‘ওহাবি রিপাবলিক’
২৫ আগস্ট ২০১২তালেবানকে ঘৃণা করে এরকম ব্যক্তি পাকিস্তানে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর নয়৷ সেদেশে গত কয়েক বছরে তালেবানের আত্মঘাতী হামলায় প্রাণ হারিয়েছে অসংখ্য মানুষ৷ পাকিস্তানের অনেকেই তাই এই জঙ্গি গোষ্ঠীকে প্রচণ্ড ঘৃণা করে৷ কিন্তু সৌদি আরব এবং তার ওহাবি রাষ্ট্র মতবাদের প্রতিবাদে খুব কম মানুষই সামিল হচ্ছে৷
সৌদি আরবের মক্কা, যেখানে মুসলমানদের পবিত্র স্থান কাবা রয়েছে, সেটি পৃথিবীর সমগ্র মুসলমানের জন্য অন্যতম পবিত্র একটি শহর৷ এই একটি কারণেই পাকিস্তানের মানুষ সৌদি আরবকে একটি পবিত্র দেশ হিসেবে বিবেচনা করে৷ যেকারণে অনেক পাকিস্তানির কাছে সৌদি আরবের সমালোচনা করা ইসলামের সমালোচনা করার সমতুল্য৷
পাকিস্তানের সাবেক আইনমন্ত্রী ইকবাল হায়দার মনে করেন, পাকিস্তানে যেসব জিহাদী এবং সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কাজ করছে, তাদের অধিকাংশই ওহাবি ছিল৷ তিনি বলেন, ‘‘তারা তালেবান বা লস্কর-ই-তৈয়বা যাই হোক না কেন, নিঃসন্দেহে বলা যায়, তারা সৌদি-ওহাবি মতাদর্শে বিশ্বাসী৷''
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর সময়কালে আইন মন্ত্রী ছিলেন হায়দার৷ ২০০৭ সালে সন্ত্রাসী হামলায় প্রাণ হারান ভুট্টো৷ ধারণা করা হয় সেই সন্ত্রাসী হামলা পরিচালনা করেছিল তালেবান৷ হায়দার মনে করেন, গত শতাব্দির আশির দশকে সামরিক শাসক জিয়াউল হক ওহাবি গোষ্ঠীগুলোকে অর্থ এবং অস্ত্র সহায়তার বিষয়টি রাষ্ট্রীয় নীতিতে পরিণত করেন৷ তিনি সংখ্যালঘু বিভিন্ন সম্প্রদায়, যাদের মধ্যে শিয়ারাও ছিল, তাদের বিরুদ্ধে এসব ওহাবি গোষ্ঠীকে ব্যবহার করতেন৷ জেনারেল জিয়াউল হক মনে করতেন, ইরানের প্রতি শিয়াদের সহানুভূতি রয়েছে৷ হায়দার বলেন, এটা নিঃসন্দেহে বলা যায়, সৌদি আরব জেনারেল হক এর মাধ্যমে ওহাবি গোষ্ঠীগুলোকে অর্থ সহায়তা প্রদান করত৷ তাদের উদ্দেশ্য ছিল পাকিস্তানে অবস্থানরত ইরানের সমর্থকদের হত্যা করা৷
পাকিস্তানের ইতিহাসবিদ ড. মুবারক আলী অবশ্য মনে করেন, ভারত উপমহাদেশে ওহাবি প্রভাব ওহাবিজমের মতোই পুরনো৷ তাঁর মতে, ওহাবিজম শুধু পাকিস্তানের রাষ্ট্রব্যবস্থাকেই ক্ষতিগ্রস্ত করেনি, বহুত্বধর্মী ইন্দো-পাকিস্তান সংস্কৃতিও নষ্ট করেছে৷
প্রতিবেদন: সামিল সামস / এআই
সম্পাদনা: জাহিদুল হক