1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

তালেবানের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক জোরদারের লক্ষ্য কী?

১২ জানুয়ারি ২০২৫

তালেবান সরকারের সঙ্গে প্রথমবারের মতো দিল্লির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের বৈঠকের পর আফগানিস্তান ও ভারতের সম্পর্ক নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে৷

https://p.dw.com/p/4p4Jr
ভিক্রাম মিশ্রি (বামে) ও আমির খান মুত্তাকী (ডানে)
ভারতের পররাষ্ট্র সচিব ভিক্রাম মিশ্রি (বামে) ও তালেবান সরকারের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকী (ডানে) ছবি: dpa/picture-alliance

কাবুলের সঙ্গে দিল্লির সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতাও এই বৈঠকের মধ্য দিয়ে জোরদার হওয়ার আশা করেছে দিল্লি৷ অপরদিকে ইসলামপন্থি তালেবান সরকারের জন্যও এটি বড় ধরনের কূটনৈতিক পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে৷

বুধবার (৮ জানুয়ারি) মধ্যপ্রাচ্যের দেশ দুবাইতে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব ভিক্রাম মিশ্রি ও তালেবান সরকারের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকী সাক্ষাৎ করেছেন৷

তালেবান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি অনুসারে, আফগানিস্তানে নিরাপত্তা জোরদার, উন্নয়নমূলক কাজে ভারতের অংশীদার হওয়া ও মানবিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা নিয়ে দুদেশের মধ্যে আলোচনা হয়েছে৷ এছাড়াও ইরানের চাবাহার বন্দর ব্যবহার করে যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশটি যেন বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে সে বিষয়েও আলোচনা হয়েছে৷

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘‘সমতা ও অর্থনৈতিক গুরুত্বের উপর ভিত্তি করে গঠিত আফগানিস্তানের পররাষ্ট্রনীতি অনুসারে, গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক ও অর্থনৈতিক অংশীদার হিসেবে ভারতের সঙ্গে রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করতে চায় আফগানিস্তানের ইসলামিক শাসকগোষ্ঠী৷’’

উল্লেখ্য, তালেবান ২০২১ সালে দ্বিতীয় দফায় আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের পর এটিই তালেবান ও ভারতের মধ্যকার সর্বোচ্চ পর্যায়ের বৈঠক৷

দ্বিপাক্ষিক এই বৈঠক সম্পর্কে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ‘‘আফগানিস্তানের অনুরোধ সাপেক্ষে ভারত প্রথম ধাপে দেশটির স্বাস্থ্যখাতে সহায়তার জন্য সরঞ্জাম সরবারহ ও শরণার্থীদের পুনর্বাসনের কাজে সহযোগিতা করবে৷ ক্রীড়া ক্ষেত্রেও (ক্রিকেটে) পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে দুদেশের মধ্যে আলোচনা হয়েছে৷’’

চীনকে টেক্কা দিতে এই পদক্ষেপ?

সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর উপর নজর রাখা আফগানিস্তান বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ও মান্ত্রায়া ইন্সটিটিউট অফ স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ এর প্রতিষ্ঠাতা ম্যারিয়েট ডি'সুজা মনে করছেন, এই বৈঠকের মাধমে দুই দেশের সম্পর্কেও নতুন দিক উন্মোচিত হয়েছে৷ ডয়চে ভেলেকে ম্যারিয়েট বলেন,‘‘ভারতের নীতির মূল উদ্দেশ্যই হল আফগানিস্তানে তাদের পুরনো প্রভাব ফিরে পাওয়া ও কাবুলের সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা৷’’

তিনি বলেন, ‘‘এছাড়াও ২০২১ এর আগস্ট থেকে চীনের উপস্থিতি বাড়ার ফলে এ অঞ্চলে নিজের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতেও ভারত বদ্ধ পরিকর৷’’ 

আফগানিস্তানে নিযুক্ত ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত গৌতম মুখোপাধ্যায় ডয়চে ভেলেকে জানান, ভারত তার কূটনৈতিক অবস্থানের পুনর্মূল্যায়ন করার পাশপাশি তালেবান নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে৷ গৌতম মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কঠোরভাবে নারীদের দমিয়ে রাখা ও সর্বক্ষেত্রে তাদের অধিকার বঞ্চিত করা তালেবান সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য ভারত কোন চাপে নেই৷

