1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

তিন সপ্তাহ পরেও আরজি কর-কাণ্ডে একাধিক ধোঁয়াশা

৩০ আগস্ট ২০২৪

আরজি কর-কাণ্ডে এবার সামনে এসেছে ফোন কলের তিনটি ক্লিপ। পুলিশের সাংবাদিক বৈঠক। এখনো বহু তথ্য অস্পষ্ট।

https://p.dw.com/p/4k5Kg
আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ
ভাঙচুরের পর আরজি কর মেডিক্যাল কলেজছবি: Subrata Goswami/DW

পুলিশের হাত থেকে সিবিআইয়ের হাতে গেছে আরজি কর-কাণ্ডের তদন্ত। পুলিশ-সিবিআই টানাপড়েন অব্যাহত। আর তারই মধ্যে নির্যাতিতার মায়ের অসহায় প্রশ্ন, কবে ঘটনার সমস্ত তথ্য স্পষ্ট হবে?

বৃহস্পতিবার সমাজ-মাধ্যমে ঘটনার দিন সকালের টেলিফোন রেকর্ডিং দাবি করে তিনটি ফোন কল রেকর্ডিংয়ের ক্লিপ সামনে আসে। একাধিক সংবাদমাধ্যমেও সেই ক্লিপ চালানো হয়। ডয়চে ভেলে সেই ক্লিপ শুনেছে তবে এর সত্যতা যাচাই করেনি।

ক্লিপটিগুলিতে দুই নারী এবং এক পুরুষের কণ্ঠ শোনা যায়। দাবি করা হচ্ছে, পুরুষ কণ্ঠটি নির্যাতিতার বাবার। অন্য দুই নারী কণ্ঠের একটি নির্যাতিতার মায়ের এবং একটি আরজি কর হাসপাতালের কোনো এক কর্মকর্তার। ফোনে যিনি নিজেকে একবার অ্যাসিস্টেন্ট বা সহকারী সুপার বলে পরিচয় দেন।

ফোন কলে প্রথমেই নির্যাতিতার বাবা-মাকে দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছানোর আবেদন করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, তাদের মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, তা-ই তাদের যেতে বলা হচ্ছে। বাবা-মা বারংবার জিজ্ঞেস করছেন, মেয়ের কী হয়েছে? কিন্তু তার স্পষ্ট উত্তর দেওয়া হচ্ছে না, বরং বলা হচ্ছে, তিনি চিকিৎসক নন, তাই বলতে পারবেন না।

দ্বিতীয় ক্লিপের বলা হচ্ছে, মেয়ের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাকে এমারজেন্সিতে ভর্তি করা হয়েছে। বাবা-মা যেন দ্রুত পৌঁছে যান। এখানেই নিজেকে সহকারী সুপার বলে পরিচয় দেন ওই নারী।

তৃতীয় ক্লিপে বলা হচ্ছে মেয়ে 'সুইসাইড' করেছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ আছে। হাসপাতালের অন্য কর্মকর্তারাও আছেন।

ফোন ক্লিপের গলা তাদের কি না, এই প্রশ্নের উত্তরনির্যাতিতার বাবা-মা দেননি। তারা জানিয়েছেন, তারা টেলিভিশন দেখছেন না, তাই অডিও ক্লিপগুলি শোনেননি। তবে আগেই আদালতে তারা জানিয়েছিলেন, ঘটনার দিন সকালে হাসপাতাল থেকে তাদের কাছে দুইটি ফোন গেছিল। প্রশ্ন উঠছে, যে তিনটি ফোন কলের ক্লিপ ভাইরাল হয়েছে, তা নির্যাতিতার বাবা-মায়ের দাবি মতো দুটি ফোন কলের অংশ বিশেষ, নাকি তিনটি ফোন কলই করা হয়েছিল!

গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এই ফোন কলের ক্লিপ ভাইরাল হওয়ার পরেই কলকাতা পুলিশ তড়িঘড়ি একটি সাংবাদিক বৈঠক করে, এবং সেখানে বলা হয়, প্রথম থেকেই তারা বলে আসছে, নির্যাতিতার পরিবারকে তারা ফোন করেনি, এটাই তার প্রমাণ। এর আগে আরো একটি ভাইরাল ক্লিপকে সামনে রেখে কলকাতা পুলিশ এভাবেই তড়িঘড়ি একটি সাংবাদিক বৈঠক করেছিল। ওই ভাইরাল ভিডিও-তে দেখা যাচ্ছে, ঘটনাস্থলে, অর্থাৎ, আরজি করের সেমিনার হলে অসংখ্য মানুষ ঘুরছেন। সেখানে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যেমন আছেন, তেমনই আছেন পুলিশের অফিসাররেরাও। আছেন ফরেন্সিক চিকিৎসকেরা।

