1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দুদক: দুর্নীতির পুঁটি বেশি, রাঘব বোয়াল কম ধরার জাল?

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২

দুদকের কাজ দুর্নীতিবাজদের ধরা৷ কিন্তু দুদকের সেই কাজ নিয়ে প্রশ্ন আছে৷ এমন প্রশ্নও চালু এখন- দুদক বড় দুর্নীতিবাজদের ধরে, নাকি রক্ষা করে?

https://p.dw.com/p/47cKy
ছবি: bdnews24.com

এমনকি সাবেক ডিআইজি মিজানুর রহমান ও দুদকের সাবেক পরিচালক এনামুল বাছিরের দুর্নীতির দায়ে কারাদণ্ড হওয়ার পর দণ্ডপ্রাপ্ত মিজানুর প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘দুদকে কত বাছির আছে?’’

সম্প্রতি রাঘব বোয়ালদের বিরুদ্ধে তদন্তে নেমে চাকরি হরিয়েছেন দুদকের উপ-সহকারি পরিচালক শরীফ উদ্দিন ৷ আর তাতেই প্রশ্ন উঠেছে৷ টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘‘দুর্নীতির রাঘব বোয়ালরা পার পেয়ে যায়৷ চুনোপুঁটিদের ধরা হয়৷ রাঘব বোয়ালদের ধরতে গেলে চাকরি হারাতে হয়, যা দুদক গঠনের উদ্দেশ্যের সম্পূর্ণ বিপরীত৷’’

তবে দুদকের আইনজীবী আ্যাডভোকেট খুরশীদ আলমের দাবি, ‘‘এসব কথা বলছে বিএনপিপন্থিরা৷’’

দুদক তুমি কার?

২০০৪ সালের ২১ নভেম্বর দুদক আইনের অধীনে দুদকের যাত্রা শুরু৷ দুদকের ওয়েবসাইটে দুদকের রূপকল্প ও লক্ষ্যে বলা হয়েছে, সমাজের সব স্তরে প্রবাহমান একটি শক্তিশালী দুর্নীতিবিরোধী সংস্কৃতির চর্চা এবং এর প্রসার সুনিশ্চিত করা দুদকের উদ্দেশ্য৷ আর লক্ষ্য হলো, অব্যাহতভাবে দুর্নীতির দমন, নিয়ন্ত্রণ, প্রতিরোধ এবং উত্তম চর্চার বিকাশ সাধন করা৷

কমিশনের তিনটি কৌশলগত লক্ষ্য রয়েছে:

১.শাস্তিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে দুর্নীতি দমন
২.বিদ্যমান কার্যপদ্ধতি পর্যালোচনার মাধ্যমে দুর্নীতি প্রতিরোধ করা
৩. শিক্ষা, উত্তম চর্চার বিকাশ ও সচেতনতামূলক প্রচারের মাধ্যমে দুর্নীতি প্রতিরোধ করা

কিন্তু দুদক গঠনের পর থেকে এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ পুলিশের সাবেক ডিআইজি মিজানুর রহমান এবং তার তদন্ত করতে গিয়ে ঘুস খেয়ে ধরা পড়া দুদকের সাবেক পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরের বুধবার যথাক্রমে তিন এবং আট বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত৷ দুইটি মামলারই তদন্ত করেছে দুদক৷ কিন্তু তা এত সহজে হয়নি৷ সংবাদমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা, অডিও ও ডকুমেন্ট ফাঁস হলে দুদক তদন্তে নামতে বাধ্য হয়৷

অন্য ক্ষমতাধর কারুর বিরুদ্ধে দুদকের আটঘাট বেঁধে নামার কোনো নজির খুঁজে পাওয়া যায় না৷ পিকে হালদার সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা পাচার করে দেশের বাইরে চলে যাওয়ার পর দুদকের ঘুম ভাঙে৷ মাঝেমধ্যে কিছু এমপিকে নোটিস দিয়ে ডাকে- ওই পর্যন্তই ৷ তারপর আর কোনো খবর থাকে না৷ মানি লন্ডারিং-এর কিছু টাকা এক দশক আগে উদ্ধার করে এখনো সেই প্রাচীন সাফল্যের গল্পই বলে যাচ্ছে৷

ঘরের দুর্নীতির কী হবে?

গত ডিসেম্বরে আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস উপলক্ষে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আয়োজিত এক সভায় পাঠানো ভিডিও বার্তায় রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ দুদককে অন্যের ঘরে অভিযান চালানোর আগে ‘নিজের ঘরে’ অভিযান চালানোর পরামর্শ দেন৷ তিনি বলেন, ‘‘দুদকের সব পর্যায়ের কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, দুর্নীতি দমন কার্যক্রমে তারা যেন সর্বোচ্চ নিরপেক্ষতা ও নৈতিকতা প্রদর্শন করেন৷  অন্যের দুর্নীতি চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনার পূর্বে নিজেদের অনিয়ম ও অসততা দূর করতে হবে৷’’

বোয়ালরা পার পেয়ে যায়, চুনোপুঁটিদের ধরা হয়: ড. ইফতেখারুজ্জামান

তিনি আরো বলেন, ‘‘দুর্নীতি করলে শাস্তি পেতে হবে এবং দুর্নীতি করে কেউ পার পাবে না- জনমনে এমন ধারণা জন্মাতে পারলেই দুদকের ওপর জনগণের আস্থা বাড়বে৷’’