তিনি আরও বলেন, ‘‘এর বাইরেও নানা কারণে দুই দেশের মধ্যকার কার্যক্রম বাড়ানোর কারণ রয়েছে৷ যেমন বাণিজ্য, ঐতিহাসিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপন, চাবাহার ও ইন্টারন্যাশনাল নর্থ-সাউথ ট্রান্সপোর্ট করিডোর এবং চীন গুরুত্বপূর্ণ৷’’

সবদিক গুছিয়ে মাঠে নামা

গত নভেম্বরে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জেষ্ঠ্য কর্মকর্তা জেপি সিং তালেবান নেতৃবৃন্দের সাথে বেশ কয়েক দফায় বৈঠক করেছেন৷ এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ছিল, আফগানিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোল্লাহ মোহাম্মেদ ইয়াকুবের সঙ্গে বৈঠক৷

মানবিক সহায়তার কাজ সমন্বয় করার উদ্দেশে ২০২২ এর জুন মাসে ভারত একটি ‘টেকনিক্যাল টিম' পাঠায় কাবুলে৷ ওই দলটি আফগানিস্তানকে দিল্লি কীভাবে সহায়তা করতে পারে সে বিষয়ে পর্যালোচনা করে৷ এরপর থেকেই তালেবান দিল্লিতে তাদের স্থায়ী প্রতিনিধি প্রেরণের দাবি জানিয়ে আসছিল৷ যার পরিপ্রেক্ষিতে ভারত তালেবানের প্রতিনিধি হিসেবে ইকরামুদ্দিন কামিল-কে মুম্বাইয়ে অবস্থিত আফগানিস্তানের দূতাবাসে কাজের অনুমোদন দেয়৷

একই সঙ্গে তালেবান সরকার আফগানিস্তানের নাগরিকদের জন্য বিশেষ করে শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী ও রোগীদের ভারতীয় ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করার অনুরোধ করে৷ সাম্প্রতিক বৈঠককে আফগানিস্তানের সাবেক দূত আমার সিনহা বলেন, ‘‘এই উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকটি আগের কাজগুলোর পরবর্তী ধাপ এবং যা অনেকগুলো বৈঠকের সম্মিলিত ফলাফল৷ কারণ, কূটনীতি হচ্ছে একটি দ্বিমুখী রাস্তা৷’’

পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কে শীতলতা

পাকিস্তানে নিযুক্ত সাবেক ভারতীয় দূত অজয় বিসারিয়া ডয়চে ভেলেকে জানান, আফগানিস্তানের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক উন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে আফগানিস্তানের মাটিতে বসে যেন কেউ ভারত বিরোধী কোন কার্যক্রম পরিচালনা না করতে পারে তা নিশ্চিত করা৷ ঠিক সে কারণেই ভারত আংশিকভাবে সম্পর্ক উন্নয়ন করছে এবং মানবিক সহযোগিতামূলক কার্যক্রমে সমর্থন দিচ্ছে৷

অজয় বিসারিয়া বলেন, ‘‘অন্যদিকে পাকিস্তান আফগানিস্তানকে দেখে একটি ভৌগলিক দিক থেকে৷ যেখানে তারা তাদের কৌশলগত প্রভাব বিস্তার করতে পারবে, বিশেষ করে ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্র চলে যাওয়ার পর৷

আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসবাদ ও সাম্প্রতিক সময়ে আফগানিস্তানের ভূখণ্ডে তেহরিক-ই-তালেবানের জঙ্গি গোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে পাকিস্তানের বিমান হামলার পর থেকেই দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্কের অবনতি ঘটতে থাকে৷ ভারত এই বিমান হামলার নিন্দা জানিয়েছে৷ বিগত কয়েক মাসে তেহরিক -ই-তালেবান জঙ্গি গোষ্ঠীর সদস্যরা পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীর উপর বেশ কয়েকবার আক্রমণ করেছে৷

অজয় বিসারিয়া বলেন, ‘‘ক্ষুদ্র সামরিক স্বার্থকে বৃহৎ কূটনৈতিক সম্পর্কের উপর স্থান দিয়ে নেয়া এই পদক্ষেপ, প্রতিবেশী দেশ সম্পর্কে পাকিস্তানের ভ্রান্ত নীতির ফলাফল৷’’

তিনি আরও বলেন, ‘‘ভারত এবং তালেবানের মধ্যে একটি চমৎকার বোঝাপড়া গড়ে উঠেছে৷ আফগানিস্তানের কাছেও দুটি মনোভাবই এখন বেশ পরিষ্কার৷’’

মুরালি কৃষ্ণান/এসইএচ