ধর্মের ভিত্তিতে ভোট চাওয়ার অভিযোগে মমতাকে নোটিশ
৮ এপ্রিল ২০২১গত ৩ এপ্রিলের ঘটনা। তারকেশ্বরের সভায় বিজেপি-কে রুখতে সংখ্যালঘু ভোট যাতে ভাগ না হয়, তার আবেদন করেছিলেন মমতা। তিনি বলেছিলেন, ''বিজেপি এলে মনে রাখবেন, সমূহ বিপদ। সব চেয়ে বেশি বিপদ আপনাদের।'' শুধু এটুকুই নয়, ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট বা আইএসএফ নেতা আব্বাস সিদ্দিকির নাম না করে মমতা বলেছিলেন, ''সংখ্যালঘু ভাইবোন, আপনাদের কাছে হাতজোড় করে বলছি, ওই ছেলেটা বেরিয়েছে বিজেপি-র টাকা নিয়ে, ওইটার কথা শুনে সংখ্যালঘু ভোট ভাগ করবেন না।''
এরপরেই ধর্মের ভিত্তিতে ভোট চাওয়ার অভিযোগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বুধবার নোটিশ দিয়েছে কমিশন। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অর্থাৎ, শুক্রবারের মধ্যে তাকে এর জবাব কমিশনের কাছে পাঠাতে হবে। মমতার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি জনপ্রতিনিধি আইন ভঙ্গ করেছেন। জনপ্রতিনিধি আইন অনুসারে ধর্মের ভিত্তিতে ভোট চাওয়া যায় না। রাজনীতির সঙ্গে ধর্মকে মেলানো যায় না। মমতাকে যে নোটিশ পাঠিয়েছে কমিশন, তাতে জনপ্রতিনিধি আইন ও নির্বাচনী আচরণবিধি ভাঙার অভিযোগের জবাব চাওয়া হয়েছে। নিয়মানুসারে, অভিযোগ প্রমাণিত হলে প্রার্থীপদ পর্যন্ত খারিজ করে দিতে পারে কমিশন।
গত মঙ্গলবারই কোচবিহারে এসে মোদী বলেছিলেন, ''মমতাদিদি জনসভায় যা বলেছেন, তা আমি বললে আমাকে এতদিনে নির্বাচন কমিশনের নোটিশ পেতে হতো। সংবাদপত্রে আমাকে আক্রমণ করা হতো। আপনি বলেছেন, মুসলিমরা একজোট হয়ে ভোট দাও। আমি যদি বলতাম, হিন্দুরা জোট বেঁধে বিজেপি-কে ভোট দিন, তা হলে কেমন হতো ভাবুন তো!''
প্রবীণ সাংবাদিক সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায় মনে করেন, কমিশনের এই ধরনের নোটিশ পাঠানোর এক্তিয়ার আছে এবং তা পাঠানো উচিত। তবে কমিশনের উচিত এরকম সব অভিযোগ নিয়ে একইভাবে তৎপর হওয়া। ডয়চে ভেলেকে সৌম্য বলেছেন, ''সম্প্রতি অসমে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যখন বললেন, আপনারা মোদীজির আত্মনির্ভর আসাম চান নাকি মৌলবী নির্ভর আসাম, তখন তো কিছু করা হয়নি! নন্দীগ্রামে যখন সাম্প্রদায়িক প্রচার হলো, তখনো কমিশন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। আমার মনে হয়, যখনই ধর্মের ভিত্তিতে ভোট চাওয়া হবে, তখনই কমিশনের তৎপর হওয়া উচিত।''
লেখক ও প্রবীণ সাংবাদিক দীপ্তেন্দ্র রায়চৌধুরী অবশ্য মনে করেন, এতদিন সেকুলার রাজনৈতিক দলগুলি বিজেপি-কে হিন্দুত্ববাদী বলে অভিহিত করেছে। এখন দেখা যাচ্ছে , যারা নিজেকে ধর্মনিরপেক্ষ বলছেন, তারা সরাসরি মুসলিমদের কাছে ভোট দেয়ার আবেদন করছেন। ডয়চে ভেলেকে দীপ্তেন্দ্র বলেছেন, ''এভাবে কোনো সম্প্রদায়ের ভিত্তিতে ভোট চাওয়া যায় না। মমতা সেদিন শুধু সংখ্যালঘুদের কাছে ভোট চাননি, তিনি হিন্দুদেরকেও হিন্দু হিসাবে চিহ্নিত করে তাদের কাছেও কিছু আবেদন জানিয়েছেন। ফলে দুই সম্প্রদায়ের কাছে আলাদা আলাদা কারণ দেখিয়ে তিনি ভোট চেয়েছেন।'' দীপ্তেন্দ্রর মতে, এটা ঠিক নয়। নির্বাচন কমিশনের কড়া ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
জিএইচ/এসজি(আনন্দবাজার, পিটিআই)