সিবিআইয়ের সূত্র দাবি করেছিল, সময়মতো ঘটনাস্থল ঘিরে দেওয়া হয়নি। ফলে বহু ফরেন্সিক তথ্য নষ্ট হয়েছে। কলকাতা পুলিশ দাবি করে, ছবিতে যাদের দেখা যাচ্ছে তারা ১১ ফুটের একটি অংশে আছে। বাকি ৪০ ফুট ঘিরে দেওয়া হয়েছিল, যা ভিডিও-তে দেখা যাচ্ছে না। তবে পুলিশের এই দাবির সঙ্গে বিশেষজ্ঞদের সকলে সহমত নন।

বস্তুত, সিবিআইয়ের সূত্র ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, আদালতে এই মামলার আগামী শুনানিতে পুলিশের বিরুদ্ধে তথ্য লোপাটের অভিযোগ সরাসরি তোলা হতে পারে। যে প্রক্রিয়ায় নির্যাতিতার মৃতদেহ এবং ক্রাইম সিন থেকে ফরেন্সিক নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল, তা নিয়েই প্রশ্ন তুলছে সিবিআই। যে কারণে, ওই দিন যে দুই ফরেন্সিক চিকিৎসক এভিডেন্স সংগ্রহ করেছিলেন, তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠানো হয়েছিল। সাধারণত এধরনের ঘটনায় যে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের এভিডেন্স সংগ্রহ করার কথা, ঘটনাস্থলে তাদের দেখা যায়নি বলে অভিযোগ করা হচ্ছে। আর এখানেই উঠছে প্রশ্ন। ফরেন্সিকের যে বিশেষজ্ঞেরা দ্রুত ফরেন্সিক নমুনা সংগ্রহ করলেন, তারা কার নির্দেশে সে কাজ করলেন? কেন বাকি ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের সেখানে ডাকা হলো না?

এখানেই শেষ নয়। সিবিআইয়ের অভিযোগ, কলকাতা পুলিশ এবং রাজ্য ফরেন্সিক ল্যাব তাদের সঙ্গে সহযোগিতা করছে না। রাজ্যের ফরেন্সিক ল্যাব এখনো পর্যন্ত তাদের যাবতীয় রিপোর্টই দিয়ে উঠতে পারেনি বলে অভিযোগ করা হচ্ছে।

এদিকে নির্যাতিতার মা আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলেছেন। সংবাদমাধ্যমের সামনে তিনি বলেছেন, আদৌ ওই সেমিনার রুমে ঘটনাটি ঘটেছিল কি না, তা স্পষ্ট নয়। তার দাবি, তারা যখন ঘটনাস্থলে পৌঁছান, তখন মেয়ের গায়ে সবুজ চাদর ছিল। কিন্তু পরে যে ছবি দেখা গেছে, সেখানে দেখা যাচ্ছে নীল চাদর। আবার তাদের মেয়ে একটি লাল চাদর গায়ে দিয়ে শুয়েছিল বলেও তারা শুনেছেন।

কলকাতা পুলিশ অবশ্য এবিষয়েও তাদের বক্তব্য জানিয়েছে। পুলিশের দাবি, সবুজ নয়, নির্যাতিতার গায়ে নীল চাদরই ছিল। এবিষয়ে তাদের কাছে সমস্ত তথ্যপ্রমাণ আছে। আর ঘটনাস্থল থেকে একটি লাল চাদরও উদ্ধার হয়েছিল। যা ফরেন্সিক ল্যাবে পাঠানো হয়েছে।

প্রশ্ন আছে আরো। ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনা কি সেমিনার হলই, নাকি অন্য কোথাও? একজন, নাকি একাধিক ব্যক্তি এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত? খুনের মোটিভ বা কারণ কী? সবচেয়ে বড় কথা, কেন হাসপাতাল থেকে ফোন করে বলা হলো, মেয়ে আত্মহত্যা করেছে? কেন দ্রুত দেহ দাহ করার চেষ্টা হলো? 

নির্যাতিতার মা এই প্রশ্ন তুলছেন। সর্বোচ্চ আদালতের কাছে এই প্রশ্নগুলি তিনি পেশ করতে চান বলেও জানিয়েছেন তিনি। প্রশ্নের উত্তর চাইছে আন্দোলনরত চিকিৎসক এবং সাধারণ মানুষও।

এসজি/জিএইচ (পিটিআই)