তাহেরী হুজুর, আদালতের মামলা শোনা উচিত
২ সেপ্টেম্বর ২০১৯জনাব তাহেরীর অনেকগুলো ভাষণ দেখেছি আমি, জেনেছি তার বক্তব্য বা কর্মকাণ্ডকে নিয়ে আলোচিত গান বা ট্রলগুলো৷ তুমুল আলোচিত-জনপ্রিয়-বিতর্কিত তরুণ এই বক্তা নিজেও তার বিরুদ্ধ করা ট্রলগুলো দেখেন, শোনেন, জবাবও দেন৷
সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক ফৌজদারি কার্যবিধির ২০০ ধারায় মামলার বাদী ঢাকা আইনজীবী সমিতির কার্যকরী সদস্য মো. ইব্রাহিম খলিলের জবানবন্দি শুনেছেন৷ বাদীর মতে, জনাব তাহেরীর কর্মকাণ্ড ইসলামে বিদাত বলে গণ্য৷ তিনি ইসলাম ধর্মের প্রচারকারী নন, অপপ্রচারকারী৷
দৈনিক যুগান্তরে পড়ছি, জবানবন্দী শুনে বিচারক বাদীকে বলেন, ‘‘একেকজন একেক রকম জিকির করতে পারেন, এতে আপনার সমস্যা কী?’’ বিচারক আরো বলেন, ‘‘আপনার মামলার কারণে তাহেরী আরো উড়বে৷ আপনি কোতোয়ালি থানায় মামলা করতে গেছেন, সেখানে পুলিশ ধর্মীয় মূল্যবোধে আঘাতের কোনো প্রমাণ পায়নি, বিধায় মামলা নেয়নি৷’’ এরপর বিচারক বাদীর কাছ থেকে পেনড্রাইভ (পেনড্রাইভে ওয়াজের ভিডিও) রেখে দিয়ে মামলা আমলে নেবেন কিনা, সে বিষয়ে আদেশ পরে দেবেন বলে জানান৷ বিচারকের এক প্রশ্নের জবাবে বাদী বলেছেন, তাকে এখনই না থামালে মানুষ ধর্ম বিষয়ে ভুল জানবে৷
আমার মতে, তাহেরী হুজুর উড়ুন বা বসে পড়ুন আদালতের উচিত বাদী বিবাদীর কথা শোনা৷ তবে পুরো বিচার হওয়ার আগে দুই পক্ষের কেউই যাতে কোনো হয়রানির শিকার না হন সেদিকেও লক্ষ্য রাখা দরকার৷
শুধু জনাব তাহেরীর ক্ষেত্রে নয়, কারণ, দৈনিক কালের কণ্ঠে পড়ছি অনেক শব্দ ব্যবহারের কারণ হিসেবে তিনি ‘ক্লান্তি’ বা ‘স্লিপ অফ টাং’-এর কথা বলেছেন৷ পরীক্ষা করে দেখা দরকার জেনেশুনে তিনি মিথ্যা তথ্য দিচ্ছেন কিনা৷ কারণ, ধর্মীয় বা ধর্মকে আশ্রয় করে দেওয়া এসব বক্তব্য বা কর্মকাণ্ড, যা সাধারণভাবে ওয়াজ বা জিকির সাধারণের কাছে এখন খুবই জনপ্রিয়৷ এসব বক্তা এখন উচ্চমূল্যের পারিশ্রমিকও পান৷ নিজেদের জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে তারা আসলে এক ধরনের ‘এন্টারটেনমেন্ট’-এর দিকেই মনোযোগ দিচ্ছেন৷ এটা ইসলামের জন্য ভালো না মন্দ তা নিয়ে আলোচনা হওয়াই উচিত৷
অবশ্য সবসময় বিষয়গুলো শুধু সরল বিনোদনই থাকে এরকম নয়৷ সামাজিক গণমাধ্যমগুলোর দিকে একটু চোখ রাখলেই জানা যায়, এক ইসলাম ধর্মকে ব্যাখ্যা বা প্রচারে কত ভি্ন্ন ও অনেক সময় আলাদা তরিকার ব্যবহার রয়েছে৷ এদের কেউ কেউ পরষ্পরকে ভয়ংকর আক্রমণও করে থাকেন৷ শব্দের আক্রমণের চেয়েও মারাত্মক এই যে, এরকম একজন জনপ্রিয় বক্তা মাওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকীকে পাঁচ বছর আগে জবাই করে হত্যা করা হয়েছে৷ সেই হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন এখনো দেওয়া হয়নি৷
আমাদের দেশের বক্তারা কতরকমভাবে যে কত মন্তব্য করেন, এসব মন্তব্যের কারণে অনেকের মূল্যবোধ বা অনুভূতিতেই আঘাত লাগতে পারে৷ আদালতের মতো আমার জানতে ইচ্ছা করে মূল্যবোধ বা অনুভূতি সবার জন্য সমান হবে, নাকি গুরুত্বের বিচার হবে সংখ্যার দাঁড়িপাল্লায়?