1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাল্যবিবাহ রোধ আইন পাশ না করার দাবি

২ ডিসেম্বর ২০১৬

বাংলাদেশে প্রস্তাবিত ‘বাল্যবিবাহ রোধ আইন-২০১৬' সংসদে পাশ না করার জন্য সাংসদদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ৷ তাদের কথা, এই আইন পাস হলে বাল্যবিবাহের ঝুঁকি আরো বাড়বে৷

https://p.dw.com/p/2Td5u
Bangladesch Kinderheirat
ছবি: Getty Images/A. Joyce

মন্ত্রিসভায় পাশ হলেও, এখন নিয়ম অনুযায়ী আইনটি সংসদে পাশের জন্য বিল আকারে উত্থাপন করা হবে৷ আর বিল পাশ হলে তবে এটি আইনে পরিণত হবে৷ জানা গেছে, প্রস্তাবিত এই আইনে মেয়েদের বিয়ের সর্বনিম্ন বয়স ১৮ এবং ছেলেদের ২১ বছর রাখা হয়েছে৷ তবে আইনে বিশেষ বিবেচনায় মেয়েদের ১৮ বছরের কম বয়সেও বিয়ের সুযোগ রাখা হয়েছে৷ এক্ষেত্রে অবশ্য পিতা-মাতা এবং আদালতের অনুমতি লাগবে৷

মার্কিন মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বা এইচআরডাব্লিউ মনে করে, ঐ আইন পাস হলে তা মেয়েদের আরও বেশি বাল্যবিয়ের ঝুঁকির মুখে ঠেলে দেবে৷ তাই রাজনৈতিক চাপের কাছে নতি স্বীকার না করে ঐ বিল বাতিল করা সংসদ সদস্যদের দায়িত্ব৷

এইচআরডাব্লিউ-র উইমেন রাইটস বিভাগের জ্যেষ্ঠ গবেষক হিদার বার শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলেন, ‘‘সরকারের এই উদ্যোগ বাংলাদেশকে অনেক পেছনে ঠেলে দেবে৷ নতুন আইনের খসড়ায় ২১ বছরের কম বয়সি ছেলে ও ১৮ বছরের কম বয়সি মেয়েদের অপ্রাপ্তবয়স্ক বলা হলেও, আইন শিথিলের বিশেষ প্রেক্ষাপটে ন্যূনতম কোনো বয়সের কথা বলা হয়নি৷ শুধু তাই নয়, খসড়া আইনে বাল্যবিবাহে বন্ধে কঠোর শাস্তির কথা বলা হলেও অপ্রাপ্তবয়স্করা বিয়ে করলে সর্বোচ্চ ১৫ দিনের আটকাদেশ বা পাঁচ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে৷ ঐ ১৫ দিনের আটকাদেশের মধ্য দিয়েই কিছু বাল্যবিয়ে বৈধতা পেয়ে যাবে, যা বর্তমান আইনের চেয়েও বড় দুর্বল৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘আইন শিথিল করা হলে বাল্য বিয়ে বন্ধের লড়াইয়ের পথে তা একটি বড় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে৷ এই আইন সারা দেশে অভিভাবকদের এই বার্তা দেবে যে, অন্তত কিছু ক্ষেত্রে সরকার বাল্য বিয়েকে যৌক্তিক মনে করছে৷''

নতুন এই আইনের পক্ষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, ‘‘আমাদের দেশে তো ১০-১১ বছরেও পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে ‘প্রেগনেন্ট' হয়ে যায়৷ এ সমস্যাগুলো থাকার ফলেই একটা ব্যবস্থা রেখেছে সরকার৷''

বাল্যবিবাহের শিকার শাবনাজ

সরকারের এই যুক্তিতে অবশ্য উদ্বেগ প্রকাশ করে এইচআরডাব্লিউ বলেছে, ‘‘এবার তো ধর্ষণের কারণে কোনো মেয়ে গর্ভবতী হলে, তাকেও এই আইন দেখিয়ে ধর্ষকের সঙ্গে বিয়েতে বাধ্য করা হতে পারে৷''

বাংলাদেশের নারী অধিকার, মানবাধিকার ও উন্নয়ন সংগঠনগুলো প্রস্তাবিত আইনের ঐ বিশেষ ধারা বাতিলের দাবিতে ঢাকায় মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে৷ তারা এই প্রস্তাবিত আইনের বিরোধিতা করে ধারাবাহিক কর্মসূচিও ঘোষণা করা হয়েছে৷ প্রয়োজনে তারা এই আইনের বিরুদ্ধে আদালতে যাওয়ার কথা বলছেন৷

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভানেত্রী আয়শা খানম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা আশা করেছিলাম, নতুন আইনটি পুরনো আইনের তুলনায় অনেক ভালো হবে৷ কিন্তু ঘটেছে উল্টো৷ এটি আগের আইনের চেয়ে দুর্বল এবং ত্রুটিপূর্ণ৷ এই আইনের কারণে বাল্যবিবাহ বেড়ে যাবে৷ নারী তার শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পুষ্টি এবং ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে পিঠিয়ে পড়বে৷ আমরা এরইমধ্যে আমাদের কথা সংবাদ সম্মেলন করে সরকারকে জানিয়েছি৷ আমরা নারীবান্ধব এবং নারীর ক্ষমতায়নের জন্য যিনি অনেক কিছু করেছেন, সেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আবেদন করছি আইনটি পাশ না করতে৷ আমাদের আশা, তিনি আমাদের আবেদন শুনবেন৷''

আয়শা খানম

তিনি আরো বলেন, ‘‘এই আইন হলে তা হবে বুমেরাং-এর মতো৷ তাই আমি মনে করি, এই আইন পাশ করা একটি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হবে৷''

অন্যদিকে, বিষয়টি নিয়ে কয়েকজন সরকার দলীয় সংসদ সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা কথা বলতে রাজি হননি৷

ইউনিসেফ-এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে বাল্যবিবাহের হার সবচেয়ে বেশি৷ ১৮ বছর বয়স হওয়া আগেই বাংলাদেশের ৬৬ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয়ে যায়৷

তবে ওয়াশিংটন ভিত্তিক ‘থিংক ট্যাংক' ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিচার্স ইন্সটিটিউট (আইএফপিআরআই)-এর এক গবেষণায় গত সপ্তাহে বলা হয়, বাংলাদেশে গত দুই দশকে বাল্যবিবাহের হার শতকরা ৬২.৩ ভাগ থেকে কমে ৪৩ ভাগ হয়েছে৷

বন্ধুরা, এ বিষয়ে আপনার কী বলার আছে? লিখুন নীচে, মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান