1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

তালেবানে দক্ষিণ এশিয়ার লাভ-ক্ষতি

২০ আগস্ট ২০২১

আফগানিস্তানে তালেবান ফেরায় বাংলাদেশ এবং দক্ষিণ এশিয়ার দেশ গুলোতে কী প্রভাব পড়বে? রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক প্রভাবের কি বিশেষ কোনো দিক আছে?

https://p.dw.com/p/3zH9I
ছবি: Rahmat Gul/AP/picture alliance

আফগানিস্তানে এই পরিবর্তন বাংলাদেশ সতর্কভাবে লক্ষ্য করছে৷ বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন এরইমধ্যে সতর্ক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন৷ তিনি বলেছেন, ‘‘নতুন যে সরকারই আসুক, সেটা যদি জনগণের সরকার হয়, তাহলে আমরা তাকে গ্রহণ করবো৷'' তবে বাংলাদেশ আফগানিস্তান থেকে কোনো শরণার্থী গ্রহণের মার্কিন প্রস্তাব সরাসরি নাকচ করে দিয়েছে৷''

বাংলাদেশের সব শ্রেণির মানুষের মধ্যেই এই পরিবর্তন নিয়ে আছে ব্যাপক আগ্রহ৷ বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করা হচ্ছে নানামুখী মতামত৷ কেউ কেউ উল্লাসও প্রকাশ করছেন৷  সংবাদমাধ্যম গুরুত্বের সাথে খবর পরিবেশনের পাশাপাশি নানা ধরনের মতামত ও বিশ্লেষণ প্রকাশ করছে৷

বাংলাদেশের পুলিশ এরইমধ্যে সতর্ক অবস্থানে আছে, যাতে এখানে জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিতে না পারে, কেউ যেন আফগাস্তিানে গিয়ে তালেবানে যোগ দিতে না পারে তার ওপর নজর রাখছে৷ যদিও পুলিশ কমিশনার সফিকুল ইসলাম কয়েকজনের আফগানিস্তান যাওয়ার কথা বলেছেন৷ বাংলাদেশের কিছু তরুণের অতীতে আফগান ‘জিহাদে' অংশ নেয়ার রেকর্ড আছে৷ তারা বাংলাদেশে ফিরে জঙ্গি দলও গঠন করেছিল৷

মেজর জেনারেল (অব.) এ এন এম মুনিরুজ্জামান

বাংলাদেশের নিরাপত্তা বিশ্লেষক এবং ইনস্টিটিউট অব পিস অ্য্যান্ড সিকিউরিটি স্ট্যাডিজ-এর প্রধান মেজর জেনারেল (অব.) এ এন এম মুনিরুজ্জামান মনে করেন, ‘‘যদি আফগানিস্তানে কোনো গৃহযুদ্ধ হয়, তাহলে সেখানে যে ধরনের নিরাপত্তা পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে তার প্রভাব বাংলাদেশসহ পুরো দক্ষিণ এশিয়ায় পড়বে৷ বিশেষ করে তাদের প্রতিবেশী দেশগুলোর ওপর মানবিক বিপর্যয়ের প্রভাব পড়বে৷ এর সম্ভাবনা আছে৷ বাংলাদেশের বড় উদ্বেগের বিষয় হলো সোভিয়েত সমর্থিত সরকারবিরোধী বিপ্লবে বাংলাদেশিরা সেখানে গিয়ে তালেবানের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে জিহাদ করেছে৷ সেই পুরনো অভিজ্ঞতা থেকে আশঙ্কা করি তারা হয়ত এখানে যদি তাদের সঙ্গে তালেবানের আবার যোগাযোগ হয় তাহলে নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হতে পারে৷ আর সেটা যদি না-ও হয় তাহলেও দেখতে পাচ্ছি যে, এখন জঙ্গি গোষ্ঠিগুলো আবার উজ্জীবিত হতে পারে৷''

তার মতে, এই প্রভাব ভারত ও পাকিস্তানেও পড়বে৷ তবে শ্রীংলঙ্কা আর নেপালের সাথে তালেবানের আগে কোনো যোগাযোগ না থাকায় প্রভাব পড়ার আশঙ্কা নাই৷

বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ, বিশেষ করে আফগান ফেরত ‘জিহাদীদের' নিয়ে গভীরভাবে কাজ করেছেন সিনিয়র সাংবাদিক জায়েদুল আহসান পিন্টু৷  তিনি মনে করেন, ‘‘বাংলাদেশের আতঙ্কের বিষয় হলো এখন আফগানিস্তানে জঙ্গিবাদের ব্রিডিং সেন্টার হয় কিনা৷ কারণ, বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ আফগানিস্তান ও পকিস্তানের সীমান্ত হয়েই এসেছে৷ কিন্তু হোলি আর্টিজান হামলার পর বাংলদেশে জঙ্গিদের কঠোর হাতে দমন করা হয়েছে৷ এখানে তাদের এখন আর তেমন কোনো শক্তি নাই৷''

তিনি বলেন, ‘‘তালেবান এখন আন্তর্জাতিক সমর্থন চাইছে৷ তারা এখন নারী অধিকার, সংবাদমাধ্যমের কথা বলছে৷ তবে তা ইসলামি শরিয়ার অধীনে৷ সেটা কেমন হয় তা দেখার আছে৷ তারা আদৌ তাদের চরিত্র বদলায় কিনা তা-ও দেখতে হবে৷ তাই শুধু বাংলাদেশ নয় পুরো দক্ষিণ এশিয়ার জন্যই একটি নতুন পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে৷''

জায়েদুল আহসান পিন্টু

কিন্তু সাবেক কূটনীতি মেজর জেনারেল (অব.) শহীদুল হক মনে করেন, ‘‘তালেবান আলকায়েদা বা আইএস নয়৷ তারা ওই দুইটি সংগঠনের মতো আন্তর্জাতিক জঙ্গি গোষ্ঠী নয়৷ তালেবান আসলে সমঝোতার ভিত্তিতেই ক্ষমতায় যাচ্ছে৷ তারা চাইছে সবাইকে নিয়ে একটি সরকার গঠন করতে৷ তারা আন্তর্জাতিক সমর্থন চাইছে৷ এই কারণে তাদের চরিত্রেরও পরিবর্তন হবে৷ পাকিস্তান ও চীনের সাথে তাদের সমঝোতা আছে৷ এখন এই অঞ্চলে যাদের সাথে তাদের সরাসরি সীমানা আছে তাদের সাথে তারা সুসম্পর্ক রাখবে বলেই মনে হচ্ছে৷ ভারতের সাথে তাদের সম্পর্ক কেমন হবে তা নিশ্চিত নয়৷ পাকিস্তান ও চীন চাইবে তাদের মাধ্যমে যোগাযোগ নিরাপত্তা ও ব্যবসা বাড়াতে৷ বাংলাদেশেরও বড় একটি সুযোগ তৈরি হতে পারে ব্যবসা বাণিজ্যের৷''

এই অঞ্চলে এখন ভারতেরই সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ ও ব্যবসা আছে আফগানিস্তানের সঙ্গে৷ বাংলাদেশেরও ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়তে শুরু করেছিল৷ ২০২০-২১ অর্থ বছরে আফগানিস্তানে ৮৬ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ৷ এর আগের বছর রপ্তানি করে ৫৭ লাখ ডলারের৷ বাংলাদেশ আফগান দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমান বছরে দুই কোটি ৮৬ লাখ ডলারের৷ গবেষক আলতাফ পারভেজ মনে করেন, ‘‘যদি তালেবানের চরিত্রের পরিবর্তন হয় তাহলে বাংলাদেশের ব্যবসা ও কর্মসংস্থানের একটি সুযোগ হতে পারে আফগানিস্তানে৷ কারণ, সেখানকার অর্থনীতি কৃষিনির্ভর৷ সেখানে এখনো আধুনিক কৃষি শুরু হয়নি৷ সেটা হলে বাংলাদেশিরা সেখানে কাজ পাবেন৷''

‘‘আর তালেবানের যদি সত্যিই বদলাতে হয় তাহলে তাদের অর্থনীতি এবং আন্তর্জাতিক যোগাযোগকে গুরুত্ব দিতে হবে৷ তা করতে হলে প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটাতে হবে৷''