দুদকের দুর্নীতি

দুদক দাবি করছে, ২০১৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত দুদকের ৬১ জন কর্মকর্তা- কর্মচারীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে দুর্নীতির অভিযোগে৷ তাদের কেউই খুব বড় পদধারী নন৷ তাদের মধ্যে সর্বোচ্চ উপ-পরিচালক পর্যায়ের কর্মকর্তা রয়েছেন৷ অধিকাংশই ছোট পদে চাকরি করেন৷ দুদকের কর্মকর্তারা সম্পদের হিসাবও জমা দেন না৷

দুদকে এখন মাসে গড়ে এক হাজারেরও বেশি অভিযোগ জমা পড়ে৷ ২০২১ সালে মোট অভিযোগ জমা পড়েছে প্রায় ১৯ হাজার৷ তবে এর মধ্যে তদন্ত শেষে মামলা হয় খুব কম৷ দুদকের কাছে এখন মামলা আছে এক হাজার ৫২১টি৷ আর তদন্ত পর্যায়ে আছে তিন হাজার ৮৭৪টি৷

তবে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম দাবি করেন, ‘‘এখন দুদকের মামলায় সাজার হার বাড়ছে৷ ৭০ ভাগ মামলায় সাজা হচ্ছে৷’’

আমরা রাঘব বেয়ালদের ধরি না এটা যারা বলেন তারা বিএনপিপন্থি লোক: খুরশীদ আলম

আর রাঘব বোয়ালদের ধরা হচেছ না- এই অভিযোগের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘কেন মিজান ও এনামুল বাছিরের তো শাস্তি হয়েছে৷ আমাদের একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়৷ তাই সময় লাগে৷ আমরা রাঘব বেয়ালদের ধরি না এটা যারা বলেন তারা বিএনপিপন্থি লোক৷’’

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘‘দুদক যে উদ্দেশ্যে গঠন করা হয়েছিল, তা সফল হয়নি৷  দুদক আইনে কোনো সমস্যা এখন আর নেই৷ তারা চাইলেই ধরতে পারেন৷ কিন্তু বড়দের ধরছেন না৷ আর দুদকে বিভাগীয় কর্মকর্তাদের বাইরে প্রশাসন থেকে উপরের পদে অনেকে আসেন৷ তাদের মধ্যে দুর্নীতির প্রবণতা বেশি৷’’

তার কথা, ‘‘সাম্প্রতিক ঘটনায় মানুষের মনে এই ধারণা জন্মেছে যে, দুদকের কাছে দুর্নীতিবাজরা সুরক্ষা পান৷’’

মানবাধিকার কর্মী এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)-এর সাধারণ সম্পাদক নূর খান দাবি করেন, ‘‘দুদকেই দুর্নীতি আছে৷ একজন এনামুল বাছিরের শাস্তি হয়েছে৷ এরকম আরো অনেক এনামুল বাছির আছেন দুদকে৷ তাহলে তারা দুর্নীতিবাজদের ধরবেন কীভাবে?’’

তিনি বলেন, ‘‘দুদক কর্মকর্তা শরীফ উদ্দিনের অপসারণ প্রমাণ করে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কাজ করলে বরং দুদকে থাকা যায় না৷ এই ঘটনা দুদকের প্রতি দেশের মানুষকে আরো আস্থাহীন করেছে৷’’  

দুদকেই দুর্নীতি আছে: নূর খান

দুদকে হলমার্ক, বেসিক ব্যাংক, স্বাস্থ্য ও সেবাখাতে বড় বড় দুর্নীতির তদন্ত বছরের পর বছর ঝুলে আছে৷ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যানাডায় বেগমপাড়ায় অর্থ পাচারকারীদের সংখ্যা জানালে দুদক উচ্চ আদালতে সে ব্যাপারে তথ্য দিয়ে সন্তুষ্ট করতে পারেনি৷

এসব বিষয় নিয়ে দুদক কমিশনের কারো বক্তব্য জানা যায়নি৷ এমনকি দুদকের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমানও বলেন, ‘‘দুদক নিয়ে আমি এখন কোনো কথা বলতে রাজি নই৷’’

তবে কয়েকমাস আগে দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আব্দুল্লাহ বলেছিলেন, ‘‘এখানে যারা চাকরি করেন, তারা তো সবাই অন্য গ্রহ থেকে আসেননি৷ তারা কি সবাই ফেরেশতা? ফেরেশতা না৷ সমাজে আর আট-দশটি জায়গায় যা আছে, আমার এখানেও তাই৷ আমি সাধ্যমতো চেষ্টা করবো নিজেদের দুর্নীতির বাইরে রাখতে৷’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘আমাদের মামলায় শাস্তি পাওয়ার হার শতকরা ৬০ থেকে ৭০ ভাগ৷ ভবিষ্যতে এটা আরো বাড়বে৷ কারণ, দুদকের তদন্তে নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে৷ ফরেনসিক ল্যাব করা হচ্ছে৷ ফলে তদন্তে দক্ষতার যে ঘাটতি আছে, তা অনেকটা দূর হবে৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য