকে সঙ্গে নিতে হবে৷ এছাড়া জার্মানি, ভারতের মতো বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে কাজ করতে হবে৷ তাদের মাধ্যমে অন্য দেশগুলোকে চাপ দেয়ার কাজটি করতে হবে৷ আর ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ' -এর আওতায় বাংলাদেশের অনেক কিছু (তহবিল) পাওয়ার আছে, সেটা পাওয়ার চেষ্টা করতে হবে৷ এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ অভিযোজনের ক্ষেত্রে ৪০০ মিলিয়ন ডলারের মতো ব্যয় করছে৷ আর বিদেশি সাহায্য এসেছে প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ডলারের মতো৷ সুতরাং বিদেশি সাহায্য বেশি পাওয়া যাবে বলে মনে হচ্ছে না৷ ‘গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড' বা জিসিএফ থেকে অর্থ সহায়তা পাওয়ার চেষ্টা করতে হবে৷ অবশ্য জিসিএফ-এর কিছু নীতিমালার ব্যাপারে আমাদের প্রধানমন্ত্রী আপত্তি জানিয়েছেন৷ সেগুলো সংশোধন করতে বলেছেন৷ কারণ জিসিএফ থেকে এখন পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকা, ব্রাজিল, ভারতের মতো দেশগুলো প্রকল্প সহায়তা পাচ্ছে৷ আর বাংলাদেশ থেকে মাত্র দুটি সংস্থা ‘পিকেএসএফ' ও ‘ইডকল' জিসিএফ-এর নিবন্ধন পেয়েছে৷ এর ফলে সংস্থা দুটি এখন জিসিএফ-এর সহায়তা পেতে প্রস্তাব পাঠাতে পারবে৷

কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে জিসিএফ এর সহায়তা পেতে কেন সমস্যা হচ্ছে?

কারণ, বিশ্বব্যাংক, জিসিএফ-এর মতো মাল্টিল্যাটারাল সংস্থাগুলো উন্নত বিশ্বের সহায়তায় চলে৷ ফলে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সহায়তা দেয়ার সময় তারা উন্নত দেশের নীতিগুলো স্ট্যান্ডার্ড হিসেবে ধরে নেয়৷ কিন্তু সেটা তো হতে পারে না৷ আমার দেশ থেকে তো দ্রুত দুর্নীতি কমিয়ে দেয়া সম্ভব নয়৷ এর জন্য সময় প্রয়োজন৷ কিন্তু বহুজাতিক সংস্থাগুলো সেটা বুঝতে চায় না৷ উন্নত দেশগুলোতে বহুদিন ধরে সোশ্যাল সিকিউরিটি ব্যবস্থা চলে আসছে৷ তারপরও সেখানে যে দুর্নীতি একেবারে নেই, তা নয়৷ ফলে বাংলাদেশের মতো দেশে চাইলেই কালকে থেকে দুর্নীতি বন্ধ করা সম্ভব নয়৷

তার মানে, দুর্নীতির কারণে বাংলাদেশের তহবিল পেতে সমস্যা হচ্ছে?

হ্যাঁ, এটা একটা বড় কারণ৷ তবে তারপরও পিকেএসএফ ও ইডকলকে নিবন্ধন দেয়ার মাধ্যমে জিসিএফ স্বীকার করে নিলো যে, বাংলাদেশেও সহায়তা দেয়া যেতে পারে৷

আসন্ন জলবায়ু সম্মেলনে বাংলাদেশকে কোন বিষয়গুলোর দিকে নজর দিতে হবে বলে আপনি মনে করছেন?

এবারের সম্মেলনে প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নের নীতিমালা ঠিক করা হবে৷ বাংলাদেশকে সেখানে ভূমিকা রাখতে হবে৷ এরপর ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ' থেকে অর্থ সহায়তা পাওয়ার চেষ্টা করতে হবে৷ আর তৃতীয়ত, জিসিএফ -এর নীতিমালা পরিবর্তনে কাজ করতে হবে৷

আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান