1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ধর্ষণের দায় স্বীকার, স্বর্ণ ব্যবসা নিয়ে তোলপাড়

১৮ মে ২০১৭

দুই তরুণীকে ধর্ষণের দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে দুই আসামি সাফাত আহমেদ ও সাদমান সাফিক৷ একই ঘটনার পর থেকে স্বর্ণ ব্যবসা নিয়ে তোলপাড় চলছে৷ ধর্ষণ মামলার ৫ আসামির একজন সাফাতের বাবা দিলদার আহমেদ স্বর্ণ ব্যবসায়ী৷

https://p.dw.com/p/2dBDU
Goldschmuck
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Adhikary

ঢাকায় দুই তরুণীকে ধর্ষণের মামলার পাঁচ আসামিকে এরইমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ সর্বশেষ বুধবার রাতে মুন্সিগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়  ইভেন্ট ব্যবসায়ী নাঈম আশরাফ ওরফে আব্দুল হালিমকে৷ এর আগে ১১ মে সিলেট থেকে গ্রেপ্তার করা হয়  সাফাত আহমেদ এবং সাদমান সাফিককে৷ ১৫ মে গ্রেপ্তার করা হয় সাদমানের গাড়ি চালক বিল্লাল এবং দেহরক্ষী রহমত আলী ওরফে আবুল কালাম আজাদকে৷ তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে এরইমধ্যে ধর্ষণের ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে বলে তদন্তকারী কর্মকর্তা জানিয়েছেন৷

গত ২৮ মার্চ রাতে বনানীর রেইনট্রি হোটেলে দুই তরুণীকে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে দাওয়াত দিয়ে দুর্বত্তরা অস্ত্রের মুখে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ করা হয়৷ এ অভিযোগে মামলা হয় ৬ মে৷ ওই দুই তরুণী ঘটনার বর্ণনা দিয়ে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন৷ পুলিশ কিছু আলামতও উদ্ধার করেছে৷

তারা ধর্ষণের দায় স্বীকার করে পুরো ঘটনার বর্ণনা দিয়েছে

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার মাসুদুর রহমান ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘বৃহস্পতিবার দুপুরে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে আসামি সাফাত ও সাদমান৷ তারা ধর্ষণের দায় স্বীকার করে পুরো ঘটনার বর্ণনা দিয়েছে৷’’

তিনি বলেন, ‘‘এই মামলাটির তদন্তে এখন আরো অগ্রগতি হলো৷ সব আসামিকে গ্রেপ্তারের পাশাপাশি দুই আসামির জবানবন্দি মামলার তদন্তে সহায়ক হবে৷ আমরা আগেই প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ধর্ষণের সত্যতা পেয়েছিলাম৷ এবার আসামিরা নিজেরাই তা স্বীকার করল৷’’ জবানবন্দি দেয়ার পর আসামি সাফাত ও সাদমানকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে৷

এদিকে শুরু থেকেই সংবাদমাধ্যমে পুত্র সাদমানকে নির্দোষ প্রমাণের জন্য তার বাবা, আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদ নানা আপত্তিকর বক্তব্য দিয়ে আসছিলেন৷ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ এরইমধ্যে আপন জুয়েলার্সের ৬টি শো-রুমে অভিযান চালিয়ে ৪৯৮ কেজি সোনা জব্দ করেছে৷ এই সোনার কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেনি আপন জুয়েলার্স৷

তাদের শো-রুমগুলোতে তালা লাগিয়ে দেয়া হয়েছে৷ শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান মাঈনুল খান সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তারা দিলদার আহমেদের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান করছেন৷ বাংলাদেশ ব্যাংকও দিলদার আহমেদের সম্পদের হিসাব চেয়েছে৷

এদিকে আপন জুয়েলার্সে অভিযানের ঘটনায় বাংলাদেশে স্বর্ণালংকার ব্যবসার গোপন তথ্য বেরিয়ে এসেছে৷ জানা গেছে, এখন এই ব্যবসা মূলত চোরাচালানের সোনার ওপর নির্ভরশীল৷ কারণ, বাংলাদেশে বৈধভাবে সোনা আমাদানি করতে হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমতি নিতে হয়, যা খুবই জটিল প্রক্রিয়া৷ চোরাচালানির বাইরে ব্যাগেজ রুলে বিদেশ থেকে ব্যক্তিগত পর্যায়ে আনা এবং স্থানীয়ভাবে পুরনো স্বর্ণালংকার ক্রয় করেই সোনার চাহিদা মেটায় বাংলাদেশের স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা৷

সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-এর সঙ্গে প্রাক বাজেট বৈঠকে এ কথা স্বীকার করেছে স্বর্ণ ব্যসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি৷ সমিতির সহ-সভাপতি এনামুল হক শামীম বৈঠকে জানান, ‘‘বর্তমান বাজারে স্বর্ণের বৃহৎ অংশের জোগান আসে কালোবাজার এবং বিদেশ থেকে৷ তিনি বলেন, মাত্র ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ ব্যবসায়ী দেশের অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে স্বর্ণ ক্রয় করে থাকেন৷ বাকিরা কালোবাজার ও ভারত থেকে স্বর্ণ সংগ্রহ করে৷ উচ্চ শুল্ক আরোপের কারণে দেশে স্বর্ণ চোরাচালান বেড়েছে৷’’

এদিকে বাংলাদেশে প্রতি মাসেই বিপুল পরিমাণ চোরাচালানের সোনা ধরা পড়লেও তার নিলাম হয় না দীর্ঘদিন ধরে৷ বাংলাদেশ ব্যাংক এই নিলামের দায়িত্বে৷ নিলাম হলে সেখান থেকেও সোনা কিনতে পারতেন স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা৷

আপন জুয়েলার্সে অভিযানের কারণে চাপের মুখে আছেন স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা৷ তাই সোনা আমদানির অনুমতি এবং নিয়মিত নিলামের দাবি জানিয়েছেন তারা৷জুয়েলার্স সমিতির সভাপতি গঙ্গা চরন মালাকার সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘এতদিন স্বর্ণের উৎস সম্পর্কে আমাদের কোনো প্রশ্ন করা হয়নি৷ এর ফলে অনেকেই কম-বেশি সুবিধা নিয়েছেন৷’’ তিনি দাবি করেন, ‘‘স্বর্ণের উৎস না জেনে এতদিন আমাদের কাছ থেকে যে ভ্যাট নেওয়া হয়েছে, যে আয়কর নেওয়া হয়েছে, তা-ও কি অবৈধ হবে? স্বর্ণ আমদানির সুযোগ চেয়ে আমরা সরকারের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি৷ ২০ বছর ধরে আমরা স্বর্ণ নীতিমালা চাচ্ছি৷ অর্থমন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রী, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে আমরা এ নিয়ে কতবার গিয়েছি, কিন্তু কোনো কিছুই হয়নি৷’’

স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে নিয়মিত নিলাম এবং বাণিজ্যিকভাবে সোনা আমদানি সহজ করতে বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দিয়েছে শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ৷ শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ চিঠিতে বাংলাদেশ ব্যাংককে জানায় , ‘‘সোনা নিষিদ্ধ কোনো পণ্য না৷ আমদানি নীতি আদেশ ২০১৫-১৮ এর অনুচ্ছে ২৬ (২২) অনুযায়ী, বাণিজ্যিকভাবে সোনা আমদানি করার সুযোগ রয়েছে৷ তবে এই আমদানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্ব অনুমতি নিতে হয়৷ বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি নিয়ে যে কেউ বাণিজ্যিকভাবে সোনা আমদানি করতে পারেন৷ কিন্তু ব্যবসায়ীরা এ ধরনের অনুমতি সহসাই পাচ্ছেন না৷ অনুমতির জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে গেলে তাদের বিভিন্ন ধরনের প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়৷’’

চিঠিতে আরো উল্লেখ করা হয়, ‘‘শুল্ক গোয়েন্দাসহ অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী চোরাকারবারীদের কাছ থেকে যে সোনা আটক করে, তা নিলামে বিক্রির একটি বৈধ প্রক্রিয়া রয়েছে৷ তবে ২০০৮ সালের পর বাংলাদেশ ব্যাংকে এ ধরনের কোনো নিলাম অনুষ্ঠিত হয়নি৷ ফলে এ সব সোনা বাংলাদেশ ব্যাংকে পড়ে আছে৷’’

এদিকে আপন জুয়েলার্সে শুল্ক গোয়েন্দাদের অভিযানের প্রেক্ষাপটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগ তুলে সারা দেশে অনির্দিষ্টকাল ধর্মঘট ডেকেছেন সোনার দোকানের মালিকরা।

ঢাকায় জুয়েলার্স সমিতির ৬শ’ সদস্য ছাড়াও আরও ১০ হাজার স্বর্ণের দোকান আছে৷ আর সারা দেশে ২০ হাজারের মতো স্বর্ণের দোকান ব্যবসা করছে৷ কম করে হলেও এক লাখ লোক সরাসরি স্বর্ণ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত৷’’

প্রিয় পাঠক, আপনি কিছু বলতে চাইলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে...